
হাওরের রূপ-বৈচিত্র ও সম্ভাবনা
অজয় রায়, ইটনা (কিশোরগঞ্জ) থেকে।।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি আমাদের এ ছোট্ট দেশ। ছয়টি ঋতুর এ দেশে রয়েছে দেখা-অদেখা অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। যার সবগুলা হয়তো সামনে আসে না বা আসলেও আমরা খেয়াল করি না এই সৌন্দর্য। কিছু কিছু সৌন্দর্য থেকে যায় লোকচক্ষুর অন্তরালেই। এরকমই সৌন্দর্যের মধ্যে একটি হলো বাংলার হাওরাঞ্চলের রূপ বৈচিত্র।
দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা, যেখান থেকে একই জায়গায় দাড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই উপভোগ করা যায়। তেমনি হাওরাঞ্চলের পানিবন্দী গ্রামগুলা থেকেও উপভোগ করা যায় এই সৌন্দর্য।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের বেলাভূমিতে আছরে পরে সমুদ্রের ঢেউ, আর তেমনি আমাদের হাওরের গ্রামগুলিতে আছড়ে পরে বিশাল জলরাশি- এ যেনো মিনি কক্সবাজার।
শীতের সময় মাঠজুড়ে থাকে সোনালী ফসল আর বর্ষায় যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। হাওরের এই পানির নিচ থেকেই উঠে আসে দেশের সিংহভাগ চাহিদা মেটানো মাছ, আবার এখানকার মাছ রপ্তানি করে অর্জিত হয় মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা- যা এক কথায় বলা যায় পানির নিচের তরল সোনা।
পূব আকাশে সকালে এই পানির মধ্য থেকেই ভেসে উঠে সূর্য। দেখলে মনে হয় যেনো পানির ভেতর লুকিয়ে থাকা সূর্য পৃথিবীতে তার আলো বিলানোর জন্য হাওরের বুক চিরে উঠে আসছে। সারাদিনের ক্লান্ত শরীররে পশ্চিম আকাশে বিকালের রক্তিম আভায় আবার ডুব দেয় সেই পানিতেই। হাওরের এই অপরূপ দৃশ্য নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা সত্যিই কঠিন।
বর্ষাকালে বিশাল জলরাসি হাওরের মাঝে ভেসে থাকা এক একটা গ্রাম যেনো এক একটা দ্বীপ। বোধ করি এ যেনো হাওর শব্দের উৎপত্তির জানান দেয়- ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে সাগর শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে সায়র শব্দটি, এই সায়র থেকে এসেছে হায়র, আর এই হায়র শব্দের অপভ্রংশ হলো হাওর।
বর্ষাকালে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে আসতে ছোট নৌকাই একমাত্র বাহন। সবচেয়ে কম খরচে পন্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যমও এই নদীপথ। হাওরের বুক চিড়ে প্রবাহিত হওয়া এই নদীপথের মাধ্যমেই ঢাকা ও সুনামগঞ্জের মধ্যে গড়ে উঠেছে মূল্যবান পাথর, প্রাকৃতিক কয়লা, শিল্পের কাঁচামাল ও পন্য আনা নেওয়ার সোনালী নদীপথ। কিন্তু এই সোনালী পথের কোন প্রত্যক্ষ সুফল এই হাওরবাসী পায়না।
নদীর নাব্যতা ও গভীরতা কমে যাওয়ায় এই সোনালী পথ এখন গলার কাঁটা, হাওরের সৌন্দর্য ও এই সোনালী নদীপথ রক্ষায় প্রয়োজন পরিকল্পিত নদীখনন।
বাংলার হাওরের এসব গ্রামে নেই শহরের কোলাহল, গাড়ির বিশাক্ত কালো ধুয়া আর ঘড়ির কাটায় মাপা ব্যাস্ততা। আছে সকালের মিষ্টি বাতাস, বিকালের ঝলমলে রোদ, ঢেউ এর কল কল ধ্বনি, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর জ্যোৎসনা রাতে জলের উপর ঝিলমিল করতে থাকা রূপালী চাঁদের আলো। অসাধারন এসব হাওরের মানুষগুলাও অসাধারন। সহজ-সরল, নির্ভেজাল, শত দুঃখেও মুখের মধ্যে চিরচেনা একটা সরল হাসি- যেনো হাওরের ট্রেডমার্ক।
প্রকৃতিকে নিয়ে খেলতে পারে সেই সাধ্য কার? প্রকৃতি যে তার নিজের খেলা নিজেই সাজিয়ে রাখে। কখনো হাওরের এই প্রকৃতির রূপ লাবন্যে হয়ে উঠে অপূর্ব আবার কখনো ভয়ঙ্কর ভিলেন। অতিবৃষ্ট, শীলাবৃষ্টি, খড়া, অকাল বন্যা ও প্রকৃতিক দূর্যোগ যেনো হাওরের নিত্যসঙ্গী। প্রায়শই প্রাকৃতিক এই দূর্যোগের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হয় হাওরের এক ফসলি জমিগুলা।
বর্ষাকালে চারিদিক পানিতে ডুবে গেলে কর্মহীন হয়ে পরে পানিবন্দী এসব মানুষ।
এই সময় টুকটাক মাছ ধরা আর ঢেউ এর সাথে যুদ্ধ করে বসত-বাড়ি টিকিয়ে রাখা ছারা কোন কাজ থাকেনা হাওরবাসীর।
বাঁশ, চাইল্লা (লতা জাতীয় উদ্ভিদ) ইত্যাদি দিয়ে বাড়ির আঙ্গিনায় ভাঙ্গন ঠেকাতে সংগ্রাম করতে হয় প্রতিবছরই। বাকি সময়টা গল্পগোজব করেই কাটে তাদের।
সরকারের একটু সুদৃষ্টি দিলেই বাংলার হাওরগুলা হয়ে উঠতে পারে পর্যটনের এক অপার সম্ভাবনার জায়গা। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা এবং সরকারী পূষ্টপোষকতায় উদ্যোগ গ্রহন করলে পর্যটন খাতে যোগ হতে পারে নতুন এক সম্ভাবনা। সেইসাথে বর্ষায় বিকল্প কর্মসংস্থানের সুয়োগ করে দিতে পারলে হাওরের কর্মহীন মানুষের জীবনধারায় আসতে পারে পরিবর্তন, এবং ছয় মাস কর্মহীন থাকা হাওরের এই মানুষগুলাকে কাজে লাগিয়ে বৃদ্ধি করা যাবে জাতীয় রাজস্ব আয়।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/১৩-০৬-২০১৭ইং/ অর্থ
আরও পড়ুন
Comments are closed.
holy crap, chlaymdia is one of the worst disease that you could ever have. it is very very nasty.
Darnit, why do you might have to make this kind of excellent points. many thanks.
I just want to mention I am just beginner to weblog and actually enjoyed your web-site. Probably I’m want to bookmark your site . You actually come with wonderful articles. Bless you for sharing your website page.