প্রতিবছরের ন্যায় এবারও উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। ১৮২৮ সালে প্রথম জামাতের পর এবারের ঈদুল ফিতরের জামাতটি হবে ঈদগাহ ময়দানের ১৯০তম জামাত।ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়।ঈদ জামাতটি পরিচালনা করবেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান ও এনজিও ব্যক্তিত্ব মাওলানা মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
গত বছরে ঈদ জামাতের বাহিরে পুলিশকে লক্ষ্য করে জঙ্গী হামলাসহ সাম্প্রতিক হামলাগুলোকে কেন্দ্র করে নিরাপদে জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য এবার জোরদার করা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্গলা পরিস্থিতির বিবেচনায় এরই মধ্যে জেলায় বাতিল করা হয়েছে পুলিশের ছুটি। ঈদ জামাতের আগে থেকেই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ঈদগাহ ও আশপাশের এলাকাগুলোতে মোতায়েন থাকবে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ বিপুলসংখ্যক আর্মাড পুলিশ। যেকোন ধরনের নাশকতা এড়াতে ওয়াচ টাওয়ার ও ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় পুরো এরিয়াটি প্রতিটি মূর্হুতে পর্যবেক্ষণ করা হবে।এছাড়াও মাঠের প্রতিটি প্রবেশ পথে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশিও করা হবে।
জামাতে অংশ নিতে রাষ্ট্রপতি, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও মন্ত্রী পরিষদ সদস্যসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ঈদগাহ কমিটির পক্ষ থেকে। সেই সঙ্গে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার ঈদুল ফিতরের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে ঈদগাহ কমিটি ও জেলা প্রশাসন।
সুষ্ঠুভাবে জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পৌরসভা, গণপূর্ত, জনস্বাস্থ্য, পিডিবিসহ অন্যান্য বিভাগের সহায়তায় গ্রহণ করা প্রস্তুতিমূলক কাজগুলোও বর্তমানে শেষ পর্যায়ে। এরই অংশ হিসেবে সম্পন্ন হয়েছে কাতারের লাইন টানা, বিদ্যুতিক লাইন সংযোজন, মাঠ পরিস্কারকরণ, পানি সরবরাহকরণ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ রঙের প্রলেপ দেওয়ার কাজ। সংস্কার করা হয়েছে ঈদগাহে প্রবেশের সড়ক ও পাশের পুকুরটিও।
দীর্ঘ দিনের রীতি অনুযায়ী বিপুল সংখ্যক মুসল্লির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নামাজ শুরুর পাঁচ মিনিট আগে তিনটি, তিন মিনিট আগে দুটি এবং এক মিনিট আগে একটি শটগানের ফাকাঁ গুলি ছোড়া হবে। দূর দূরান্ত থেকে জামাতে অংশগ্রহণ করতে আসা মুসল্লিদের সুবিধার্থে সরকারীভাবে এবারও থাকছে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামের দুটি বিশেষ ট্রেন। ট্রেন দুটির মধ্যে একটি ভোর সাড়ে ৫টায় ময়মনসিংহ থেকে অপরটি সকাল ৬টায় ভৈরব থেকে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে।
পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান (পিপিএম) বলেন, মুসল্লিরা যাতে নিরাপদে নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা করতে স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের ছাতা বা কোন ধরনের ব্যাগ নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। মুসল্লিরা শুধু জায়নামাজ নিয়ে ঈদগাহে আসতে পারবেন। ঈদগাহ মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য ইতিমধ্যেই ১২০০ পুলিশ, ৮ প্লাটুন বিজিবি, ২০ প্লাটুন এপিবিএনসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে। আগাম প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অস্থায়ী ক্যাম্পসহ স্থাপন করা হয়েছে ৮টি ওয়াচ টাওয়ার, ১০০টির মত সিসি ক্যামেরা। মাঠে প্রবেশের ৭টি গেইটের নিদিষ্ট জায়গায় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশির পর মাঠে প্রবেশ করানো হবে। ঈদের দিন পর্যন্ত এলাকার কোন বাসায় যাতে নতুন কোন ভাড়াটে না ওঠে সে জন্য বাড়িওয়ালাদের আহ্বান জানানো হয়েছে। অচেনা কোন লোক এলাকায় ঘোরাফেরা করলে সে সংক্রান্ত তথ্য পুলিশকে প্রদানের জন্য পুলিশ সুপার অনুরোধ জানান।
এ দিকে বুধবার দুপুরে ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শনে এসে জামাতের জন্য শোলাকিয়া পুরোপুরি প্রস্তুত জানিয়ে জেলা প্রশাসক ও মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজিমুদ্দিন বিশ্বাস মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠকে জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও আগত মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তা ও দূর দূরান্ত থেকে আগতদের জন্য রাত্রি যাপনের সু-ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিত্সার জন্য রাখা হয়েছে জরুরি মেডিকেল টিম ও ত্র্যাম্বুলেন্স। সবার সহযোগীতায় লাখো লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত সম্পন্ন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও উপ-সচিব তরফদার মোহাম্মদ আক্তার জামীল, পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মাসউদ, এনডিসি আবুল হাসেম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/২৩-০৬-২০১৭ইং/ অর্থ
Tags: