muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে ফিরে গেলেও রোহিঙ্গারা আর তাদের জমির মালিকানা দাবি করতে পারবে না

আন্তর্জাতিক রিপোর্ট ।। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরে গেলেও রোহিঙ্গারা আর তাদের জমির মালিকানা দাবি করতে পারবে না। তাদের ফসলের জমি সরকার নিজেই চাষের ব্যবস্থা করবে এবং ফেলে আসা ফসল বিক্রি করে দেবে। মিয়ানমার সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত এবং এ সংক্রান্ত সরকারি পরিকল্পনাপত্রের কিছু অংশ হাতে পাওয়ার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সরকারি কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা কৃষি জমিতে চাষাবাদ পরিকল্পনা করেছেন। এছাড়া হত্যা-নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় তারা ক্ষেতে যেসব ফসল আবাদ করে রেখে এসেছিলেন সেগুলো বিক্রি করে মুনাফার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করতে যাচ্ছে দেশটির কর্মকর্তারা।

এছাড়া মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে কিছু রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ারও পরিকল্পনা করেছে। তবে ওই সব রোহিঙ্গাকে আর তাদের আগে বাড়িঘর বা জমিতে থাকতে দেওয়া হবে না। তাদের জন্য পৃথক ‘আদর্শ গ্রাম’ নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে।

গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতন ও হত্যা-ধর্ষণ থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ৮৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এসব রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্যে ৭১ হাজার ৫০০ একর জমিতে ধান চাষ করেছিল। তাদের ফেলে আসা এই জমিগুলোতে উৎপাদিত ধান বিক্রি করে দেওয়া এবং আগামী জানুয়ারিতে জমিতে নতুন করে আবাদ করার পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার।

নথিতে পাওয়া চার্ট-টেবিল বিশ্লেষণ করে রয়টার্স জানিয়েছে, রাখাইনে ধান চাষের জমিগুলোকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। জাতিগতভাবে ভাগ করা একটি অংশে লেখা হয়েছে জাতীয়তা এবং অপরঅংশে লেখা হয়েছে বাঙালি। প্রসঙ্গত, রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না মিয়ানমার। তাদেরকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী বলে দাবি করে দেশটির কর্মকর্তারা।

রাখাইন রাজ্যের মন্ত্রী কিয়াঅ লিউন সরকারের এই পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে  জানিয়েছেন, মালিকানাবিহীন বাঙ্গালি জমি মোট ৪৫ হাজার হেক্টর। চলতি মাসে সেনা তত্ত্বাবধানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দুই ডজনেরও বেশি সমন্বিত যন্ত্র দিয়ে এসব জমির ফসল কাটবেন এবং এখানে চাষাবাদ করবেন। সরকারি কর্মকর্তাদের হিসেবে এসব যন্ত্র দিয়ে প্রায় ১৪ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে ফসল কাটা সম্ভব। তবে অবশিষ্ট জমির ফসল কীভাবে কাটা হবে তা জানানো হয়নি। কর্মকর্তারা অবশ্য জানিয়েছেন, তারা অতিরিক্ত লোক নিয়োগের মাধ্যমে এসব জমিতে চাষাবাদ করাবেন।

মিয়ানমারে এক একর জমির ধানের বাজার দর ৩০০ মার্কিন ডলার। সেই সুবাদে রোহিঙ্গাদের ফেলে যাওয়া জমির ফসল বিক্রি করে রাজ্য সরকার কয়েক মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করতে যাচ্ছে।

রাখাইন রাজ্য সচিব তিন মাউং সুই টেলিফোনে রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এসব ধান সরকারি গুদামে পাঠানো হবে। আবার এগুলো হয়তোবা সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষদের মাঝে বিতরণ কিংবা বিক্রি করা হবে।

তিনি বলেছেন, ‘ এসব জমি পরিত্যাক্ত। এগুলো চাষবাস করার কেউ নেই। তার সরকার এগুলোতে চাষাবাদের নির্দেশ দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, ‘আপনার সহিংসতা ও নির্যাতনের কারণে যেসব জমির মালিকদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে তাদের ফসলকে আপনি মালিকবিহীন বলতে পারেন না।’

Tags: