muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

পাঁচ বিশ্ব রেকর্ড নিয়ে বিস্ময় আমাদের পদ্মা সেতু

পদ্মা বহুমুখি সেতু শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্যই এক বিস্ময়। প্রবল স্রোতের এই পদ্মা নদীতে সেতুটি তৈরি করতে আধুনিক মানের সব উপকরণ ও সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। পাঁচটি বিশ্ব রেকর্ডও গড়েছে এই সেতু। খরস্রোতা পদ্মায় পানিপ্রবাহ বিবেচনায় বিশ্বে আমাজন নদীর পরেই এর অবস্থান।

প্রথম বিশ্ব রেকর্ডটি হলো, মাটির ১২০-১২২ মিটার গভীরে গিয়ে পাইল বসানো, যা প্রায় ৪০ তলা ভবনের সমতুল্য। পৃথিবীর অন্য কোথাও কোনো সেতুতে পাইল এত গভীরে প্রবেশ করাতে হয়নি। এসব পাইল তিন মিটার ব্যাসার্ধের। বিশ্বে এখন পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীরে পাইলিং প্রয়োজন হয়নি।

দ্বিতীয় বিশ্ব রেকর্ডটি হলো, ভূমিকম্পের বিয়ারিং সংক্রান্ত। এই সেতুতে ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিংয়ের’ সক্ষমতা হচ্ছে ১০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কোনো সেতুতে এমন সক্ষমতার বিয়ারিং লাগানো হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

এর পরের বিশ্বরেকর্ড হলো, পিলার এবং স্প্যানের মাঝে যে বিয়ারিং থাকে সেটি। এখানে ১০ হাজার ৫০০ টন ওজনের একেকটি বিয়ারিং ব্যবহৃত হয়েছে। পৃথিবীতে এর আগে এমন বড় বিয়ারিং কোনো সেতুতে ব্যবহার করা হয়নি।

অন্য রেকর্ডটি হলো নদী শাসন সংক্রান্ত। সেতুটির দুই প্রান্তে ১৪ কিলোমিটার (১.৬ কিলোমিটার মাওয়া প্রান্তে ও ১২.৪ কিলোমিটার জাজিরা প্রান্তে) এলাকা নদী শাসনের আওতায় আনা হয়েছে। এই নদী শাসনে খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি।

পরের রেকর্ডটি ব্রিজে ব্যবহৃত ক্রেন। পিলারের ওপর স্প্যান বসাতে যে ক্রেনটি ব্যবহৃত হয়েছে সেটি আনা হয়েছে চীন থেকে। প্রতি মাসে এর ভাড়া বাবদ গুনতে হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। সাড়ে তিন বছরে মোট খরচ হয়েছে ১২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বিশ্বে প্রথম এই ব্রিজটি বানাতেই এত দীর্ঘদিন ক্রেনটি ভাড়ায় থেকেছে। এই ক্রেনটির বাজারদর ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

আরেকটি রেকর্ড হলো, পদ্মা সেতুই বিশ্বে প্রথম যেটি কংক্রিট আর স্টিল দিয়ে নির্মিত হয়েছে। বিশ্বে আর কোনো সেতু নির্মাণে কংক্রিট এবং স্টিল একসঙ্গে ব্যবহার করা হয়নি। অর্থাৎ সেতুগুলো হয় কংক্রিটে, নাহয় স্টিলের নির্মিত হয়।

এছাড়াও, পুরো সেতুতে পিলারের সংখ্যা ৪২টি। প্রতিটি পিলারে রাখা হয়েছে ছয়টি পাইল। একটি থেকে আরেকটি পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। এই দূরত্বের লম্বা ইস্পাতের কাঠামো বা স্প্যান জোড়া দিয়েই সেতু নির্মিত হয়েছে। ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানো এ সেতুটির মূল দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম এই পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণবঙ্গের মানুষের ভাগ্যে উন্মোচিত হলো নবদিগন্তের দুয়ার।

সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

মিজবাহ উদ্দিন আহমদ (নিঝুম)
Facebook Profile (Click Here)
[email protected]

 

Tags: