muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

ইসলামের কথা

সুন্নাত পদ্ধতিতে খাবার গ্রহণ ও তার আদব

ইসলামের কথা :

ইসলাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। মানুষের জীবনের সব বিষয়ে যথোপযুক্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খল সমাধান দিয়েছে ইসলাম। জীবন সফলতার দ্বীপ্তিময় পথ সুগম করে দিয়েছে অতি অল্প নেক আমলের মাধ্যমে। হেদায়াতের পাথেয় হিসেবে আল্লাহ ধরায় পাঠালেন কোরআন ও তাঁর প্রিয় মাহবুব মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে। তাঁকে মাইলফলক হিসেবে স্থাপন করেছেন মানবজাতির জন্য। তাঁর জীবনকে গড়েছেন পৃথিবীর পূর্বপরের সব মানুষ থেকে শ্রেষ্ঠ মাধুর্যে। ভালোবাসায় দিগ্বিজয়ী। তাঁকে বানিয়েছেন সবার পথিকৃৎ। তিনি মানবসেবার কল্যাণ, সুখ-শান্তি কামনায় অনায়াসে মেহানত, পরিশ্রম করেছেন। নিজের জীবনকে সাজিয়েছেন পাপপঙ্কিলতাহীন বেনজির আদর্শ উত্তম চরিত্রের অধিকারীরূপে। তিনি আল্লাহর ফরমানে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থাপন করেছেন নিজের জীবনের কাজকর্ম। অণু থেকে অণু বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন তাদের। তাঁর প্রতিটি কর্ম অনুসরণযোগ্য। সফলতায় পৌঁছার সর্বপেক্ষা উত্তম মাধ্যম। জীবন সাজানোর পাথেয়। তাঁর জীবনের কর্মপদ্ধতিগুলো মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরতে পারলে জীবন পৌঁছে যাবে সফলতার স্বর্ণ শিখরে। জীবনে বয়ে যাবে প্রশান্তির ফল্গুধারা। আজকের পাতায় রাসুল (সা.) কিভাবে খাবার খেতেন সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে—ইনশাআল্লাহ।

*   খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা। রাসুল (সা.) খাবার প্রারম্ভে সব সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে খাবার শুরু করতেন। এবং তাঁর অন্য সাথিদের খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে উৎসাহিত করতেন। রাসুল (সা.)  বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে ও ডান হাত দ্বারা খানা খাও। এবং তোমার দিক হতে খাও।’ (বুখারি, হাদিস : ৫১৬৭, তিরমিজি, হাদিস : ১৯১৩)

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন তোমরা খানা খেতে শুরু করো তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো, ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওআখিরাহ।’ (রিয়াজুস সালেহিন : ৭২৯)। তিনি মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন, তোমরা খাবার গ্রহণের প্রারম্ভের দোয়া ভুলে গেলে যখন স্মরণ হবে তখন এই দোয়া পড়বে।

*    দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়া। রাসুল (সা.) খাওয়ার সময় দস্তরখানা বিছিয়ে খেতেন। এটা অনেক বড় এক সুন্নাত। তিনি এ ব্যাপারে অনেক যত্নশীল ছিলেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার খালাম্মা একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে গুইসাপ, কাঁধের গোশত ও দুধ হাদিয়া পাঠালেন। তিনি গুইসাপকে  দস্তরখানার ওপরে রাখলেন। তিনি এটা খাননি। তিনি দুধ পান করলেন। এবং ছাগলের গোশত খেলেন। এই হাদিস দ্বারা বুঝে আসে, রাসুল (সা.) দস্তরখানা বিছিয়ে খেতেন। অন্য এক হাদিসে আছে, তিনি খাবারগুলো দস্তরখানার ওপরে রাখলেন। (তুহফাতুল ক্বারি ১০/৩৫৬)

*   ডান হাত দ্বারা খাবার খাওয়া। রাসুল (সা.) আজীবন ডান হাত দ্বারা খাবার খেয়েছেন। এবং বাম হাত দ্বারা খাবার খেতে মানুষকে নিষেধ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দ্বারা খাবার খেয়ো না ও পান করো না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১২)

*   হাত চেটে খাওয়া। রাসুল (সা.) খাওয়ার সময় সর্বদা হাত চেটে খেতেন। না চাটা পর্যন্ত কখনো হাত মুছতেন না। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করবে, তখন হাত চাটা নাগাদ তোমরা হাতকে মুছবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২৪৫)

*   আঙুল চেটে খাওয়া। আঙুল চেটে খাওয়ার ফলে বরকত লাভের অধিক সম্ভাবনা থাকে। কারণ খাবারের বরকত কোথায় রয়েছে মানুষ তা জানে না। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করো তখন আঙুল চেটে খাও। কেননা বরকত কোথায় রয়েছে তা তোমরা জানো না।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৯১৪)

*   লুকমা তুলে খাওয়া। খাবার গ্রহণের সময় দেখা যায় অনেকের থালা-বাসন থেকে খাবারের লুকমা বা এক-দুই টুকরা ভাত, রুটি কিংবা অন্য সব খাবার পড়ে যায়। তাহলে তা তুলে খেতে হবে। রাসুল (সা.)-এর খাবারকালে যদি কোনো খাবার পড়ে যেত, তাহলে তিনি তুলে খেতেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের খাবার আহারকালে যদি লুকমা পড়ে যায়, তাহলে ময়লা ফেলে তা ভক্ষণ করো। শয়তানের জন্য ফেলে রেখো না। (তিরমিজি : ১৯১৫, ইবনে মাজাহ : ৩৪০৩)

*   হেলান দিয়ে না খাওয়া। কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খাবার খেতে তিনি নিষেধ করেছেন। হেলান দিয়ে খাবারের ফলে পেট বড় হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, এটা দাম্ভিকতার আলামত। আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বলেন, আমি টেক লাগানো অবস্থায় কোনো কিছু ভক্ষণ করি না। (বুখারি, হাদিস ৫১৯০, তিরমিজি, হাদিস ১৯৮৬)

*   দোষ-ত্রুটি না ধরা। আমাদের অনেককে দেখা যায় খাবারের মধ্যে নানারূপ দোষ-ত্রুটি ধরতে। এই নিয়ে আমাদের পরিবারে ঝগড়াঝাটি হচ্ছে দেদার। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদের মতো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। অথচ রাসুল (সা.)-এর পূর্ণ জিন্দেগিতে কখনো খাবারের দোষ ধরতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.)  কখনো খাবারের দোষ-ত্রুটি ধরতেন না। তাঁর পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে পরিত্যাগ করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫১৯৮, ইবনে মাজাহ, হাদিস  : ৩৩৮২)

*   খাবারে ফুঁক না দেওয়া। খাবারের মধ্যে ফুঁক দেওয়া অনেক রোগ পয়দা হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাসুল (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) কখনো খাবারে ফুঁক দিতেন না। ফুঁক দিতেন না কোনো কিছু পানকালেও। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৪১৩)

*   খাবারের শেষে দোয়া পড়া। অনুগ্রহকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করা সভ্য মানুষের কাজ। আল্লাহ আমাদের প্রতি খাবারের মাধ্যমে অনেক বড় দয়া অনুগ্রহ করছেন। এ দয়ার শুকরিয়াস্বরূপ তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করা সভ্যতার লক্ষণ।  খাবার খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য। রাসুল (সা.)  খাবার শেষে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাতেন। দোয়া পড়তেন। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) খাবার শেষ করে বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান ফিহি, গায়রা মাকফিইন, ওলা মুয়াদ্দায়িন ওলা মুসতাগনা আনহু রাব্বানা।’ তিনি কখনো এই দোয়া পড়তেন : ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াছাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন।’  (বুখারি, হাদিস : ৫৪৫৮)

আমরা যদি আমাদের জীবন চলার পথে রাসুল (সা.)-এর সুন্নাতগুলো পূর্ণতার সঙ্গে জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে আমাদের জীবন হবে সুন্দর থেকে সুন্দরতম। আমাদের শেষ পরিণাম হবে মধুময়। সুখ-শান্তির আভায় ভরপুর। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন!

মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/০১০৬২০১৬ইং/মোঃ নোমান

Tags: