muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

সাহিত্য ও সংস্কৃতি

এপ্রিল ফুল

সাহিত্য ও সংস্কৃতি ।। এপ্রিল ফুল- বাক্যটা মূলত ইংরেজী। অর্থ এপ্রিলের বোকা। এপ্রিল ফুল ইতিহাসের এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। প্রতি বছর পহেলা এপ্রিল এলেই একে অপরকে বোকা বানানো এবং নিজেকে চালাক প্রতিপন্ন করার জন্য এক শ্রেণীর লোকদের বিশেষভাবে তৎপর হয়ে উঠতে দেখা যায়। বলা বাহুল্য যে তারা অপরকে বোকা বানিয়ে নিজেরা আনন্দ উপভোগ করে থাকেন।

দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়- সর্বাধিক দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই যে, সরল প্রাণ মুসলমানগণ ধোঁকা-বাজির করুন শিকারে উপনীত হয়েছিল এইদিন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আজ মুসলিম জাতির এক শ্রেণীর লোকেরা সে ইতিহাস ভুলে গিয়ে এপ্রিলের দিনটিকে স্বাচ্ছন্দে অংশ গ্রহণ করছেন এবং প্রচুর কৌতুক ও রসিকতা উপভোগ করছেন। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই আনন্দ উল্লাস উপভোগ করা হচ্ছে তা যে কত ভয়াবহ, কত নিষ্ঠুর, কত হৃদয় বিদারক, সে কথা ভাবতে অবাক হই, আর দেহ-মন হয়ে উঠে শিহরিয়ে।

৭১১ খৃস্টাব্দ-মুসলিম নৌবহর ভূমধ্য সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে বীরসেনানী নাবিক তারিক ঘোষণা দিয়ে ছিলেন যে, হে মুসলিম বাহিনী তোমাদের সম্মুখে শত্রুসেনা এবং পশ্চাতে ভূমধ্য সাগরের উত্তাল তরঙ্গ মালা, তোমরা কি ভূমধ্য সাগরে ডুবে নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করতে চাও? নাকি অত্যাচারি স্পেনীয় শাসক রডারিকের বিরুদ্ধে জেহাদ করে ইসলামের বিজয় নিশান স্পেনের বুকে উড়াতে চাও। যদি তাই হয় তাহলে সামনে অগ্রসর হও। এই রক্তস্তব্ধ বক্তব্যের পর মুসলমানগণ মহান প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তা’আলার নামে রডারিকের রনসম্ভারে সুসজ্জিত বিশাল বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিল এবং কেড়ে নিয়ে ছিল স্পেন। গড়ে উঠেছিল গ্রানাডার কর্ডোভায় আটশ বছরের আলোড়ন সৃষ্টিকারী সভ্যতা।

কিন্তু-মুসলিম শাসকরা যখন কুরআন ও সুন্নাহর কথা একেবারে ভুলে গিয়ে জন-সাধারণের সুখ-শান্তির মূলে পদাঘাত করে ভোগ বিলাসে মত্ত হয় তখন তারা হারিয়ে ফেলে ইসলামী চেতনা। তাদের এই দুর্বলতার সুযোগে খৃষ্টানরা মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে সুসংগঠিত হতে থাকে এবং ঘোষণা করে যে দুধর্ষ মুসলিম বাহিনীকে যদি হটানো না যায়, তাহলে আগামী দিনগুলোতে ইউরোপের সকল গীর্জা থেকে মুসলমানদের আজান ধ্বনী শোনা যাবে। এই উদ্দেশ্য সফল করার জন্য ‘পর্তুগীজ’ রাণী ‘ইসাবেলা’কে পার্শ্ববর্তী রাজা “ফার্ডিন্যান্ডের” সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়। ফলে উভয়ে নেতৃত্ব দেয় খৃস্টান বাহিনীর। একের পর এক স্পেনের অধিকাংশ এলাকা খৃস্টানদের দখলে চলে যায়। মুসলিম বাহিনী তখন উপায়ন্তর না পেয়ে আশ্রয় নেয় রাজধানী গ্রানাডায়। অবশেষে ফার্ডিন্যান্ড বাহিনীও গ্রানাডার দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছে যায়। মুসলিম বাহিনী তখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় ফার্ডিন্যান্ড ঘোষণা করে যে, “মুসলমানগণ যদি শহরের প্রবেশ দ্বার উম্মুক্ত করে দিয়ে এবং নিরস্ত্র অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করে, তবে তাদেরকে বিনা রক্তপাতে মুক্ত করা হবে”। অসহায় মুসলমানগণ আল্লাহর উপর ভরসা করার কথা ভুলে গিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যুদ্ধ বন্ধ করে দেয়, এবং তাদের আশ্বাস অনুযায়ী মসজিদে আশ্রয় নেয়। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস কুখ্যাত ফার্ডিন্যান্ড মসজিদের চারি পার্শ্বে আগুন লাগিয়ে নৃশংসভাবে হাজার হাজার নিরপরাধ মুসলমানদেরকে হত্যার মাধ্যমে বিশ্বাস ঘাতকতার পরিচয় দেয়, এবং রক্তে রঞ্জিত করে গ্রানাডার রাজপথ, এবং তাদেরকে জোরপূর্বক খৃস্টান বানায়। যে দিন এ সব নির্মম নৃশংসতা কর্মকান্ড করে ছিল, সে দিন ছিল “১লা এপ্রিল ১৪৯২ সাল”। ফার্ডিন্যান্ড সে দিন আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে ছিল “হায় মুসলমান! এপ্রিল ফুল (অঢ়ৎরষ ভড়ড়ষ) তোমরা এপ্রিলের বোকা। স্পেনীয়দের দ্বারা মুসলমানদের ভড়ড়ষ বা বোকা বানানোর এই নিষ্ঠুর বিশ্বাস ঘাতকতা স্মরণীয় রাখার জন্য খৃস্টান জগৎ প্রতি বছর ১লা এপ্রিল এলে রসিকতার খেলা খেলে, যে খেলা আমাদের কাছে বড় করুণ আর বেদনাময়।

আর-আমরা মুসলমানরা উদ্দেশ্য এবং অর্থ না বুঝে প্রতি বছর ১লা এপ্রিল এলেই হৃদয় বিদারক ঘটনাকে চাপা দিয়ে আনন্দ উল্লাসে পরিণত করত: বিজাতীয় সংস্কৃতি পূজা করে চলছি। আসলে আজ আমরা আমাদের স্বর্ণঝরা গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস থেকে বিছিন্ন। আলোচিত “এপ্রিল ফুল” খৃস্টানদের একটি বিশেষ ষড়যন্ত্র যা মুসলমানদের ঐতিহ্যে চরম আঘাত হানে। কেননা ইতিহাস পর্যালোচনা করলে প্রমান হয় যে, তারা মুসলমানদিগের শুধু অত্যাচার নির্যাতন কংকাল সার এবং কাঙ্গালেই পরিণত করেনি বরং তারা কৌশলে আমাদের জাতীয় ইতিহাস ঐতিহ্যে ও আঘাত হানছে দিনের পর দিন। সে কথাও কারো অজানা নয়।

পরিশেষে সকল মুসলমানদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান এই যে, সঠিক ইতিহাস-ঐতিহ্য শিক্ষা করত: প্রচলিত কু-প্রথাকে উৎখাত করুন এবং প্রকৃত ইসলামী আদর্শে উদ্বুদ্ধ জীবন গঠন করুন। তবেই আমরা সত্যিকার মুসলমান হিসেবে বেঁচে থাকার সার্থকতা খুঁজে পাব।
হে আল্লাহ আমাদের সে ক্ষমতা ও তাওফীক দান করুন ॥ আমীন।

 

লেখক : শাহাদাত হোসাইন সাদিক
রায়পুর, লক্ষ্মীপুর।

Tags: