muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

রাজনীতি

বিএনপি নেতারা আত্মসমর্পণ করেছেন : বি চৌধুরী

বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, সিলেটে গত ২৪ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সমাবেশে বিএনপি নেতারা শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম না নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাড্ডায় বিকল্প যুবধারার বিশেষ কাউন্সিলে এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার প্রাক্তন পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও বিএনপির প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, ছাত্রদলের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি ও প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন ও বিশিষ্ট শিল্পপতি প্রকৌশলী শফিকুর রহমান বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক বি চৌধুরীর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিকল্পধারায় যোগ দেন।

বি চৌধুরী বলেন, সিলেটের জনসভায় ৯৮ ভাগ মানুষ ছিল বিএনপির, বাকি দুই ভাগ ছিল অন্যদের। সেই সমাবেশে অন্য দলের নেতারা স্বাভাবিক কারণেই শ্রদ্ধার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম স্মরণ করেছেন সত্তর থেকে আশি ভাগ। ধন্যবাদ, যিনি এই দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাকে স্মরণ করেছেন নেতারা, এটা স্বাভাবিক। বিএনপির নেতারা শহীদ জিয়ার নামটি নেননি। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা যিনি দিলেন, তার নামটি কেউ বলতে সাহস পাননি। কী মনে হয়? তারা কী আত্মসমর্পণ করেছেন। কার কাছে? কেন? এ দুটি প্রশ্ন জনগণের মনে থেকে যাবে।

বি চৌধুরী বলেন, বিএনপির নেতারা উচ্চারণ করেননি ভাসানীর নাম। কেউ উচ্চারণ করেনি। তারা শেরেবাংলার নাম উচ্চারণ করেনি, কেউ না, কেউ না। উচ্চারণ করেনি কৃষকের মুক্তির সাধক শেরেবাংলার নাম। স্বাধীনতার বীর সিপাহসালার ওসমানীর নাম উচ্চারণ কেউ করল না। তাদের কথা বলা উচিৎ ছিল না? কেন বলেন নাই আপনারা? জবাব দিতে হবে, কেন বলেন নাই, কেন বলেন নাই? আপনারা সত্যিই যদি মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করে থাকেন, আপনাদের যদি সত্যিই স্বপ্ন ছিল এই রঙিন পতাকাকে সম্মান দেখানোর, কিন্তু দেখান নাই।

যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নও বাস্তবায়ন চাই। মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা ফজলুল হকের স্বপ্নও বাস্তবায়ন করব। আমরা উন্নয়ন চাই, গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ চাই।

বি চৌধুরী বলেন, ড. কামাল হোসেন চুক্তি ভঙ্গ করেছেন। আমরা ১৩ অক্টোবর তার দাওয়াতে বাসায় গিয়েছিলাম, কিন্ত তিনি বাসায় ছিলেন না। এমনকি তার কোনো লোকও বাসায় ছিল না, তার ঘরের দরজা বন্ধ ছিল। তিনি যেভাবে চুক্তি ভঙ্গ করলেন, তাতে আমামা আঘাত পেয়েছি। আমরা অসত্য ও ভ্রান্তির সঙ্গে কোনো চুক্তি করি না।

বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে নাই। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে নাই বলেই জোট ছেড়ে অনেকে বেরিয়ে এসেছে। আমরা জিয়াউর রহমানের রাজনীতির পক্ষে লড়াই করব। তার রাজনীতির উত্তরাধিকার আমাদের হাতে। উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করব। সেই উন্নয়নের পাশাপাশি গণতন্ত্রও থাকবে।

বি চৌধুরী ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এখনই বাতিল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনি বঙ্গবন্ধুকন্যা, সাহসের সঙ্গে অবিলম্বে এই আইন বন্ধ করুন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে বি চৌধুরী বলেন, ‘আলোচনা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও সমাধান হয় না। আপনার কাছে দাবি করছে, আপনি বঙ্গবন্ধুকন্যা, এটাই সবচেয়ে বড়। আপনি উদার চিত্তে এগিয়ে আসেন। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে সব দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করুন।’

গণগ্রেপ্তারর বন্ধ করারও আহ্বান জানান প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

বিএনপির সঙ্গে ঐক্য না হওয়ার কারণ জানিয়ে বি চৌধুরী বলেন, ‘আমি বিএনপিকে বলেছিলাম, আপনারা ১৭৫টি আসন নিন, বাকি সব দলের জন্য ১২৫টি আসন। আমি তো বলিনি বিকল্পধারাকে ১২৫ আসন দিতে হবে। এই ভারসাম্য যারা অস্বীকার করে, তাদের সঙ্গে কীসের ঐক্য। আমরা ভারসাম্যের রাজনীতি চাই।

যোগদান অনুষ্ঠানটিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আজকে এই অনুষ্ঠানে আসায় স্বাভাবিক প্রশ্ন আসবে, ঠিক তিন বছর আগে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর কেন আজকে আবার রাজনীতিতে ফিরলাম? কেন একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করলাম?’

শমসের মবিন বলেন, অত্যন্ত পরিচিত, সাহসী, জাতীয়তাবাদী ধারার রাজনীতি প্রসারিত করতে যার অবদান আছে, তিনি হলেন বি চৌধুরী ।

অবসর থেকে ফেরা প্রসঙ্গ টেনে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি যখন রাজনীতি থেকে অবসর নেই, একটা কথা তখন উল্লেখ করেছিলাম- শারীরিক সুস্থতা সাপেক্ষে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সামনে রেখে যদি দেশ ও জাতির জন্য কোনো ধরনের অবদান রাখার সুযোগ আসে, ভূমিকা রাখার সুযোগ পাই, তাহলে নিজেকে আমি সেই কাজে সম্পৃক্ত করব। সেই প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় আজকে বিকল্পধারায় যোগ দিলাম।’

এ প্রসঙ্গে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আমি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে, সাহসী নেতৃত্বে, দেশপ্রেমীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতিতে আস্থা রেখে, বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আজ আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। আগামীতে বাংলাদেশকে একটি সুখী, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নিজের অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখব।’

শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দম্ভের রাজনীতি দেখতে চায় না। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নাশকতার রাজনীতি দেখতে চায় না। এই নাশকতা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হোক বা লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হোক। এই নাশকতা বাংলাদেশের বর্তমান প্রজন্ম দেখতে চায় না।’

‘একত্রিত হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বাংলাদেশের জন্য কী করতে পারি, সেই চেষ্টা করব। আমাদের এই যাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি বি চৌধুরী,’ বলেন প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন।

শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, আমি প্রতিশ্রুতি দিতে পারি, আমার সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যদি একটু অবদান রাখতে পারি এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, যাদের কথা মাথায় রেখে আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলাম।’

২০ দলীয় জোট ছেড়ে আসা ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বলেন, সত্যিকার অর্থে ভারসাম্যের রাজনীতি শুরু করেছেন বি চৌধুরী। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে একটি দল। যারা জিয়ার দলকেও ধ্বংস করতে চায়।’

অনুষ্ঠানে হামদুল্লাহ মেহেদীর বিএনপি জোট ছেড়ে আসার বিষয়টি উল্লেখ করে মাহী বি চৌধুরী কাউন্সিলে বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধীদের ২০ দলীয় জোট ছেড়ে এসেছেন লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ মেহেদী।’

অনুষ্ঠানে কথা বলেন সদ্য বিকল্পধারায় যোগদানকারী প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী গোলাম সারোয়ার মিলন, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তুজা, বিএলডিপির চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন আল আজাদ, লেবার পার্টির একাংশের মহাসচিব হামদুল্লাহ মেহেদি প্রমুখ।

বি চৌধুরীর বক্তব্যের আগে সদ্য যোগ দেওয়া শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার মিলন, জেবেল রহমান গাণি, এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তুজা বক্তব্য দেন।

শুক্রবার সকালের অধিবেশনে বিকল্প শ্রমজীবী ধারার কাউন্সিলে আইনুল হক সভাপতি এবং আরিফুল হক সুমন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সংগঠনের ৮১ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে।

বিকেলে যুবধারার কাউন্সিলে সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক আসাদুজ্জামান বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম মোস্তফা সারোয়ার নির্বাচিত হয়েছেন।

Tags: