muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

কৃষি

১০ মিনিটের গরম বাতাসে সর্বনাশ, সব ধানে চিটা

হঠাৎ দমকা গরম বাতাস বইতে শুরু করে রবিবার সন্ধ্যায়। থেমে থেমে চলে কয়েক ঘণ্টা। এতে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দেয় আতঙ্ক। মাঝরাতে বাতাসের তাপমাত্রা স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি ফেরে। তবে সোমবার সকালে উঠেই দেখা যায় সর্বনাশের চিহ্ন। সূর্যের প্রখরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মরতে থাকে মাঠের পর মাঠ উঠতি বোরো ধানের শীষ।

নেত্রকোনা জেলার হাওরাঞ্চল হিসেবে খ্যাত খালিয়াজুরী, মদন ও মোহনগঞ্জ উপজেলা এবং সদরের কিছু অংশের কৃষকদের এই দুর্ভাগ্য ছুঁয়েছে গোপালগঞ্জের কম-বেশি পাঁচ উপজেলার কৃষকদেরও। একই দিন দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় আধাঘণ্টা স্থায়ী গরম বাতাসের জেরে এই জেলার হাজারো কৃষক দুই চোখে অন্ধকার দেখছেন। তাঁদের বিলাপ, দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠেছে বাতাস। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলতে পারেননি কৃষি কর্মকর্তারা। এ ছাড়া রবিবার বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে গাইবান্ধা, নাটোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষকরাও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। এই তিন জেলায় বোরো ধান, গুটি আম, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব এলাকার ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও গাছাপালাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশজুড়েই মাঠে থাকা বোরো ধানে শীষ বেরিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় পাকতেও শুরু করেছে।

মদন উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের রিকন ও তৈমুর তালুকদার জানান, রবিবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শুধু গরম বাতাস ছিল। বাতাসটা অসহ্য মনে হচ্ছিল। সকালে রোদ ওঠার পর হাওরে গিয়ে দেখি থোড় আসা ধান ঝলসে শুকিয়ে যাচ্ছে। তাঁদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। তাঁরা সংসার চালাবেন কিভাবে? বাগজান গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘৩০ কাঠা জমিতে ধান করেছিলাম, এখন যে ক্ষতি হয়েছে তাতে এক ছটাক ধানও তুলতে পারব না। কী হবে আমার! দুই চোখে অন্ধকার দেখছি। কিভাবে চলব সারা বছর?’ একই হাহাকার ঝরে পড়ে এলাকার আলী আহম্মদ, শামীম মিয়া, কুটুরীকোনা গ্রামের রোজ আলী এবং পৌর সদরের কৃষক সবুজ মিয়ার কণ্ঠে।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে খালিয়াজুরী উপজেলায় ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর, মদনে ১৭ হাজার ৩৪০ হেক্টর এবং মোহনগঞ্জ উপজেলায় ১৭ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের ফলন অনেক ভালো। কিন্তু রবিবারের গরম দমকা হাওয়ায় তা ভেস্তে গেল।

মোহনগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদ ইকবাল জানান, তিনি হাওরাঞ্চল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, এমন ধ্বংসযজ্ঞ তিনি আর দেখেননি।

কালবৈশাখীর কয়েক মিনিটের গরম হওয়ায় গোপালগঞ্জে চলতি বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাঁচ উপজেলার হাজার হাজার কৃষক মাঠে গিয়ে গরম হাওয়ায় পুড়ে সাদা হয়ে যাওয়া ধান দেখে প্রথমে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। পরে ভবিষ্যৎ চিন্তায় মুষড়ে পড়েন। কৃষি বিভাগ খবর পেয়ে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে মাঠে নেমেছে।

গোপালগঞ্জ কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জে এ বছর ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। হঠাৎ করে গত রবিবার রাতে জেলার টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, কাশিয়ানী এবং সদর উপজেলার কিছু এলাকার ওপর দিয়ে গরম হাওয়া প্রবাহিত হয়। যেসব জমিতে ধানের ফ্লাওয়ারিং হচ্ছে সেসব জমির ধান গরম বাতাসে পুড়ে গিয়ে সাদা বর্ণ ধারণ করেছে। এতে উৎপাদনের প্রায় ২০ শতাংশ ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এমন গরম বাতাস বয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (আজ) ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ টিম আসবে, তারা বলতে পারবে কেন এমন হলো।

Tags: