muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

‘তখনকার সরকার কিছুতেই আমাকে দেশে আসতে দিতে চায়নি’

অতীতের মতো ভবিষ্যতে আর কখনই বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতি সম্ভব হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবই।

তিনি বলেন, ইতিহাস একেবারেই মুছে ফেলা হয়েছিল, পুরো পরিবর্তন। এখন একটা আত্মবিশ্বাস এসে গেছে বাংলাদেশের ইতিহাস আর কেউ বিকৃত করতে পারবে না, আর মুছতে পারবে না। সে জন্য আমি দেশের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশ স্বাধীন, বাংলাদেশ স্বাধীনই থাকবে এবং আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে সভাপতির প্রারম্ভিক সংক্ষিপ্ত ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যগণ সচিবালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পর বাধ্য হয়ে ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে একরকম জোর করেই ১৯৮১ সালের এই দিনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা।

সেদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টির মধ্যে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টির মধ্যে যখন তিনি ট্রাকে করে রাজধানীর বৃষ্টিস্নাত পথ ধরে যাচ্ছিলেন তখন লাখো জনতা তাকে স্বাগত জানায়।

শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে প্রচণ্ড বৈরী পরিস্থিতিতে তার দেশে ফিরে আসার সময়কার স্মৃতিচারণ করে বলেন, সে সময় অনেক ঝড়-ঝাপটা এবং বাধা অতিক্রম করেই আমাকে দেশে আসতে হয়েছিল। তখনকার সরকার কিছুতেই আমাকে আসতে দেবে না, আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র অনেক ভাবে চিঠিপত্র পাঠিয়ে বিভ্রান্ত করার অনেক চেষ্টাই করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমি জানতাম জাতির পিতার হত্যাকারীরা তখন ক্ষমতায়, খুনিদের ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। ওই অবস্থায় আমি চলে এসেছি। কিছুই চিন্তা করিনি। কারণ, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে পারে না। এই স্বাধীনতাকে আমার সফল করতেই হবে- এভাবেই একটা প্রতিজ্ঞা আমার আর রেহানার সব সময় ছিল।

তিনি ১৭ মে তার ফেরার দিনটির ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ আবহাওয়া স্মরণ করে বলেন, এসেছিলাম তো ঝড় মাথায় নিয়ে। সেদিন ৬০ মাইল বেগে ঝড় হচ্ছিল, তখন আমি ট্রাকে। আর হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়।

তিনি বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই তখনকার আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের যারা আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচন করে এবং আমি যেটা জানতাম না। তারপর থেকে যারা আমার সঙ্গে ছিল এবং এদেশের জনগণ, যে জনগণের শক্তিটা হচ্ছে সব থেকে বড় শক্তি। কারণ, আমি যখন বাবা-মা, ভাই-বোন হারিয়ে এদেশে এসেছি গ্রামে গঞ্জে যেখানেই গিয়েছি সাধারণ মানুষ, গ্রামের মানুষ তাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। অনেক স্নেহ, অনেক দোয়া কাজেই আমার মনে হয়, ওই শক্তিটাই সব থেকে বড় শক্তি ছিল।

আওয়ামী লীগের ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি, দেশে এবং দেশের বাইরের অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে আজকের অবস্থানে আমরা আসতে পেরেছি এটাই সব থেকে বড় কথা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার দলে নেতা-কর্মী অনেকে আজকে নেই। সে সময় যারা দলে জন্য কাজ করেছেন তাদের অনেককেই হারিয়েছি। তারপরেও যারা আছেন সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ফিরে আসার ব্যাপারে সব থেকে আগে স্টেটমেন্ট দেন ছাত্রলীগের তরফ থেকে ওবায়দুল কাদের। সে তখন ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট। আর যুবলীগের পক্ষ থেকে আমাদের আমির হোসেন আমু। আর পার্লামেন্টে কথাটা তুলেছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। যদিও তিনি পরে অন্য দলে চলে যান। কিন্তু তিনিই প্রথম আমার ও রেহানার দেশে আসার বিষয়টা তুলেছিলেন।

তিনি বলেন, এটা বলতে পারি আল্লাহ সব সময় সহযোগিতা করেন এবং আল্লাহ কিছু কাজ দেন মানুষকে সে কাজটা যতক্ষণ শেষ না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ রক্ষা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজকে যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, এগিয়ে যাবে সেটাই আসা করি। আর এই করোনাভাইরাসে যাদেরকে হারিয়েছি তাদের আত্মার মাগফিরাত এবং শান্তি কামনা করি।

Tags: