muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

২৭ নভেম্বর ১৯৭১, সুনামগঞ্জে ভয়াবহ ‘লাশ টানাটানির যুদ্ধ’ : বীর মুক্তিযোদ্ধা নিছার আহমদ

আজ ২৭শে নভেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলার পার্শ্ববর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে ১৯ জন অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
২৬শে নভেম্বর ১৯৭১, সন্ধ্যায় ৫ নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার (সুনামগঞ্জ) মেজর এম এ মুত্তালিব কতৃক মুক্তিবাহিনীর প্রতি নির্দেশ আসে ২৭শে নভেম্বর এডভান্স করে সুনামগঞ্জ শহর দখল করতে হবে। আমি তখন এই সাব সেক্টরের ‘ডি কম্পানি’র উপ-অধিনায়ক ছিলাম।
এতে হাজারের অধিক মুক্তিযোদ্ধা ২৭ তারিখ ভোর রাতে সুনামগঞ্জ শহর দখলের উদ্দেশ্যে রওনা হই।

এই ব্রিজের উপর পাক বাহিনী ধৃত ৪ সহযোদ্ধাদের ব্রাশফায়ারে হত্যা করে।

সকালে মঙ্গলকাটা, বেরিগাও ও বৈষার পার পর্যন্ত পৌছে মুক্তিযোদ্ধারা পাক সৈন্যদের বাধার মুখে পরে। এসময় তুমুল যুদ্ধে একজন সুবেদার মেজর সহ শতাধিক পাক সৈন্য নিহত হয় ও ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয় (এরমধ্যে ২ জন কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার এবং বাকী সবাই সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার মুক্তিযোদ্ধা)। আর ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা পাক বাহিনীর হাতে ধৃত হয়। যথাক্রমেঃ আবু তালেব, আলী হোসেন, আমসের আলী ও জিন্নত আলী। যুদ্ধে আবুল হাসিম সহ ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।

এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমাদের অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।
এরপর শুরু হয় লাশ টানাটানির যুদ্ধ। এইদিন সন্ধ্যা থেকেই পাকিস্তানি সৈন্যদের লাশ নেয়ার জন্য সুসজ্জিত হয়ে আমাদের উপর আক্রমণ চালায়। বৃষ্টির মতো মেশিনগান ও মর্টার সেল নিক্ষেপ করতে থাকে এবং আমরাও তার পাল্টা জবাব দিতে থাকি। এভাবে সারারাত যুদ্ধ চলে।
পরবর্তীতে ৬ই ডিসেম্বর ভোরে পাক সেনারা সুনামগঞ্জ শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় জয়কলস নামক স্থানে ধৃত ৪ মুক্তিযোদ্ধাকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে।
এই স্থানে আমরা ৪ জন সহযোদ্ধাদের সমাহিত করি।
৯ ডিসেম্বর ১৯৭১, আমরা ‘ডি কম্পানি’ অগ্রগামী দল হিসেবে জয়কলসের দিকে অগ্রসর হই এবং রাতে জয়কলস উজানিগাও হাই স্কুলে ক্যাম্প স্থাপন করি। রাতে নদী থেকে পচা লাশের গন্ধ আসায় স্থানীয় লোকজন জানায় ৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে পাক বাহিনী ৬ তারিখ সকালে ব্রিজের উপর গুলি করে হত্যার পর নদীতে ফেলে রেখে যায়। পরদিন সকালে আমরা বীভৎস লাশ সনাক্ত করে ৪ জন ধৃত সহযোদ্ধাকে নদীর পারে দাফন করি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সহযোদ্ধাদের কবর স্কুল মাঠে পুনরায় সমাহিত করার পর।
২০১৪ সালে আমি আমার যুদ্ধক্ষেত্রে স্মৃতিচারণের উদ্দেশ্যে জয়কলস গেলে জানতে পারি পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার ৪ সহযোদ্ধার লাশ সরকারি ব্যবস্থাপনায় জয়কলস স্কুলের মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পুনরায় সমাহিত করা হয় এবং সরেজমিনে আমি সেই কবর জিয়ারত করে ফিরে আসি।
লেখক :

বীর মুক্তিযোদ্ধা নিছার আহমদ (রতন)
উপ-অধিনায়ক, ডি কম্পানি, ৫ নং সাব সেক্টর সুনামগঞ্জ
সম্পাদক ও প্রকাশক, মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম

মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম /২৭শে নভেম্বর ২০১৭ইং/ নোমান

Tags: