muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

কিশোরগঞ্জের খবর

ভ্রমণ সম্ভাবনাময় কিশোরগঞ্জ

বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের ইতিহাস ঐতিহ্যের সুপ্রাচীন একটি জেলা কিশোরগঞ্জ। হাওর-বাওর ও সমতলভূমির বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতির একটি বিস্তীর্ণ জনপদ এই কিশোরগঞ্জ জেলা। অন্যান্য জেলার তুলনায় কিশোরগঞ্জ জেলায় রয়েছে প্রচুর দর্শনীয় স্থান। কিন্তু প্রচার ও প্রসারের অভাবে রয়ে গেছে তা দেশ-বিদেশের অধিকাংশ ভ্রমণ পিপাসুদের অজানা।

কিশোরগঞ্জ জেলার ভৌগোলিক আয়তন প্রায় ২,৬৮৮ বর্গ কিলোমিটার। ২,৬৮৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জেলায় রয়েছে ১৩টি উপজেলা, ১৯টি থানা, ৮টি পৌরসভা ও ১০৮টি ইউনিয়ন পরিষদ। এই জেলার উত্তরে নেত্রকোণা ও ময়মনসিংহ জেলা। দক্ষিণে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা। পূর্বে সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলা। পশ্চিমে ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলা।

কিশোরগঞ্জের ইতিহাস প্রাচীন ইতিহাস ও লোক মুখে কথিত আছে ইংরেজী বর্ষের ষষ্ঠ শতকে বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার বত্রিশ এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণদাস প্রামাণিকের ছেলে নন্দকিশোর পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর উৎস নদী নরসুন্দার তীরে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন। এ গঞ্জ সবার কাছে নন্দকিশোরের গঞ্জ নামে পরিচিত হয়ে উঠে। কালের পর্যায়ক্রমে এই গঞ্জের নাম হয়ে উঠে কিশোরগঞ্জ।

১৮৬০ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার একটি মহকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে কিশোরগঞ্জ। ১৯২১ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং পরবর্তীতে উপজেলায় রুপান্তরিত হয়। তারপর ১৮৬৯ সালে কিশোরগঞ্জ পৌরসভা গঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর থেকেই প্রমাণিত হয় কিশোরগঞ্জ জেলা শহর সুপ্রাচীন।

ঐতিহ্য সমৃদ্ধ কিশোরগঞ্জে ঘিরে আছে অসংখ্য ইতিহাস ঐতিহ্য। রয়েছে প্রাচীন এবং আধুনিক বিখ্যাত স্থাপত্বের নানা নিদর্শন।

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান: কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। যার অবস্থান কিশোরগঞ্জ পৌর শহরের শোলাকিয়া এলাকায়। যার দূরত্ব কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশন কিংবা বত্রিশ বাস স্টেশন, অথবা গাইটাল বাস স্টেশন থেকে এক কিলোমিটারের ভিতরে।

জঙ্গলবাড়ি দুর্গ: কিশোরগঞ্জে রয়েছে ঈশা খাঁর স্মৃতিবাহী একটি স্থাপনা। যার নাম জঙ্গলবাড়ি দুর্গ। এটি ছিল ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী। যা এখন বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। জঙ্গলবাড়ি দুর্গের অবস্থান কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ি গ্রামে নরসুন্দা নদীর তীরে। এটি জঙ্গলবাড়ি নামেই সবার কাছে পরিচিত। যার দূরত্ব কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে মাত্র ৫.৭ কিলোমিটার।

চন্দ্রাবতী মন্দির: বাংলা সাহিত্যের আদি মহিলা কবি খ্যাত চন্দ্রাবতীর স্মৃতিবাহী একটি স্থাপনা হচ্ছে চন্দ্রাবতী মন্দির। এটিও বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। চন্দ্রাবতী মন্দিরটির অবস্থান কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে।

এগারসিন্দুর দুর্গ: কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় রয়েছে এগারসিন্দুর দুর্গ। তবে এগারসিন্দুর দুর্গ কে নির্মাণ করেন তা নিয়ে রয়েছে অনেক মতভেদ। কেহ বলেন রাজা আজাহাবা। আবার কারো মতে বেবুদ রাজা এবং কারো মতে সিলেটের রাজা গৌর গোবিন্দ। বাংলার বার ভূঁইয়ার প্রধান ঈশা খাঁ কোচ হাজং রাজাদের পরাজিত করে এগারসিন্দুর দুর্গটি দখল করেন। এ দুর্গ থেকেই পরবর্তীতে মোঘল সেনাপতি রাজা দুর্জন সিংহ ও পরে রাজা মানসিংহকে পরাজিত করতে সমর্থ হন। তখন থেকেই এগারসিন্দুর দুর্গটি ঈশা খাঁর দুর্গ নামে খ্যাত। এই এগারসিন্দুর দুর্গটি ঈশা খাঁ দুর্গ নামেই সবার কাছে বর্তমানে পরিচিত। এর অবস্থান কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার মঠখোলা-মির্জাপুর-পাকুন্দিয়া সড়কের পাশে। যার দুরত্ব পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটারের ভিতরে।

দিল্লির আখড়া: কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলের অন্যতম সেরা আকর্ষণ দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনা দিলির আখড়া এই আখড়াকে ঘিরে রয়েছে বিশাল ইতিহাস। এই দিল্লির আখড়াটি নির্মাণ করেন দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীর। সেই থেকে এই আখড়াটি দিল্লির আখড়া নামে পরিচিতি। এর অবস্থান কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত মিঠামইন উপজেলার শেষ প্রান্তে। এখানে যেতে হয় স্থলপথে কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে চামড়াঘাট পর্যন্ত। তারপর নৌপথে চামড়াঘাট থেকে মিঠামইন উপজেলার শেষ প্রান্তে দিল্লির আখড়ায়।

পাগলা মসজিদ: প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো আধুনিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদটি নানা ধরণের ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে খ্যাত।জনশ্রুতি আছে যে, পাগলবেশী এক আধ্যাতিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে স্থিতু হন এবং তাঁকে ঘিরে আশেপাশে অনেক ভক্তকূল সমবেত হন। উক্ত পাগলের মৃত্যুর পর তাঁর সমাধির পাশে পরবতীতে এই মসজিদটি গড়ে উঠে। তাই কালক্রমে এটি পাগলা মসজিদ নামে পরিচিত হয়ে উঠে। মসজিদটি শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীর কাছেই নয়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল ও এর আশপাশের সকল র্ধমাবলম্বীর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ধমীয় স্থান হিসেবে পরিগণিত। অনেকের বদ্ধমূল বিশ্বাস যে, কেহ সহি নিয়তে এ মসজিদে দান খয়রাত করলে তার ইচ্ছা পূর্ণ হয়। মসজিদটির অবস্থান কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম প্রান্তের হারুয়া নামক এলাকায়। যার দূরত্ব কিশোরগঞ্জ রেল স্টেশন কিংবা বত্রিশ বাস স্টেশন, অথবা গাইটাল বাস স্টেশন থেকে এক কিলোমিটারের ভিতরে।

সুকুমার রায় ও সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক বাড়ি: বিখ্যাত ছড়াকার ও শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের পৈত্রিক বাড়ি এবং তার সন্তান অস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের পৈতিক বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলাতেই। যেটা সত্যজিৎ রায়ের পৈত্রিক বাড়ি নামে পরিচিত। বাড়ির ভিতরে রয়েছে কারুকার্য খচিত প্রাচীন দালান, বাগানবাড়ী, হাতীর পুকুর, খেলার মাঠ ইত্যাদি। এই বাড়ীতে ১৮৬০ সালের ১২ মে জন্মগ্রহণ করেন সুকুমার রায়ের পিতা এবং সত্যজিৎ রায়ের পিতামহ প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী। তিনি ছিলেন বিখ্যাত শিশু কিশোর পত্রিকা ‘সন্দেশের’ (১৯১৩) প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। এই বাড়িটির অবস্থান কিশোরগঞ্জে জেলার কটিয়াদী উপজেলার ছোট গ্রাম মসুয়ায়। যেটি কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার আগের কটিয়াদী উপজেলায়।

বৌলাই সাহেব বাড়ি: মূসা খাঁ তৎপরতা প্রধানত নৌযুদ্ধে সীমাবদ্ধ ছিল বলে, ভাটি অঞ্চলের মুখে ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নরসুন্দার পারে অবস্থিত জঙ্গলবর্তি দূর্গই ছিল মুসা খাঁর প্রধান ঘাটি। সেই কারণে নরসুন্দার অপর পারে পুরান বৌলাইয়ে স্থাপিত হয়, আমীর করিম খাঁর অধীনে মুঘল নৌঘাটি। এই নৌঘাটি সদর থানাধীন বৌলাই ইউনিয়নের বৌলাই সাহেব বাড়ি নামেই বর্তমানে পরিচিত। কালের আবর্তে বিখ্যাত পরিবারটি ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলেও তাঁদের আবাস ভাটির ভগ্নদশা, প্রাচীন পুকুর, গোরস্থান, মসজিদ আজো পুরনো দিনের প্রাচুর্য্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। বৈলাই সাহেব বাড়িটির অবস্থান কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বৈলাই ইউনিয়নের পূর্ব ভরাটী বৈরাগীর চর গ্রামে। এর দূরত্ব কিশোরগঞ্জ শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার।

আজিমের মসজিদ: বৌলাই সাহেব বাড়ি থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে মাহতাব চেয়ারম্যান বাজারে ছিল ঐতিহাসিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত আজিমের মসজিদ। যেটি এখন আর নেই। গেল কয়েক বছর আগে ঐতিহাসিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত আজিমের মসজিদটি ভেঙ্গে কোন একটি ধর্মীয় সংস্থা নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ করে। তাতে হারিয়ে যায় ঐতিহাসিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত আজিমের মসজিদটি। তাই এই মসজিদের কোন ইতিহাস ঐতিহ্য ও ছবি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

কিশোরগঞ্জের সংস্কৃতি: কিশোরগঞ্জ জেলার পরতে পরতে লুকিয়ে আছে দেশীয় লোক সংস্কৃতি। ডঃ দীনেশ চন্দ্র সেন যে হারানো গীতিকা সম্পাদকে উদ্ধার করে ইংরেজীতে অনুবাদ করে আমাদেরকে বিশ্বের কাছে বরেণ্য করে তুলেছেন তার চুয়াল্লিশটি গীতিকার মধ্যে ত্রিশটি ছিল পূর্ব ময়মনসিংহের অর্থাৎ কিশোরগঞ্জ মহকুমার। কিশোরগঞ্জ জঙ্গলবাড়ীর কোচ রাজা লক্ষণ হাজরা, সুশংরাজ রঘুপতি আর এগারসিন্দুর বেবুদ রাজার কাহিনী এদেশের ইতিহাস সংস্কৃতিতে কিংবদন্তী। বাংলা সাহিত্যের মঙ্গল কাব্যের প্রথম রচয়িতা দ্বিজবংশী দাসের পূন্যভূমি এই কিশোরগঞ্জ জেলা। তাঁরই কন্যা মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের আদি মহিলা কবি চন্দ্রাবতী। তিনিই রামায়নের সার্থক অনুবাদকারী ফোকলোর কাব্যের নায়িকা।

কিশোরগঞ্জ জেলার লোকজ সাহিত্য সংস্কৃতিতে রয়েছে বিশাল ঐতিহ্য। এ জেলার লোকজ সংগীত, পালাগান, বাউল গান, কীর্তন, কিচ্ছা কাহিনী, জারী, সারি, নাটক, যাত্রাপালা, বিয়ের প্রবাদ-প্রবচন, পুঁথি, টপ্পা, নৌকা বাইচের গান, হাস্য রসাত্নক শোলক, ধাঁধাঁ ইত্যাদি ইত্যাদি আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে আজও স্বাতর্ন্ত্য ও স্বকীয়তায় উজ্জ্বল করে রেখেছে।

কিশোরগঞ্জের প্রকৃতি: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি কিশোরগঞ্জ জেলা। হাওর-বাওর ও সমতল ভূমির বৈচিত্র্যময় ভূ-প্রকৃতির একটি বিস্তীর্ণ জনপদ এই কিশোরগঞ্জ জেলা।

হাওর অঞ্চলে দ্বীপের মতো গুচ্ছ গ্রাম

সুনামগঞ্জ নেত্রকোণার মতো কিশোরগঞ্জকেও বলা হয় ভাটির দেশ। জেলার সর্বত্র জুড়ে যেন চোখ ধাঁধানো সবুজ শ্যামলিমার ধাঁরা। প্রকৃতির সৌন্দর্যের অপরুপ মিলনমেলা এ জেলার হাওর অঞ্চলে। বর্ষার মৌসুমে এ জেলার হাওরাঞ্চল থৈথৈ করে জলতরঙ্গে। জলের কলতান বাতাসে বাতাসে উড়ে বেড়া। শুধু জল প্রবাহ নয়, প্রচন্ড ঢেউ আছড়ে পড়ে দ্বীপ সদৃশ্য ভূ-খন্ডে। যেন বাংলাদেশের ভিতরে আরেকটি সাগর। এই থৈথৈ জলরাশি ফুটিয়ে তুলে প্রকৃতির প্রকৃত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চলে। এই হাওর অঞ্চলে সাগরের দ্বীপের মতো গুচ্ছ গ্রামগুলোকে ভাসিয়ে রাখে পরম ভালবাসায় তার বুকে।

ছাতিরচর হাওরে পানির উপর ভাসমান গাছ

জ্যোৎস্না রাতে চাঁদ ডুব সাতাঁর খেলে এই হাওর জলে। অমাবস্যায় খেলে লুকোচুরি। সূর্যের কিরণ লেগে হাওরের জল ধারণ করে রুপা রঙ। শীতে কোথাও কোথাও হয়ে উঠে ধুধু বালুচর। কোথাও কোথাও থেকে যায় জলের কলকলানি। সেই জলে সাতাঁর কাটে শতশত অতিথি পাখির দল। ধানী মৌসুমে এ হাওর ভরে উঠে সবুজ শ্যামলিমায়। এখানেই বাংলাকে পাওয়া যায় বাংলার রুপে।

হাওরে ভাসমান রাস্তা

কিশোরগঞ্জের কৃতি ব্যক্তিত্ব: রাষ্ট্র ও সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পর্যটন, ক্রীড়া, সংস্কৃতিসহ অন্যান্য দিকে অন্যান্য জেলার থেকে পিছিয়ে পড়া কিশোরগঞ্জ জেলা জন্ম দিয়েছে দেশের অসংখ্য সূর্য সন্তানদের। তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, চিত্রশিল্পী, কন্ঠ শিল্পী, অভিনয় শিল্পী, ছড়াকার, কবি-সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব, শিল্পপতি, শিক্ষাবিদ, বিচারপতি অন্যতম।

আট চল্লিশ বৎসর বয়সী বাংলাদেশের বিশজন রাষ্ট্রপ্রধান অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির মধ্যে এ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের তিনজন অসীন হয়েছেন। যা গোটা বাংলাদেশের অন্য সব জেলার বেলায় বিরল।

কৃতী কয়েকজন ব্যক্তিত্বের মধ্যে রয়েছেন- • সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর এবং জাতীয় চার নেতার অন্যতম একজন। • জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। • আব্দুল হামিদ, বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি এবং একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। • সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রয়াত সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। • আইভি রহমান, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। • ডঃ ওসমান ফারুক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী। • মনিব খান, সাবেক সেনাপ্রধান। • ক্যাপ্টেন ডা. সেতারা বেগম, বীরপ্রতীক খ্যাত বীর মুক্তিযোদ্ধা। • জয়নুল আবেদীন, বাংলাদেশের খ্যাতিনামা চিত্রশিল্পী। • বংশীদাস, মনসামঙ্গলের কবি। • চন্দ্রাবতী, প্রথম বাঙালি মহিলা কবি। • শহীদ ডা. এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরী, চিকিৎসক ও শহীদ বুদ্ধিজীবী। • উপেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী, লেখক, চিত্রশিল্পী। • কেদারনাথ মজুমদার, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ। • সুকুমার রায়, কবি, ছড়কার, গল্প লেখক ও নাট্যকার। • মনির উদ্দীন ইউসুফ, বিখ্যাত ফার্সীগ্রন্থ শাহনামা অনুবাদক। • ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী। • মোহন কিশোর নমোদাস, ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী। • নীরদ্র চন্দ্র চৌধুরী, লেখক। • মরহুম হামি উদ্দিন আহমেদ (খান সাহেব) সাবেক পূর্ব পাকিস্থানের প্রথম কৃষিমন্ত্রী। • নীহার রঞ্জন রায়, ইতিহাসবেত্তা। • দেবব্রত বিশ্বাস, রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী। • প্রবোধ চন্দ্র গোস্বামী, শিক্ষাবিদ। • সত্যজিত রায়, অস্কার বিজয়ী ভারতীয় চলচ্চিত্রকার। • আবুল ফতেহ, কূটনৈতিক ও রাজনীতিবিদ। • জহুরুল ইসলাম, বিশিষ্ট শিল্পপতি। • আবুল কাসেম ফজলুল হক, বাংলাদেশের প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও রাষ্ট্র চিন্তাবিদ। • আনন্দমোহন বসু, বাঙালি রাজনীতিবিদ এবং সমাজসেবক। • কাজী আব্দুল বারী, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক। • রেবতী মোহন বর্মণ, অবিভক্ত ভারতের ছাত্র আন্দোলনের জনক ও ভারতীয় যুব কংগ্রেসের সভাপতি, সংগ্রামী রাজনৈতিক প্রবাদ পুরুষ বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং অতুর্জ্জ্বল কমিউনিস্ট বিপ। • ইলিয়াস কাঞ্চন, বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকনন্দিত নায়ক। • শাহ আব্দুল হান্নান, ইসলামী দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, লেখক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজ সেবক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর। • গুরুদয়াল দাস, যার নামুসারে গুরুদয়াল কলেজের নাম।

দর্শনীয় স্থানের তালিকা:

• শোয়াকিয়া ঈদগাহ ময়দান- শোলাকিয়া, কিশোরগঞ্জ।

• হাতিরঝিল খ্যাত নরসুন্দা লেকসিটি- মুল অংশ মুক্তমঞ্চ, গুরুদয়াল কলেজ, কিশোরগঞ্জ।

• ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ- হারুয়া, কিশোরগঞ্জ।

• ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদ- পুরান থানা, কিশোরগঞ্জ।

• সাহেব বাড়ি- পূর্ব ভরাটি, বৈলাই, কিশোরগঞ্জ।

• চন্দ্রাবতী মন্দির- মাইজখাপন, কিশোরগঞ্জ সদর।

• সাদী মসজিদ- কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ।

• হযবত নগরবাড়ি মসজিদ- কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ।

• শোলাকিয়া ধড় শহীদের মাজার- কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ।

• রাজা গোবর্ধনের বাড়ি ও কালী বাড়ি- কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ।

• প্রামাণিক বাড়ি- কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ।

• শ্রী শ্রী শ্যামা সুন্দর লক্ষী নারায়ন জিউর আখড়া- কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ।

• রাজা গোবর্ধনের বাড়ি ও কালী বাড়ি- কিশোরগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ।

• ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি- করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ।

• বালিখলা বেরিবাঁধ- করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ।

• চামড়াঘাট- করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ।

• জঙ্গলবাড়ি মসজিদ- করিমগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ।

• সুকুমার রায়, সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি- কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ।

• হয়রত শামছুউদ্দিন বোখারির মাজার- কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ।

• ভোগবেতাল গোপীনাথ জিউর মন্দির- কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ।

• দূর্জয় ভাস্কর্য- ভৈরব, কিশোরগঞ্জ।

• সৈয়দ নজরুল সেতু- ভৈরব, কিশোরগঞ্জ।

• জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ- বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ।

• হিলচিয়া সহয়নী বৌদ্ধ- বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ।

• ভাগলপুর দেওয়ান বাড়ি ও মসজিদ- বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ।

• পাগলা শংকরের আখড়া, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ।

• জাওয়ার সাহেব বাড়ি- তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ।

• কালনার আখড়া- তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ।

• সিকান্দার শাহের মাজার- তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ।

• গিরগিন শাহের মাজার- পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ।

• শাহ গরিবউল্লা মাজার- পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ।

• সালংকা জামে মসজিদ- পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ।

• এগারসিন্দুর দুর্গ- পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ।

• কালী মন্দির- পাকুন্দিয়া , কিশোরগঞ্জ।

• চন্দ্রনাথ গোঁসাই’র আখড়া- নিকলী, কিশোরগঞ্জ।

• গুরই মসজিদ- নিকলী, কিশোরগঞ্জ।

• নিকলী বেরিবাঁধ- নিকলী, কিশোরগঞ্জ।

• দেওয়ান বাড়ি- ইটনা, কিশোরগঞ্জ।

• কাইল্লা শা ও মাইট্যা মাজার- ইটনা, কিশোরগঞ্জ।

• বাদশাহী মসজিদ- ইটনা, কিশোরগঞ্জ।

• গঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি- হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ।

• মানব বাবুর বাড়ি- হোসেনপুর, কিশোরগঞ্জ।

• দিল্লির আখড়া- মিঠামইন, কিশোরগঞ্জ।

• কুতুব শাহ মসজিদ- অষ্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ।

• বিস্তীর্ণ হাওর অঞ্চল- মিঠামইন উপজেলা, নিকলী উপজেলা, অষ্টগ্রাম উপজেলা, ইটনা উপজেলা।

যোগাযোগ ব্যবস্থা: কিশোরগঞ্জের যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নতমানের। রাজধানী ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। সড়ক অথবা রেলপথের মাধ্যমে ভ্রমণ করা যায়। স্থানীয় প্রশাসন আরএইচডি, এলজিইডি ও পৌরসভা সকল রাস্তা তদারকি করে থাকে। ঢাকা হতে কিশোরগঞ্জ পৌঁছাতে বাসযোগে ভাড়া ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা।

বাস যোগাযোগ ছাড়াও কিশোরগঞ্জের সাথে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগও অত্যন্ত ভাল। ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিনি সকাল ৮:০০ টায় এগারসিন্দুর প্রভাতি এক্সপ্রেস নামে একটি আন্ত:নগর ট্রেন বুধবার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ছাড়া নিয়মিত চলাচল করে। ট্রেনটি দুপুর ১২:৩০ মিনিটে কিশোরগঞ্জ স্টেশনে পোঁছার পর পুণরায় ১২:৪৫ মিনিটে এগারসিন্দুর গোধূলী নামে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এবং ঢাকায় পোঁছার পর সন্ধ্যা ৬:২০ মিনিটে এগারসিন্দুর গোধূলী নামে ঢাকার কমলাপুর থেকে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ ট্রেনটি রাত এগারটায় কিশোরগঞ্জ পোঁছার পর পরদিন সকাল ৬:৪৫ মিনিটে এগারসিন্দুর প্রভাতি এক্সপ্রেস নামে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

এছাড়াও কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে একটি আন্তঃনগর ট্রেন শুক্রবার ব্যতীত সকাল ১০.২০ এ ঢাকা থেকে ছেড়ে ২.২০ এ কিশোরগঞ্জ পৌছায় এবং ২.৪০ মিনিটে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়।

বাস সার্ভিস সমূহ: অনন্যা ক্লাসিক (মহাখালী – কিশোরগঞ্জ), অনন্যা পরিবহন (মহাখালী – কিশোরগঞ্জ), অনন্যা সুপার (সায়েদাবাদ – কিশোরগঞ্জ), যাতায়াত প্রাঃ লিঃ (সায়েদাবাদ – কিশোরগঞ্জ), যাতায়াত এসি প্রাঃ লিঃ (সায়েদাবাদ – কিশোরগঞ্জ), শামীম এন্টারপ্রাইজ এসি/নন এসি (কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ- যশোর- বেনাপোল-সাতক্ষীরা-সিলেট-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার), বিআরটিসি এসি/ননএসি (কিশোরগঞ্জ-খুলনা) (কিশোরগঞ্জ- রংপুর), অনন্যা ( কিশোরগঞ্জ – রাজশাহী), অপরূপা (কিশোরগঞ্জ – নওগা-বগুড়া), শাপলা (কিশোরগঞ্জ – টাঙ্গাইল)।

এছাড়াও দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে যাবার জন্য শক্তিশালী বাস যোগাযোগ রয়েছে।

তথ্যসূত্র : জেলা তথ্য বাতায়ন ও ইন্টারনেট।

Tags: