
গভীর রাতে র্যাবের অভিযান, বৃদ্ধের মৃত্যু নিয়ে ‘রহস্য’!
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে হত্যা মামলার আসামি ধরতে অভিযান চালিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে সাদা পোশাকে র্যাব সদস্যদের ওই অভিযানে স্থানীয়দের সঙ্গে বিরোধ বাধে। এ সময় সেখানে আবুল কাশেম (৬৭) নামের এক বৃদ্ধ গুলিতে নিহত হন।
ওই বৃদ্ধের মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘রহস্য’। বৃদ্ধের স্ত্রীর দাবি, র্যাব পরিচয় দেওয়া সাদা পোশাকধারীদের গুলিতে আবুল কাশেমের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু র্যাব অভিযানের বিষয়টি স্বীকার করলেও বৃদ্ধের মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানায়নি।
গতকাল গভীর রাতে সোনারগাঁ উপজেলার বরগাঁও চেয়ারম্যান পাড়া এলাকায় ওই ঘটনায় হুমায়ুন কবির (৪৩) নামের একজন আহত হয়েছেন।
আবুল কাশেমের পরিবারের সদস্যদের দাবি, গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে আবুল কাশেমসহ পরিবারের লোকজন ঘরের বাইরে বের হন। তখন বাড়ির পাশের রাস্তায় কয়েকজনের চিৎকার শুনতে পান। রাস্তায় গিয়ে তারা দেখতে পান তাদের পাশের বাড়ির সেলিম নামে এক যুবককে কয়েকজন লোক টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তখন সেলিমের বাড়ির লোকজন কান্নাকাটি করছিল।
ওই সময় আবুল কাশেম তাদের পরিচয় জানতে চাইলে সাদা পোশাকধারীরা লাঠি দিয়ে তাকে আঘাত করেন। এতে তিনি মাটিতে পড়ে যান। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে আবুল কাশেম সাদা পোশাকধারীদের গালি দেন। এরপর তারা আবুল কাশেমের পেটে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
এদিকে, মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত’ পড়েছে বলে ঘোষণার পর স্থানীয়রা এগিয়ে এলে সাদা পোশাকধারী লোকজন এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। তখন তাদের গুলিতে হুমায়ুন কবির নামে একজনের পায়ে গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতের স্ত্রী রমিজা বেগমের বলেন, ‘র্যাব পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন লোক মধ্যরাতে আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে। সেলিমকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাওয়ায় উত্তেজিত হয়ে র্যাব পরিচয়দানকারীরা আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন সিজান বলেন, ‘রাত ৩টার দিকে গুলিবিদ্ধ এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়।’
এ বিষয়ে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, ‘সোনারগাঁয়ে এক নারীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার মূল সন্দেহভাজন আসামি সেলিমকে আটক করতে ওই এলাকায় অভিযান চালানো হয়। আসামিকে আটক করে নিয়ে আসার সময় র্যাবের ওপর হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তখন তারা দেশিয় অস্ত্র নিয়ে র্যাবের ওপর হামলা চালায়। এতে দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আসামিকে আটক করে আমরা নিয়ে আসি। সকালে জানতে পারি একজন মারা গেছেন। তবে তিনি কীভাবে তিনি মারা গেছে সেটি নিশ্চিত না।’
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব আলম বলেন, ‘গতকাল সকালে একই ইউনিয়নের গজারিয়াপাড়া গ্রামের একটি মাঠে রোজিনা আক্তার (৩৪) নামে একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রধান সন্দেহজনক আসামি মো. সেলিমকে আটক করে র্যাব সদস্যরা। আসামি নিয়ে র্যাব সদস্যরা আসার পথে গ্রামের মাইক দিয়ে “ডাকাত” পড়েছে বলে গ্রামবাসীরা র্যাবের ওপর হামলা চালায়। পরে এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। আবুল কাশেমের মরদেহ উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।’