ডেস্ক রিপোর্ট : রোহিঙ্গা প্রশ্নে চীন ও রাশিয়ার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চীন ও রাশিয়া বৃহৎ শক্তি। তারও আমাদের বন্ধু দেশ। এ মানবিক (রোহিঙ্গা) সংকটে তারা যথাযত ভূমিকা পালন করবে। এটাই আমরা আশা করি। তবে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কোনো দ্বিচারিতা সহ্য করা হবে না।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দীরে শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবে পূজা মণ্ডপ পরিদর্শনকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সেতুমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে সাহায্য পাঠিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা নির্যাতনকে সমর্থন দেয়া চীনের দ্বিচারিতা কোনোভাবেই সমর্থন যোগ্য নয়। এ মানবিক সংকটে আমাদের সাহায্যের অভাব নেই।
তিনি বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ, তারাও আমাদের সাত হাজার টন ত্রাণ সাহায্য দিয়েছে, যার প্রথম চালান আমি নিজেই গ্রহণ করেছি। সাহায্য আমরা পাচ্ছি, আমাদের দেশের ভেতর থেকেও এত সাহায্য আসছে যে এখনও আমাদের সরকারি ত্রাণ ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন মধ্য যুগের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মাধ্যমে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মুক্ত আলোচনা সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি যে, চীন ও রাশিয়া রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে তাদের শেষ পদক্ষেপ হিসেবে মেনে নিতে চায় না। এর মধ্যে চীনও মানবিক সাহায্য পাঠাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে, একদিকে মানবিক সাহায্য অন্যদিকে রোহিঙ্গা নির্যাতনকেও সমর্থন করা দ্বিচারিতা। আমি আশা করব, বৃহৎ শক্তি এই দ্বিচারিতা থেকে সরে আসবে।
তিনি বলেন, মানবিক সাহায্য যারা করতে চান করবেন কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বর্বর গণহত্যাকে সমর্থন করা দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। আমি আশা করি, এটাই তাদের শেষ পদক্ষেপ নয়। চীন ও রাশিয়া এ মানবিক সংকটে, মর্মান্তিক পরিস্থিতিতে মানবতার, সত্য, ন্যায় ও যৌক্তিকতার পক্ষে অবস্থান নেবেন। দ্বিচারিতা আমরা আশা করি না। একদিকে সাহায্য অন্যদিকে অত্যাচারী ঘাতকদের সমর্থন এবং নিপীড়িতদের মানবিক সাহায্য দ্বিচারিতা। তা সমর্থন যোগ্য নয়।
সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে সীমাহীন দুঃখ দুর্দশা অত্যাচার নির্যাতন নেমে আসছে আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন জনগোষ্ঠীর রোহিঙ্গাদের ওপর। আজকে তাদের ওপর অমানুষিক টর্চার, রেইপ নেমে এসেছে। বার্মি সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন কত বর্বর, কত পাশবিক নৌকায় সাগর পাড়ি দেয়া থেকে ভয়ঙ্কর। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই অত্যাচার, নিপীড়ন, নিষ্ঠুরতা মানব সভ্যতার ইতিহাস ও আদিম সাম্যবাদী সমাজের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।
অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী শক্তির নব উত্থানের আশা প্রকাশ করে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে দেবী দুর্গার যে চেতনা আশরিক শক্তির বিরুদ্ধে, সেই আশরিক শক্তির বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী শক্তির নব উত্থান ঘটুক -এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।
তিনি আরও বলেন, আজকে দেশি-বিদেশি আশরিক শক্তির দাপটে সাম্প্রদায়িক সম্পৃতি বারে বারে আঘাতের সম্মুখিন হচ্ছে। এতে আজকে মাইনরিটিরাই বেশি সাফার করছে। আজকের এই দিনে আমি শ্রদ্ধাভরে স্বরণ করছি, আপনাদের প্রিয় মানুষ, যার সঙ্গে এখানে এক সঙ্গে আসতাম, এক সঙ্গে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতাম -সেই শ্রদ্ধাভাজন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মুকুল বোস, কার্যনির্বাহী সদস্য পারভীন জামান কল্পনা, মেরিনা জামান, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেনগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল, ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিএল চ্যাটার্জী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/২৯–সেপ্টেম্বর–২০১৭ইং/নোমান