muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

রাজনীতি

কী হবে সৈয়দ আশরাফের

ashraf
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠঃ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে। গতকাল একনেক বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তবে মন্ত্রীর মর্যাদায় দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে থাকবেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এলজিআরডিতে নতুন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গত রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। তবে যে কোনো মুুহূর্তে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।

জানা গেছে, গতকাল একনেকের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে

গ্রামীণ সড়ক উন্নয়নে ৬ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রকল্প পাস না করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী কেউই বৈঠকে নেই। কারণ এ উন্নয়ন প্রকল্পে শুধু বরাদ্দ দিলে হবে না তা বাস্তবায়ন করতে হবে। মন্ত্রী মনিটরিং না করলে প্রকল্প কীভাবে বাস্তবায়ন হবে? তাই এ বিশাল প্রকল্প নিয়ে চিন্তা করতে হবে। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও জন্য উন্নয়ন প্রকল্প থেমে থাকতে পারে না। আমি প্রয়োজনে আজকেই মন্ত্রী পরিবর্তন করে দিচ্ছি। আপনারা প্রকল্প পাস করুন। উন্নয়ন তার মতো করেই চলবে। পরে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রী কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে। তাকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। পরে বৈঠকে অংশগ্রহণকারী পরিকল্পনা পরিষদ কমিশনের অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উনি মিটিংয়ে আসেন না। এ জন্য সরিয়ে দিলেই ভালো হয়। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একজন মন্ত্রীও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট অবস্থানের কথা জানান। সৈয়দ আশরাফকে এ মন্ত্রণালয়ে না রাখার পক্ষেই প্রধানমন্ত্রী। তবে তাকে অন্য কোনো মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে কি না তা নিশ্চিত নয়।

জানা গেছে, সৈয়দ আশরাফ সাত বছর ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ওয়ান-ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল কারান্তরীণের পর তিনি এ দায়িত্ব পান। পরে জলিলের কারামুক্তি মিললেও দলীয় পদ ফেরত পাননি। ২০০৯ সালে কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে সৈয়দ আশরাফ আনুষ্ঠানিকভাবে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বরও তাকে একই দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি ঠিকমতো অফিসে যেতেন না। তার পরও গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর দ্বিতীয় মেয়াদেও একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। গত কয়েক মাস ধরেই সৈয়দ আশরাফকে ঘিরে দলের ভিতরে নানামুখী আলোচনা ছিল। গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কোনো নির্দেশনা পাইনি। এদিকে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সবাই বললেও আমি কিছু জানি না। সবার মুখেই জয়, সবার মুখেই ক্ষয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একনেকের বৈঠকে সৈয়দ আশরাফের বিষয়ে কথা হয়েছে এটুকু জানি। বাদবাকিটা কিছুই জানি না।

কিশোরগঞ্জে ইফতার : কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ইফতার ও দোয়া মাহফিলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রধান অতিথি হিসেব উপস্থিত ছিলেন। ইফতার শেষে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেও সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান। উপস্থিত সব সাংবাদিক তার কাছে ঢাকার গুজব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা না বলে চলে যান। ইফতারের আগ মুহূর্তে তিনি অনুষ্ঠানস্থলে এসে উপস্থিত হন। ইফতারের আগে দোয়া করার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন। নেতা-কর্মীরা তাকে সফল উল্লেখ করে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শরীফ সাদীসহ বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রণালয়ে যেতেন না : মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে গত মেয়াদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পাঁচ বছরে ১৫-১৬ দিন মন্ত্রণালয়ে যান। এই মেয়াদেও তাকে মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়নি। মন্ত্রণালয়ের ফাইল যেত তার বাড়িতে। তিনি জরুরিগুলো মাঝে মাঝে স্বাক্ষর করতেন। বেশির ভাগ পড়ে থাকত। মন্ত্রীর একান্ত সচিব ফাইল দেখতেন। এলাকার রাজনীতি দেখতেন এপিএস। দলের নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেতেন না। অজ্ঞাত অভিমানে তিনি যেতেন না মন্ত্রণালয়ে। দেখা দিতেন না নেতা-কর্মীদের। সৈয়দ আশরাফকে সরিয়ে দেওয়ার খবর গতকাল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক সিনিয়র নেতা ফোনও করেন তাকে। এ সময় তিনি ছিলেন কিশোরগঞ্জে। আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, সৈয়দ আশরাফ দলে বিতর্কের ঊধের্্ব। কিন্তু সমস্যা হলো তিনি বিশাল উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। এ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সব এমপি, মন্ত্রী, নেতা সম্পৃক্ত। কিন্তু মন্ত্রী অফিস না করার কারণে নেতা-কর্মীদের সমস্যা হতো। তারা মন্ত্রীকে পেতেন না। দিনে তিনি বের হতেন না। রাতে তাকে ঘিরে থাকত কয়েকজনের একটি চক্র। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর এলাকার একজন সাবেক কাউন্সিলরও রয়েছেন। যিনি এবার নির্বাচন করে হেরেছেন। সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে সৈয়দ আশরাফকে পছন্দ করেন। কিন্তু মন্ত্রী হিসেবে তিনি অফিস না করার কারণে প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত ছিলেন। এ বিরক্তি আরও বাড়ে গতকালের একনেকের বৈঠকে মন্ত্রীকে না দেখে।

০৮ জুলাই ২০১৫/ নিঝুম

Tags: