muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

করিমগঞ্জ

করিমগঞ্জে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনে বাঁধা, প্রস্তুতি কমিটি গঠনের প্রস্তাব

করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের শেষবার সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সেই সম্মেলনে আবুল হাশেম চৌধুরীকে সভাপতি ও এ্যাডভোকেট আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. মিজানুল হক জয়লাভ করে এবং আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি ও দলীয় কোন্দলের কারণে করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো আরো নড়বরে হয়ে যায়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নাজুক অবস্থা ও নড়বরে সাংগঠনিক অচলাবস্থা থেকে দলকে গতিশীল করার লক্ষে ২০০১ সালে আলহাজ্ব নাসিরুল ইসলাম আওলাদকে আহ্বায়ক করে ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমানের এ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

১৯ বছরের এ আহ্বায়ক কমিটির ১৩ জন সদস্য ইতিমধ্যে মারা গিয়েছেন, বাকি সদস্যদের মধ্য বেশিভাগই বার্ধক্য জনিত কারণে রাজনীতিতে অনেকটা নিষ্কৃয় আছেন।

সময় সময় কেন্দ্র বা জেলা থেকে সম্মেলন করার তাগিদ থাকলেও দলাদলি ও কোন্দল থাকার কারণে ১৯ বছেরর মধ্যে কোনো সম্মেলন, এমনকি একটি বর্ধিত সভাও করতে পারেনি।

শুরু থেকে আহ্বায়কের অরাজনৈতিক ও অসাংগঠনিক সিদ্ধান্তের কারণে আহ্বায়ক কমিটির অধিকাংশ সদস্যের সাথে রাজনৈতিক বিভাজনের সৃষ্টি হয়। শুধু আহ্বায়ক কমিটির মধ্য বিরোধ-বিভাজন থেমে থাকেনি। আহ্বায়ক বনাম উপজেলা কৃষক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এর মধ্যে বিদ্যমান বিরোধ রাজনৈতিক মাঠে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। বিভাজনের ফলে আহ্বায়ক অনুগত ও বিরোধী শিবির কর্তৃক উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে পাল্টাপাল্টি দুটি করে কমিটি গঠন করা হয়। যা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উভয় কমিটি অবৈধ।

আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে স্থানীয় সম্মেলন সম্পন্ন করার জোর তাগিদ আসে কেন্দ্র থেকে।

কেন্দ্র বা জেলার নির্দেশনা অনুযায়ী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের লক্ষে ১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ হল রুমে “বর্ধিত সভা” আহ্বান করা হয়।

আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সূত্রে জানা যায়, গত ৮ ডিসেম্বর আহ্বায়কের স্বাক্ষরিত চিঠি হাতে পেয়ে ১০ ডিসেম্বরের বর্ধিত সভার বিষয়ে তারা নিশ্চিত হয়। আহ্বায়ক অনুগত সদস্য ও ইউনিয়ন কমিটির কথিত সভাপতি-সম্পাদক (অবৈধ ও মেয়াদোত্তীর্ণ) বর্ধিত সভার দাওয়াতের চিঠি পেলেও বিরোধী শিবিরের কোনো প্রকার চিঠি ইস্যু করেনি। এমনকি বর্ধিত সভার বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগকেও জানানো হয়নি।

সকাল ১১টায় শুরু হওয়া সভায় আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়াও আহ্বায়কের বিরোধী শিবিরসহ কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দলে দলে যোগ দেয়। এমনকি বাদ যায়নি জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও।

আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর ররহমান মিজান ও আব্দুস ছালামের যৌথ সঞ্চালনায় বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ।

বর্ধিত সভায় বক্তৃতা করেন, জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. ইকবাল, শ্রম সম্পাদক এ বি এম সিরাজুল ইসলাম, জেলা কমিটির সদস্য হাসান মমিন উজ্জ্বল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সধারণ সম্পাদক মো. ইকবাল, রুস্তম আলী, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি তারেক উদ্দিন আহমেদ আবাদ, করিমগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাইয়ুম, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী, আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমান, মিজানুর রহমান, আবুল মনসুর সরকার, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির স্বপন, সোহরাব উদ্দিন কায়েস, পৌর কৃষক লীগের আহ্বায়ক মোঃ আব্দুল জলিল, করিমগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সরকার জাহাঙ্গীর সিরাজীসহ উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

সভায় বেশিরভাগ বক্তা দাবি করেন, আহ্বায়ক অসাংগঠনিকভাবে এ সভা আহ্বান করেছেন। যেখানে উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কমিটি নেই। যে কয়টা ছিল, সেগুলো আবার মেয়াদোত্তীর্ণ।

তারা আরো বলেন, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো সম্মেলন হতে পারেনা। গোপনে সম্মেলন হলে যেকোনো উপায়ে প্রতিহত করার ঘোষনা আসে সভায়।

৫ ঘন্টা ধরে চলমান সভায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের এক পর্যায়ে হট্টগোল শুরু হলে কিছু সময় সভাটি পন্ড হয়ে যায়। সিনিয়র নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে সভাটি পূনরায় শুরু হয়।

সভায় সম্মেলনের কোনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি। তবে আলোচনার এক পর্যায়ে করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইকবাল প্রস্তাব করেন, সম্মেলনের আগে যেন একটি সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি গঠন করা হয় এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিয়ন কমিটিগুলো সম্পন্ন করা হয়। এ প্রস্তাবের সাথে জেলা নেতৃবৃন্দ একমত পোষন করেন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করে তার পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. ইকবাল, শ্রম সম্পাদক এ বি এম সিরাজুল ইসলাম ও জেলা কমিটির সদস্য হাসান মমিন উজ্জ্বল। একই সঙ্গে জেলা কমিটির সঙ্গে কথা বলে জাতীয় সম্মেলনের পরে সম্মেলন আয়োজনের কথা বলা হয়।

সবশেষে আহ্বায়ক তার বক্তৃতায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা না করে, এ নিয়ে রাষ্ট্রপতি ও জেলা কমিটির সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে উপস্থিত নেতাকর্মীদের আশ্বাস দেন।

Tags: