muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

শিক্ষা

জে.এস.সি পরীক্ষা এর প্রয়োজনীয়তা, এস.এস.সি এর নির্বাচনী পরীক্ষার শিক্ষার্থি বাছাই পদ্ধতি এবং শিক্ষার গুণগত ও পরিমাণগত মান বিষয়ে কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনা, মতামত এবং পরামর্শ

মোঃ নজরুল ইসলাম ।। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০১০ খ্রিঃ থেকে জে.এস.সি ও জে.ডি.সি পরীক্ষা শুরু হয়। এ পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকেই সর্বস্তরের জনগনের সর্বজনীন সমর্থন পাওয়া যায়। নিম্ন মাধ্যমিকস্তরে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতার ঝোকও লক্ষ্য করা যায়। জে.এস.সি/জে.ডি.সি পরীক্ষা যখন শুরু হয়, তখন এ পরীক্ষার বিপক্ষে কাউকে কথা বলতে দেখিনি। কিন্তু সময়ে সময়ে এ পরীক্ষার বিপক্ষে কথা বলছেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। বর্তমানে কিছু গবেষক, কিছু শিক্ষাবিদরা বলছেন, এ পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা নেই। বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্যায়নের মাধ্যমেই এ পরীক্ষা নেওয়া উচিত। অর্থাৎ স্কুল পরীক্ষার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থীর মেধা, মান যাচাই করা যায়। তার জন্য আবার বোর্ড পরীক্ষার কি প্রয়োজন ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার, কিছু কিছু শিক্ষাবিদ এবং গবেষকরা বলছেন, এ পরীক্ষায় বিষয় ও নম্বর কমিয়ে আনা দরকার। শুধু অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর বোর্ড পরীক্ষা নেওয়া এবং কমগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর পরীক্ষা স্কুলে নেওয়া অথবা স্কুলভিত্তিক ধারাবাহিক (Continuous Assessment) মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে সার্টিফিকেট দেওয়া। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জে.এস.সি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট জে.ডি.সি পরীক্ষা থেকে নম্বর ও বিষয় কমছে। শিক্ষাবোর্ড গুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটি ৭টি বিষয়ে মোট ৬৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করেছে। বর্তমানে চতুর্থ বিষয়সহ ১০টি বিষয়ে মোট ৮৫০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভায় এ প্রস্তাব করা হয়। বিগত ০৮-০৫-২০১৮ তারিখ মঙ্গলবার উক্ত প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। উক্ত প্রস্তাব দেওয়ার কিছুদিন পূর্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন জে.এস.সি পরীক্ষায় নম্বর কমানো হবে মর্মে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। গণিত, ধর্ম বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আই.সি.টি) বিষয়ে আগের মতো আগের নম্বরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং বাকিগুলোর নম্বর ১০০ করে হবে। চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা ধারাবাহিক মূল্যায়নের অর্ন্তভূক্ত করা হবে। ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ে দুই পত্রে ১০০ করে, ২০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তাব করেছেন উক্ত সাব কমিটি। উক্ত কমিটি অত্যন্ত দক্ষ, অভিজ্ঞ বোর্ডের চেয়ারম্যান স্যারদের এর প্রস্তাব এ মুহূর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সঠিক নয় বলে আমার অভিমত। পাঠ্যসূচীর নম্বর ও বিষয় কমানো বাড়ানোর একটি সময় আছে এবং এ কাজটি করতে হয় সময়মত। কথায় বলে, (Continuous Assessment) সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। ১লা জানুয়ারি থেকে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় এবং ৩১শে ডিসেম্বর শেষ হয়। তাই নম্বর ও বিষয় কমানো বাড়ানোর কাজটি করতে হয় সময়মতো। চার মাস আট দিন অতিবাহিত হওয়ার পর হঠাৎ করে এ ধরনের প্রস্তাব যুক্তিসঙ্গত, মনোবিজ্ঞান সম্মত নয় বলে আমি মনে করি। জে.এস.সি ও জে.ডি.সি পরীক্ষার বিষয় ও নম্বর কমানোর পূর্বে এ বিষয়ে জনমত জরিপে প্রয়োজন আছে এবং জনমত জরিপের কাজ শেষ করার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ কাজটা করা উচিত। বর্তমানে এন.সি.টি.বি তে যারা কাজ করেন তারাই সঠিক সময়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। তাই, বিষয় ও নম্বর কমানোর বিষয়ে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে উক্ত প্রস্তাবের আমি চরম বিরোধীতা করছি। আর যদি এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে নোট, গাইডের প্রকাশকরা নতুন করে বই বের করবে এবং এর বিরূপ প্রভাব শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়বে। বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির প্রস্তাবে বলা হয়েছে ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রের নম্বর ১০০ এবং বাংলা ১ম ও ২য় পত্রের নম্বর হবে ১০০। বর্তমানে ইংরেজি ১ম পত্রে ১০০ ও ২য় পত্রে নম্বর ৫০ এবং বাংলা ১ম পত্রে ১০০ নম্বর ও ২য় পত্রে ৫০। অর্থাৎ দুই বিষয়ে ১০০ নম্বর কমানো হয়েছে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমার প্রশ্ন হল বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, এ ভাষার একটি আন্তজার্তিক স্বীকৃতিও রয়েছে। সাহিত্যের যদি উৎকর্ষ সাধান না করা যায় তাহলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কোথায় হতে শিখবে। ষষ্ট থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যদি গদ্য, পদ্য, সহপাঠ, বাংলা ব্যাকরণ ও বাংলা রচনা বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান অর্জন করতে না পারে, তাহলে তাদের অবস্থা কি হবে। ১১/১১/২০১২ খ্রি. এন.সি.টি.বি এর পরিপত্র অনুযায়ী বাংলা ১ম ও ২য় পত্রে ১৫০ নম্বর করা হয় এবং পাশাপাশি ইংরেজি ১ম ও ২য় পত্রে ১০০ নম্বর করা হয়। কিন্তু এর আগের পাট্যসূচীতে বাংলা ১ম, বাংলা ২য়, ইংরেজি ১ম ও ইংরেজি ২য় পত্রে প্রত্যেক বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হত। অপরপক্ষে, ইংরেজি হচ্ছে একটি আন্তর্জাতিক ভাষা। বাংলা ভাষার পাশাপাশি এ ভাষায় দক্ষতা অর্জন অতি আব্যশক। উচ্চ শিক্ষা লাভ করা, ভাল মানের চাকরি নেওয়া, তথ্য ও প্রযুক্তি বিদ্যার উন্নয়ন, কারিগরি শিক্ষা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষা করা, ব্যবসা-ব্যানিজ্য, চিকিৎসা বিজ্ঞান, গণিত শাস্ত্র, মহাকাশ প্রযুক্তিবিদ্যা, গবেষনা করা। বিজ্ঞান বিষয়ে জ্ঞান অর্জন ইত্যাদি বিষয়ের উন্নতি সাধন করতে হলে ইংরেজি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। তাই ষষ্ট থেকে অষ্টম শ্রেণিতে যদি ইংরেজি বিষয়ে নম্বর সংকোচন করা হয় তাহলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ইংরেজি বিষয়ে কিভাবে জ্ঞান অর্জন করবে। বর্তমানে আমাদের দেশের শিক্ষার মান নিয়ে কথা হচ্ছে। বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে মৌলিকতা নেমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বাংলা ব্যকরণ ও ইংরেজি ব্যকরণে খুবই দুর্বল, খুবই অদক্ষ হয়ে পড়ছে। তাই বিষয় ও নম্বর কমানোর যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন না করে বাংলা ও ইংরেজী বিষয়ে ২০০+২০০ = মোট ৪০০ নম্বর করা হোক। আগের মতোই পরীক্ষা নেওয়া হোক। একটি পরীক্ষা যখন চালু করা হয়, তখন এর সুফলের পাশাপাশি কিছু কুফল বা নেতিবাচক দিক থাকাটা স্বাভাবিক। ২০১০ খ্রিঃ থেকে জে.এস.সি/জে.ডি.সি পরীক্ষা চালু হওয়ার পর স্কুল থেকে ভুয়া সার্টিফিকেট দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ এর আগে দেখা যায়, ম্যানেজিং কমিটির ক্ষমতা বলে, প্রভাবশালী মহলের চাপের মুখে প্রধান শিক্ষককে ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদান করতে বাধ্য করা হতো। অভিযোগ আছে, কতিপয় প্রধান শিক্ষক অনৈতিক উপায়ে অবৈধ বা ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদান করতেন। এমন কি, উক্ত ভুয়া ৮ম শ্রেণির সনদের মাধ্যমে বহুলোক চাকুরীতে কর্মরত আছেন। কিন্তু ২০১০ খ্রিঃ জে.এস.সি/জে.ডি.সি পরীক্ষা চালু হওয়ার পর এ অবৈধ পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। আবার জে.এস.সি/জে.ডি.সি পরীক্ষা চালু হওয়ার আগে আলাদাভাবে ৮ম শ্রেণির জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থি বাছাই করা হতো এবং বাদ বাকি শিক্ষার্থীদের যেনতেনভাবে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা অংশগ্রহণ করে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হতো। উক্ত পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের উপপরিচালকগণের তত্ত্বাবধানে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক পরীক্ষার পাশাপাশি অতিরিক্ত পৃথকভাবে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হত এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৮ম শ্রেণির মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য সমরূপ কোন বৃত্তির প্রচলন ছিল না। প্রতিষ্ঠান প্রধানের জন্য এটা একটা বড় বিড়ম্বনার বিষয় ছিল। সরকারী বিধি মোতাবেক শতকরা ২০ জন শিক্ষার্থী বাছাই করা, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি একটি জটিল ব্যাপার ছিল। জে.এস.সি/জে.ডি.সি পরীক্ষা চালু হওয়ার পর আলাদাভাবে বৃত্তি পরীক্ষা প্রথা বাতিল করা হয় এবং এটি জে.এস.সি/জে.ডি.সি পরীক্ষার একটি যুগান্তকারী ফসল। বিশ্বের একেক দেশে একেক শিক্ষা পদ্ধতি চালু আছে। আমাদের দেশের কিছু কিছু শিক্ষাবিদ, শিক্ষামনোবিজ্ঞানী ও গবেষকরা উন্নত দেশের শিক্ষা পদ্ধতির কথা বলেন এবং সেসব দেশের শিক্ষা পদ্ধতি চালু করার জোড়ালো অভিমত ব্যক্ত করেন। আবার, সময়ে সময়ে বিভিন্ন সরকার শিক্ষার গুণগত মান্নোয়নের জন্য প্রখ্যাত শিক্ষাবিদদের নিয়ে শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা করেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ খ্রিঃ শিক্ষা কমিশন চালু করেন। উক্ত কমিশনে শিক্ষা ব্যবস্থা ৩টি স্তরের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ২০১০ থেকে ২০১৮ খ্রিঃ পর্যন্ত আট বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে এ কমিশন এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তাই, এদেশে স্বাধীনতার আগে বা পরে যে সব শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে, কোন কমিশন পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১০ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার স্তর হবে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত, কিন্তু আজ অবাধি এ কমিশন বাস্তবায়িত হয়নি। শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষা কমিশন এগুলোর বাস্তবায়ন হয় একটি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, কৃষ্টি কালচার ইত্যাদির পরিমাপের উপর ভিত্তি করে। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের চাহিদা অনুযায়ী জে.এস.সি/জে.ডি.সি পরীক্ষা চালু যুগপোযোগী এ ব্যাপারে কারোও দ্বিধা ও দ্বিমত থাকা উচিত নয়। তবে জে.এস.সি/জে.ডি.সি পরীক্ষা চালু হওয়ার পর কোন কোন শিক্ষার্থীরা জে.এস.সি/জে.ডি.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ হতে কোন দিক নির্দেশনা নেই। একটি বড় বিষয় হচ্ছে শিক্ষার গুণগত মান। এ গুণগতমানের কোন নির্দেশনা নেই। তাই ৮ম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীরাই জে.এস.সি/জে.ডি.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে। যে শিক্ষার্থী ৫ বিষয় পর্যন্ত ফেল করে, তারা একাধারে ৩ (তিন) বার এ পরীক্ষা দিতে পারে। এমনকি ইংরেজি, গণিত এ দুটির মধ্যে যারা ১টিতে ফেল করে তারা রেজিষ্ট্রেশনের মেয়াদ নবায়ন করে ৪ (চতুর্থ) বার এ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এ পদ্ধতি এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি পর্যায়ে বর্তমানে চালু আছে। এখন আমি এস.এস.সি পরীক্ষা বিষয়ে আলোকপাত করছি। ২০১৪ খ্রিঃ শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্রে ঘোষনা করা হয়, যে সকল শিক্ষার্থী শতকরা ৭০ দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকবে, সে সকল শিক্ষার্থীরা নির্বাচনি পরীক্ষার অকৃতকার্য হলেও তারা এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। এ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মান অনেকটা নিচে নেমে আসে। প্রজ্ঞাপন জারি করার পর, অনেক অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী ও সাংবাদিকদের পক্ষ হতে এর বিপক্ষে প্রতিবাদ আসলেও কোন কাজ হয় নি। পরবর্তীতে ২০১৫ খ্রিঃ আবারও প্রজ্ঞাপণ জারি করা হয়। নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। যে সকল শিক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবে, তারা এস.এস.সি পরীক্ষায় ফরম পূরণ করতে পারবে না। উক্ত পরিপত্র ঘোষনা করার পর দেখা যায়, আগের পদ্ধতিতেই অর্থাৎ পূর্বের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এস.এস.সি পরীক্ষার শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়। কিছু কিছু স্কুলে যখন নতুন প্রজ্ঞাপনের কথা বলা হয়, তখন ম্যানেজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ এ প্রজ্ঞাপনের কথা মানতে নারাজ। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষকবৃন্দকে অবমূল্যায়ন, লাঞ্চিত ও অপমানিত করা হয়। বর্তমানে ম্যানেজিং কমিটি/গভর্ণিং বডির সদস্যবৃন্দ একাডেমিক, প্রশাসনিক, সকল কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপ করছে। তাই ম্যানেজিং/গভর্ণিং কমিটির ক্ষমতা খর্ব করা অতি জরুরী। আমি উক্ত কমিটির বিরোধীতা করছি না। তাদেরকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, এগুলো সংকুচিত করা অতি প্রয়োজন । এখন প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ, সহকারী প্রধান শিক্ষক, উপাধ্যক্ষ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী নিয়োগ তাদের হাতে রয়েছে। এ নিয়োগগুলো অতিদ্রুত সরিয়ে নেওয়া উচিত। কোন শিক্ষককে স্থায়ী বা সাময়িক বরখাস্ত, সভাপতিকে বিলে স্বাক্ষর, সভাপতির কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষকে ছুটি নেওয়া এগুলো চরম অসম্মানজনক ও অপমানজনক। তাই এসব ক্ষমতা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অথবা মাননীয় সংসদ সদস্যদের দেওয়া হোক। আবার বিগত ২০১৮ খ্রি: শিক্ষামন্ত্রনালয় কর্তৃক একটি পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রে উল্লেখ করা হয় এস.এস.সি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস রোধে ২০১৯ খ্রিঃ থেকে যে সকল শিক্ষার্থি নির্বাচনী পরীক্ষায় ১ (এক) বিষয়ে ফেল করবে, তাদেরকে এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সম্বন্বয়ে এস.এস.সি নির্বাচনী (Test) পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং UNO স্যারের মাধ্যমে নির্বাচনী পরীক্ষার ফল ঘোষনা করা হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এ পরীক্ষা পদ্ধতি কি বাস্তবায়িত হবে ? আর যদি এ পদ্ধতি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে এর বিপক্ষে অনেক যুক্তি আছে। এ যুক্তিগুলো উর্ধ্বত্বন কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।

১. সকল পাবলিক পরীক্ষা গ্রেডিং পদ্ধতিতে রেজাল্ট দেওয়া হয়। কোন শিক্ষার্থী যদি এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করে, তাহলে সে ফেল করা বিষয় বা বিষয়গুলো ২য় বার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতকার্য হয়।
প্রথমত: একজন শিক্ষার্থি এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।

২. নির্বাচনি পরীক্ষা দেওয়ার পর একজন শিক্ষার্থী পরবর্তিতে আরও তিন মাসের মত পড়াশোনা করার সুযোগ পায়। গবেষনায় দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থী পরবর্তী তিন মাস অধ্যয়ন করে অনেক অগ্রগতি সাধন করতে পারে। একজন শিক্ষার্থী উক্ত সুযোগ হতে বঞ্চিত হবে।

৩. গবেষনায় দেখা যায় নির্বাচনি পরীক্ষায় অনুত্তীর্ন ২০ জন শিক্ষার্থীকে বিশেষ বিবেচনায় এস.এস.সি পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে উক্ত বিশ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ জন অথবা তার কম বা বেশি শিক্ষার্থী বিভিন্ন গ্রেডে এস.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এখন আমার মতামত হচ্ছে প্রশ্ন ফাঁস রোধের নামে এস.এস.সি নির্বাচনী পরীক্ষায় শিক্ষার্থিরা যদি এক বিষয়ে ফেল করে, তাহলে তাদেরকে আটকিয়ে রাখা কি যুক্তিসঙ্গত, মনোবিজ্ঞান সম্মত হবে ?

আমার পরামর্শ হচ্ছে, নির্বাচনী পরীক্ষায় এক বিষয়ে যে সকল শিক্ষার্থী ফেল করে, তাদেরকে বিশেষ বিবেচনায় এস.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সুযোগ করে দেওয়া হোক। এ পরামর্শ ব্যক্ত করে, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রনালয়, সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ, শিক্ষাবিদ, গবেষক, শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীসহ সকল স্তরের মানুষের দৃষ্ঠি আর্কষন করে আমার এ ক্ষুদ্র লেখা শেষ করছি।

 

লেখক : মোঃ নজরুল ইসলাম
প্রধান শিক্ষক
দিগদাইড় ইউনিয়ন মডেল হাই স্কুল
শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক, ২০১৮ খ্রি. ও
সভাপতি
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি উপজেলা শাখা
তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ।

Tags: