muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

পূর্ণিমার প্রভাবে পানির নিচে ২৫ গ্রাম

পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট অস্বাভাবিক জোয়ারে ভোলার চরফ্যাশনের মেঘনা নদী উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। মেঘনা উপকূলীয় চরাঞ্চলের ফসলের মাঠ, ঘরবাড়ি ও মাছের ঘের ডুবে গেছে। এতে উপজেলার অন্তত ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

ফলে এখানকার জনপদে ঈদের আমেজ অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। আনন্দের বদলে ভোগান্তিতে চরাঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। মানুষের সাধ্য নেই এবারের ঈদে পশু কুরবানি দেওয়ার। জলাবদ্ধ মানুষের মতে, যেখানে জীবনই বাঁচে না, সেখানে কীসের ঈদ। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে ভিজিএফসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ত্রাণ দিয়ে পানিবন্দি মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির কথা জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় পূর্ণিমা শুরু হয়। পূর্ণিমার কারণে বাড়তে শুরু করে প্রতিটি নদ-নদীর পানির উচ্চতা। বেড়েছে বাতাসের চাপও। জোয়ারে প্লাবিত হওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গ্রামঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা।

এদিকে পূর্ণিমার প্রভাবে কোমরপানিতে ডুবে গিয়েছে ঢালচর, চরপাতিলা, চরনিজাম, চরমাদ্রাজ, জাহানপুর, মুজিবনগর, নজরুল নগর, চরমানিকা ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা। দিনে-রাতে দুবার জোয়ারের পানি প্লাবিত হওয়ায় বেড়ির বাইরে থাকা পরিবারগুলো রান্নাবান্না করতে না পেরে ঈদে তারা অর্ধহারে-অনাহার মানবেতর জীবনযাপন করছে।

তবে দুদিন ধরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষদের সহযোগিতা করা হয়নি বলে অভিযোগ জোয়ারে প্লাবিত নিম্নাঞ্চলসহ বেড়িবাঁধের বাইরের এলাকার পরিবারগুলোর। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢালচরে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে ইতিমধ্যে। জোয়ারের ঢেউয়ের ঝাপটায় চরমানিকা ইউনিয়নের নবীনগর সড়কসহ বেশ কিছু সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে, সেই সঙ্গে গাছপালা এবং দোকারঘর ভেঙে গেছে।

চরপাতিলার গ্রামের মোনোমান হোসেন বলেন, দু-দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় দিনে-রাতে দুবার জোয়ারের পানি ওঠে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চৌকিতে বসে রাত পার করতে হয়।

চরমানিকা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের বাইরের জাকির হোসেন, সিদ্দিক, ও মোকবির বলেন, দুদিন ধরে জোয়ারের পানিতে বসতঘর ডুবে রয়েছে। শিশুসহ গবাদিপশু নিয়ে খুব বিপদে রয়েছি। গরু, ছাগল কোনো মতে ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখেছি। আবার অনেকের হাঁস, মুরগি, পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। দিনের তুলনায় রাতে জোয়ার বেড়ে যায়। এতে পরিবার নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। জোয়ারের পানি বেড়ে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। পানির কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। আমাদের এখানে বেড়িবাঁধ না থাকায় নদীর পানি খুব দ্রুত প্রবেশ করে এসব এলাকায়, বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তারা।

চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ড (ডিভিশন-২) নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, বেড়িবাঁধের বাইরে পানি প্রবেশ করলে আমাদের কোনো ধরনের ভূমিকা নাই, তবে বেড়িবাঁধের ভিতরে পানি প্রবেশ করলে দেখভাল করা হবে বলে জানান তিনি।

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান রাহুল বলেন, মূলত পূর্ণিমার কারণেই নদ-নদী পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চরাঞ্চলসহ নদীসংলগ্ন এলাকাগুলোর খোঁজখবর নিয়ে তালিকা করা হবে। এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।

Tags: