muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

দেশের খবর

বগুড়ায় ক্রেতা সংকটে পশুর হাট, খামারিরা হতাশ

বগুড়া থেকে এম নজরুল ইসলাম ।। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। কোরবানি পশুর হাটগুলোতে প্রচুর পশু ওঠছে। উত্তরা লের হাটগুলোয় গরুর দাম গত বছরের তুলনায় কম। তবে সাধারণ ক্রেতারা এখনো হাটমুখী হননি। ফলে দাম কম হলেও ক্রেতা সংকটের কারণে তেমন পশু বিক্রি হচ্ছে না। ভারতীয় গবাদি পশু আমদানি ও স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারণে উত্তরা লের বিভিন্ন হাটে কম দামে কোরবানির পশু কেনাবেচা হচ্ছে। বিক্রি পুরোপুরি জমে না ঊঠলেও প্রচুর গবাদি পশু উঠছে হাটগুলোতে। ক্রেতা ও দাম দুটোই কম। গরু-ছাগলের ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ খামারি ও গবাদিপশু পালনকারীরা।

বগুড়ায় এবার কোরবানির পশুর হাট ৮০টি। বগুড়া শহর ও শহরতলিসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় কোরবানির পশুর বড় হাট বসে। বগুড়া সদর, দুপচাঁচিয়া, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ, গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলায় এ রকম বড় হাটের সংখ্যা প্রায় ১৫টি। এর বাইরেও অনেক পশুর হাট রয়েছে। বড় হাটগুলোর মধ্যে মহাস্থান, সুলতানগঞ্জ, চাঁদমুহা ও ঘোড়াধাপ অন্যতম। তবে জেলার প্রায় সব হাটেই অতিরিক্ত হাসিল (খাজনা) আদায়ের অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। সরকারি নির্দেশনা থাকলেও কোনো হাটেই টানানো হয়নি হাসিলের তালিকা।

মঙ্গলবার কাহালু উপজেলার মাল া পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায় ক্রেতাদের উপস্থিতি খুবই কম। হাটে কোরবানি পশুর আমদানি অনেক। মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম তুলনামূলক বেশি। তবে ছোট-বড় আকৃতির গরুর দাম গত বছরের তুলনায় কম। বাজারে গরুর মূল্য ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ একলাখ ৩০ হাজার টাকা এবং ছাগল ৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে কেনাবেচা হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের চেয়ে এবার কোরবানরি পশুর দাম অনেক কম। ফলে গরু-ছাগলের ন্যায্য দাম না পেয়ে হতাশ খামারি ও গবাদিপশু পালনকারীরা। চাহিদার তুলনায় বেশি পশু থাকলেও জেলায় চলমান ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির কারণে এ দুর্দশা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়ে বিক্রেতারা জানান, বন্যার কারণে রাস্তা-ঘাট, বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় বাড়িঘর ছেড়ে বানভাসিরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। এতে গবাদি পশুগুলোকে নিয়ে তারা পড়েছেন বিপাকে।

হাটে ক্রেতার আনাগোনা খুবই কম। বসত ভিটায় বন্যার পানি ঢোকা, খাদ্য না থাকা, বাসস্থানের জায়গা না থাকায় এ বছর পশুর আমদানি বেড়েছে দ্বিগুণ । কিন্তু ক্রেতা সংকটে বিক্রি হচ্ছে কম দামে। একজন বিক্রেতা জানান, বন্যার কারণে পশুগুলো সস্তায় বিক্রি করছি। আমাদের চাল কিনে খেতে হবে।

খামারি তৌফিক, জুয়েল, আনোয়ার ও রাশেদুল জানান, হাটে পর্যাপ্ত পশু উঠেছে। গত বছর যে গরু বিক্রি হয়েছে ৮০ হাজার টাকায়, এবার সেই আকারের গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৫০ থেকে হাজার ৬০ হাজার টাকায়। গরু প্রতি এবার অন্তত ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা কম হচ্ছে। বাধ্য হয়েই অনেকে বিক্রি করে দিচ্ছেন পালন করা গবাদিপশু। দেশি জাতের গরুর কদর বেশি। তবে দাম কম।

?

এদিকে বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, ইজারাদাররা খাজনা আদায়ের কোনো নিয়মনীতি মানছেন না। অনেক হাটে খাজনা আদায়ের রশিদ আগেই কমিশন এজেন্টদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ফলে সেসব এজেন্ট ইচ্ছামতো টাকা আদায় করছে। এ বছর জেলার প্রতিটি পশুর হাটে প্রতি গরু-মহিষ সর্বোচ্চ ২০০-২৫০ টাকা এবং ছাগল-ভেড়া ৭০-৯৫ টাকা ইজারাদারদের জন্য হাসিল (খাজনা) নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে প্রতিটি হাটে হাসিলের টাকা উল্লেখ করে তালিকা টানানোর জন্য সরকারি নির্দেশ থাকলেও কোনো হাটেই সেটি টানানো হয়নি। আর প্রতিটি হাটেই ইচ্ছামাফিক হাসিল আদায় করছেন আদায়কারীরা। এসব হাটে গরুপ্রতি সর্বনিম্ন ৫০০ ও ছাগলপ্রতি ২৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, কোরবানির হাটগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও জালটাকার মাধ্যমে প্রতারণা রোধে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে জালটাকা শনাক্তকরণ (ডিটেক্টর) মেশিন বসানো হয়েছে।

বগুড়া পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বিপিএম জানান, কোরবানির পশুর হাটগুলোয় সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি হাটে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি চুরি-ছিনতাই রোধে সাদা পোশাকে একাধিক টিম কাজ করছে। পুলিশ সদস্যরা পশুর হাটগুলোয় সজাগ দৃষ্টি রেখেছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. শফিউজ্জামান জানান, এবার বগুড়ায় মোট ৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৭০টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে ষাঁড়, বলদ এবং গাভী ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৭২টি। আর বাকীগুলো হলো, ছাগল, ভেড়া ও অন্যান্য পশু। জেলায় কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে ৩ লক্ষাধিক পশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাবে। গত বছর কোরবানিতে জেলায় ২ লাখ ৩৫ হাজার পশু জবাই হয়েছিল।

 

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/২৯-০৮-২০১৭ইং/ অর্থ

Tags: