muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

খেলার খবর

পঞ্চমবারের মতো আবারও শিরোপা অস্ট্রেলিয়ার

worldcup champ aus

একেবারে নিরপেক্ষ ক্রিকেটপ্রেমীরা আজ অস্ট্রেলিয়ার ওপর ক্ষিপ্ত হতেই পারেন। যে বিশ্বকাপের ফাইনাল তাদের কাছে ছিল বহু কাঙ্ক্ষিত, বহু প্রার্থিত, যে ফাইনালকে ঘিরে তাদের প্রত্যাশা ছিল রুদ্ধশ্বাস এক লড়াইয়ের, সে ফাইনালকেই কিনা অস্ট্রেলিয়া করে দিল ম্যাড়মেড়ে-একপেশে এক ব্যাপারে! যে নিউজিল্যান্ডকে এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে নিখুঁত দল হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা, যে নিউজিল্যান্ড দল পুরো বিশ্বকাপকে উদ্ভাসিত করেছে নিজেদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে, সেই নিউজিল্যান্ডই কিনা অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করল অস্ট্রেলিয়ার কাছে!
বিশ্বকাপের ইতিহাস আজ মেলবোর্নে দেখল আর একটি একপেশে ফাইনাল। যে ফাইনালে নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়া দল অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে পঞ্চম বিশ্বকাপ নিজেদের করে নেওয়ার ম্যাচটা তাঁরা জিতেছে ১০১ বল অব্যবহৃত রেখেই।

প্রথমে ব্যাট করে নিউজিল্যান্ডের ১৮৩ রানের সংগ্রহকে অস্ট্রেলিয়া ছাড়িয়ে গেছে একেবারে বলে-কয়েই। প্রথম ওভারে অ্যারন ফিঞ্চকে তুলে নিয়ে যে লড়াইয়ের ইঙ্গিত ট্রেন্ট বোল্ট দিয়েছিলেন, সেটাকে অবান্তর প্রমাণ করেছেন অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক ও স্টিভেন স্মিথ। ৭৪ রানে শেষ হয়েছে ক্লার্কের শেষ ওয়ানডে ইনিংসটি। স্মিথ খেলেছেন অপরাজিত ৫৬ রানের ইনিংস। ডেভিড ওয়ার্নারও কম যাননি। ৪৫ রান করে অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম শিরোপা জয়ে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।

মাইকেল ক্লার্ক খেলে ফেলেছেন তাঁর শেষ ওয়ানডেটি। ২০১১ সালে রিকি পন্টিংয়ের কাছ থেকে যে লক্ষ্য নিয়ে অস্ট্রেলিয়া দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, সেটা অর্জন করে, অনন্য বীরের বেশেই তাঁর বিদায়। চার বছর আগের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়া দলকে আবারও বিশ্ব সেরার আসনে বসিয়ে বিদায় নেওয়ার ক্ষণটি অবিস্মরণীয়ই হয়ে রইবে তাঁর জীবনে।

ফাইনালটা শেষ হয়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই। দলটির অভাবনীয় ব্যাটিং ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে। ব্যর্থতার শুরুটা করেছিলেন অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ইনিংসের শুরুর ওভারেই, পঞ্চম বলে! মিচেল স্টার্কের একটি দুর্দান্ত বলে স্টাম্প ছত্রখান তাঁর। বিপর্যয়ের শুরু সেখান থেকেই। ৩৯ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসা নিউজিল্যান্ড দলকে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছিল চতুর্থ উইকেট জুটি। গ্রান্ট এলিয়ট ও রস টেলর যুগল স্কোরবোর্ডে ১১১ রান যোগ করে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু জেমস ফকনারের অসাধারণ একটি স্পেল নিউজিল্যান্ডকে দিশেহারা করে দেয় মুহূর্তেই। ফকনার পর পর ফেরান ৪০ রানে ব্যাট করা টেলরকে। এরপর ‘শূন্য’ রানে ফেরান কোরি অ্যান্ডারসনকে। মিচেল স্টার্ক লুক রনকিকে ওই ‘শূন্য’তেই ফিরিয়ে দিলে অস্ট্রেলিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সব অস্ত্রই হারিয়ে ফেলে কিউইরা। টেইল এন্ডারদের কাছে প্রত্যাশা হয়তো ছিল, কিন্তু অস্ট্রেলীয় পেসারদের দুরন্ত বোলিংয়ের সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া তাদের আর কী-ইবা করার ছিল!

আজ নিউজিল্যান্ডকে শেষ করে দিয়েছেন দুই অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার-জেমস ফকনার ও মিচেল জনসন। এঁরা দুজনেই তুলে নেন ৩টি করে উইকেট। মিচেল স্টার্কের ঝুলিতে গেছে ২ উইকেট। একটি উইকেট গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের। মোক্ষম সময়ে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ নিজেদের করে নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ ওই ফকনারই।

১৮৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা অস্ট্রেলিয়াকে সমস্যায় ফেলবে-এমনটা বোধ হয় খুব বেশি কেউ ভাবেননি। খুব আশাবাদীরা নড়েচড়ে বসেছিলেন অ্যারন ফিঞ্চের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ওয়ার্নার আর স্মিথ ৬১ রান যোগ করে যে ভিতটি রচনা করে দিয়েছিলেন সেটার পূর্ণতা দেন অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। তিনিও স্মিথকে সঙ্গে নিয়ে ১১২ রানের জুটি গড়ে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে।

১৯৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়া তাঁদের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপাটি জিতেছিল বেশ ‘কষ্ট’ করে। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর কলকাতার ইডেন উদ্যানে ইংল্যান্ডকে তারা হারিয়েছিল ৭ রানে। মাঝখানে দুই বিশ্বকাপের বন্ধ্যাত্ব। ১৯৯৯ সাল থেকে মাঝের ২০১১ বাদ দিয়ে চারটি বিশ্বকাপ শিরোপার প্রত্যেকটিই অস্ট্রেলিয়া জিতেছে হেসে-খেলে।

Tags: