muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

আন্তর্জাতিক

উদ্বেগের ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল’ লোকসভায় পাস

ভারতজুড়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যেই লোকসভায় পাস হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)। সোমবার  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিল উত্থাপন করলে এর পক্ষে ভোট পড়ে ২৯৩টি। আর বিপক্ষে পড়ে ৮২টি।

এর আগে ভারতে বিরোধী দলের আপত্তি এবং উত্তর-পূর্বে ব্যাপক বিক্ষোভকে উপেক্ষা করেই সোমবার লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিলটি সংখ্যালঘুদের বিপক্ষে নয়, এমনটি স্পষ্ট করে এরপর উত্থাপন করেন অমিত শাহ।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিরোধীদের প্রতিবাদের জবাব দিতে গিয়ে কংগ্রেসকে উদ্দেশ্য করে করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ  বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ করেছে কংগ্রেস। আমরা নই। বিদেশে অত্যাচারিত হচ্ছেন হিন্দু-সহ অন্যান্য ধর্মের মানুষ। ভারত সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তা পেলেও পাকিস্তান ও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হয়নি। তাই এই বিল আনতে হয়েছে।

তবে এ নিয়ে প্রতিবাদে সরব বিরোধী শিবির। বিলটিকে বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির কৌশল বলে মন্তব্য করছেন বিরোধীরা। লোকসভার কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, প্রশাসন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সংখ্যালঘুদের দিকে নজর দিয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, এখন এটি আইনে পরিণত হতে হলে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অনুমোদন পেতে হবে। তবে সেখানে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তা পাস হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বিলের বিরোধিতায় তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘৩৭০ ধারা বিলোপের সময় বলা হয়েছিল এক দেশ-এক সংবিধান। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ত্রিপুরার অনেক জায়গাকে অন্তর্ভক্ত করা হয়নি। এই বিল বিভাজনের উদ্দেশ্য করা হচ্ছে, যা সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারার পরিপন্থী।’

‘আজ আমাদের কেন বিল প্রয়োজন হচ্ছে? কারণ স্বাধীনতার পর ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ না করলে আজ আমাদের এই বিল আনতে হত না। কংগ্রেস আসলে দেশভাগ করেছিল ধর্মের ভিত্তিতে।’ বলেন অমিত শাহ।

আগামী ১১ই ডিসেম্বর সরকারপক্ষ এই বিল রাজ্যসভায় পেশ করতে পারে। উল্লেখ্য, ১৩-ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। চলতি অধিবেশনেই সংসদে ক্যাব পাস করাতে মরিয়া কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি।


নাগরিকত্ব সংশোধনী ২০১৯ বিলে যা আছে

নাগরিকত্ব বিলে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সংশোধন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিষ্টান অবৈধ অভিবাসীদের যাতে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া যায়, সে কারণেই এই সংশোধনী। বর্তমান আইনে কোনও অভিবাসী ১২ মাস টানা ভারতে বাস করার পর, এবং বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে বাস করার পর নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করতে পারেন। এই সংশোধনী অনুসারে, উক্ত তিনটি দেশ থেকে আসা ওই নির্দিষ্ট ৬টি ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে ১১ বছরের সময়সীমা কমিয়ে ৫ বছর করবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

তবে এই বিলে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি জমানো মুসলিমদের ব্যাপারে কোনও কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।

লোকসভায় এ বিল প্রথমবার পেশ হয় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই। সে বছরের ১২ অগাস্ট বিল পাঠানো হয় যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। কমিটি তার রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। পরের দিন, ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি লোকসভায় সে বিল পাশ হয়। ষোড়শ লোকসভা অধিবেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়ে সরকার এ বিল রাজ্যসভায় আনার জন্য অতি তৎপর হয়ে ওঠে। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেওয়ায় সরকার সংযত হয় এবং ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভা সিনে ডাই হয়ে যায়। বিল আর পেশ করা হয়নি। সংসদের কার্য প্রণালী অনুসারে লোকসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্য সভায় পেশ না হলে তামাদি হয়ে যায়। সে নিয়ম অনুসারে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বিলটি খারিজ হয়ে যায়।

এ বিল নিয়ে প্রধান আপত্তির বিষয় হল এখানে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের টার্গেট করা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদে যে সমতার অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে, এ বিল তার পরিপন্থী। তবে সরকারের বক্তব্য, মুসলিম প্রধান বিদেশে যেসব সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় কারণে হিংসার শিকার হন তাঁদের নাগরিকত্বদানই এ বিলের লক্ষ্য।

এর আগে বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) প্রস্তাবিত বিলটি অনুমোদন পেয়েছিল ভারতীয় মন্ত্রিসভায়। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সরকারপক্ষ এই বিল রাজ্যসভায় পেশ করতে পারে। বিলটি ঘিরে ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো। এই বিলের ফলে বহুসংখ্যক অবৈধ বসবাসকারী নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছে রাজ্যগুলো।

এছাড়া সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, বিলটি পাস হওয়ার কারণে পাল্টে যাবে দেশের জনবিন্যাসের ধরন। কমে যাবে কাজের সুযোগ। একইসঙ্গে হ্রাস পাবে নিজস্ব সংস্কৃতিও।

আসামে বিতর্কিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা বাস্তবায়ন করে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার সেখানকার ১৯ লাখ মানুষকে নাগরিকত্ব তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এই বাদ পড়াদের অধিকাংশ বাংলা ভাষাভাষি মুসলিম এবং অনেকেই বাংলাদেশি। তবে অন্য ধর্মেরও অনেক অনুসারী এই তালিকায় ঠাঁই পাননি।

Tags: