muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

Uncategorized

মোস্তফা কামালকে বঞ্চিত করে শ্রীনির ‘প্রতিশোধ

kamal
বিশ্বকাপ ফাইনালে না থেকেও থাকতে পারত বাংলাদেশ। এমসিজির মঞ্চে শুধু একজন মানুষের উপস্থিতিতেই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ফাইনালে থাকত বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব।

কিন্তু তা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিতই করা হলো। আইসিসির সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়ার কথা থাকলেও কাল কিনা সেটি দিলেন তাঁর অধস্তন আইসিসির চেয়ারম্যান এন শ্রীনিবাসন!
বিশ্বকাপের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রের বদলে যাওয়া নিয়ে আছে দুই রকম বক্তব্য। আইসিসির একটি সূত্রে জানা গেছে, আইসিসি আরও পাঁচ-ছয় মাস আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিল মুস্তফা কামালের হাত দিয়ে বিশ্বকাপের ট্রফি দেওয়া হবে না। বিষয়টা নাকি জানানো হয়েছিল বিসিবির শীর্ষ পর্যায়কেও। যদিও বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী কাল মুঠোফোনে বললেন, ‘এ রকম কিছু আমার জানা নেই।’ পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে মুস্তফা কামালের অনুপস্থিতির সবচেয়ে আলোচিত ব্যাখ্যাটি হলো বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের আম্পায়ারিং নিয়ে তাঁর প্রতিবাদী হয়ে ওঠা। ১৯ মার্চের কোয়ার্টার ফাইনালে বাজে আম্পায়ারিংয়ের সমালোচনা করাতেই নাকি শ্রীনিবাসনের চক্ষুশূল হয়েছেন বিসিবির সাবেক এই সভাপতি! তিনি নিজেও দিয়েছেন সে রকম ইঙ্গিত। কাল মেলবোর্ন থেকে মুঠোফোনে মুস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘আইসিসির সভাপতি হলেও আমি বাংলাদেশের মানুষ। দেশের প্রতি আমার মমত্ববোধ আছে। দেশের ক্রিকেটের বিরুদ্ধে কোনো চক্রান্ত হতে দেখলে আমাকে সেটির বিরুদ্ধে কথা বলতেই হবে।’
আসল কারণ যেটাই হোক, সভাপতির হাত দিয়ে ট্রফি না দিয়ে আইসিসি গঠনতন্ত্র ভঙ্গের কাজই করেছে। মুস্তফা কামালই জানিয়েছেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আইসিসি আয়োজিত যেকোনো আন্তর্জাতিক ইভেন্টের ট্রফি দেওয়ার অধিকার সভাপতির।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও বিষয়টি সেভাবেই এসেছে। এবিপি নিউজ ব্যুরো লিখেছে, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়কের হাতে ট্রফি তুলে দিয়ে আইসিসির গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করেছেন শ্রীনিবাসন। নিয়মানুযায়ী ট্রফি দেওয়ার অধিকার ছিল আইসিসি সভাপতি মুস্তফা কামালের। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারও একই দাবি, ‘প্রথা অনুযায়ী আইসিসি সভাপতিরই চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়কের হাতে বিশ্বকাপের ট্রফি তুলে দেওয়ার কথা।’
আইসিসির অন্য একটি সূত্রের তথ্য, আম্পায়ারদের সম্পর্কে মুস্তফা কামালের বক্তব্য নিয়ে আলোচনার জন্য গত শনিবার আইসিসির জরুরি সভা ডাকা হয়। ওই সভার পরই বদলে যায় বিশ্বকাপের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের ‘চিত্রনাট্য’। সভায় বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসানসহ আরও দু–একজন পরিচালক অনুপস্থিত থাকলেও যাঁরা ছিলেন তাঁরা সবাই আইসিসি সভাপতির বিপক্ষে অবস্থান নেন। আম্পায়ারিং নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনার ব্যাখ্যা চাওয়া হয় তাঁর কাছে। বক্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য দেওয়া হয় চাপ। কাল বিষয়টা জানতে চাইলে বিস্তারিত বলতে চাননি মুস্তফা কামাল, ‘আমাকে শুধু বলা হয়েছে আম্পায়ারিং নিয়ে কোনো মতামত থাকলে আমি যেন সেটা আইসিসির পরবর্তী সভায় লিখিতভাবে জানাই।’ কেন তাঁকে দিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি প্রদান করা হলো না—সে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘আমি দেশের ও ক্রিকেটের স্বার্থের পরিপন্থী কোনো কাজ করিনি। সে জন্যই হয়তো ট্রফি দিতে পারিনি।’ মেলবোর্ন থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে দু-চার দিনের মধ্যেই দেশে ফেরার কথা তাঁর। দেশে ফিরে আইনজীবীদের পরামর্শ অনুযায়ী এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন। ঠিক করবেন পরবর্তী করণীয়ও। আইসিসির সভাপতি হিসেবে মুস্তফা কামালের মেয়াদ আছে আর তিন মাস।
সভাপতি কেন বিশ্বকাপের ট্রফি দিতে পারলেন না, সে ব্যাপারে আইসিসির কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নেই। তবে জানা গেছে, সম্ভাব্য বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতেই মঞ্চে তোলা হয়নি মুস্তফা কামালকে। আম্পায়ারদের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগটাকে প্রকারান্তরে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগই মনে করছেন আইসিসির অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারা। তিনি থাকলে সেটির প্রতিবাদে ফাইনালের ম্যাচ অফিশিয়ালরা পুরস্কার নিতে মঞ্চে নাও উঠতে পারেন, এমন শঙ্কায় নাকি ছিল আইসিসি।
পরিবর্তিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আইসিসি সভাপতির পদটি আলংকারিক। যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা চেয়ারম্যানের হাতে। তার পরও বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে দেওয়ার অধিকার সভাপতির। যেকোনোভাবেই হোক, সেটা মুস্তফা কামালের হাত থেকে কেড়েই নেওয়া হয়েছে। শ্রীনিবাসন এখনো আইসিসি চেয়ারম্যানের পদ আঁকড়ে থাকলেও দুর্নীতির অভিযোগে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড প্রধানের পদ থেকে তাঁকে আগেই সরিয়ে দিয়েছেন সে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বিসিসিআইর নতুন সভাপতি হয়েছেন সাবেক আইসিসি সভাপতি জগমোহন ডালমিয়া।
আইসিসি সভাপতি থাকাকালে ১৯৯৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে এই ডালমিয়াই ট্রফি তুলে দেন চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর হাতে। এর আগে ১৯৯২ বিশ্বকাপে ইমরান খান ও তাঁর দলকে ট্রফি দিয়েছিলেন তখনকার আইসিসি সভাপতি কলিন কাউড্রে। গত বিশ্বকাপে এ কাজটি করেন আইসিসির তৎকালীন সভাপতি শারদ পাওয়ার। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পাকিস্তানের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো অর্জুনা রানাতুঙ্গার হাতে ট্রফি তুলে দিলেও সেটা ছিল ব্যতিক্রম। চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক বিশ্বকাপের ট্রফি নেবেন আইসিসি সভাপতির হাত থেকে, এটাই প্রথা। মেলবোর্নে এবার সে প্রথা ভেঙে যেন মুস্তফা কামালের ওপর ‘প্রতিশোধ’ই নিলেন ভারতের শ্রীনিবাসন।
১৯ মার্চ মেলবোর্নের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। ম্যাচে ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মার আউট হওয়া বলে ‘নো’ ডাকাসহ আম্পায়ারদের বেশ কয়েকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত যায় বাংলাদেশের বিপক্ষে। এ নিয়ে সাধারণ ক্রিকেট সমর্থক থেকে শুরু করে বড় বড় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ, এমনকি সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটাররাও আম্পায়ারিংয়ের সমালোচনা করেছেন। আম্পায়ারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুস্তফা কামালও। কাল মেলবোর্নের আলোকিত মঞ্চে তাঁর অনুপস্থিতির সবচেয়ে বড় কারণ মনে করা হচ্ছে আইসিসি সভাপতি হয়েও দেশের পক্ষে নেওয়া ওই অবস্থানটাকেই।

Tags: