muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

রাজনীতি

সালাহ উদ্দিনের সন্ধান মিললো যেভাবে

salah+uddin+north+east+today.
গত ১০ মার্চ অচেনা এক দল লোক উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার পর থেকে আর কিছুই মনে করতে পারছেন না বলে দাবি করেছেন তিনি।

সিলেট সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বের শিলংয়ে কিভাবে এলেন, তাও বলতে পারেননি ৫৪ বছর বয়সী বাংলাদেশে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য।

সন্দেহজনক আচরণের জন্য সোমবার সকালে শিলং পুলিশ আটকের পর সালাহ উদ্দিন নিজেকে বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দাবি করেন। তখন মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তাকে হাসপাতালে পাঠায়।

মানসিকভাবে সুস্থ আছেন বলে চিকিৎসকরা জানালে সালাহ উদ্দিনকে সরকারি অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করে পুলিশ। অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের জন্য তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে পুলিশ।

সালাহ উদ্দিন এখন পুলিশ হেফাজতে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ফলে মামলা করলেও তাকে এখনি জিজ্ঞাসাবাদ করার সুযোগ পাচ্ছে না পুলিশ।

হাসপাতাল স্থানান্তরের সময় সালাহ উদ্দিন বলেন, “হ্যাঁ, আমিই বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন। আমাকে উত্তরা থেকে অচেনা একদল লোক তুলে নিয়েছিল।”

“আমি জানি না, আমি কিভাবে এখানে এলাম। অপহরণের পর থেকে আর কিছুই মনে করতে পারছি না,” বলেন তিনি।

সালাহ উদ্দিন মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় স্ত্রী হাসিনা আহমেদকে টেলিফোন করলে তার সন্ধান মেলার খবরটি বাংলাদেশেও জানাজানি হয়। স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে তিনি শিলং রওনা হওয়ার প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন।

বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধের মধ্যে গোপন স্থানে থেকে বিবৃতি দিয়ে আসা সালাহ উদ্দিনকে গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয় বলে তার পরিবার দাবি করে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে বিএনপির ইঙ্গিত এবং সরকারের তা অস্বীকার, সেইসঙ্গে বিএনপির ‘ভেতরকার বিষয়’ বলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে দুই মাস ধরেই আলোচনায় ছিলেন সালাহ উদ্দিন।

মঙ্গলবার দুপুরে আচমকা হাসিনা আহমেদ স্বামীর টেলিফোন পাওয়ার কথা জানালে সারাদেশে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, সালাহ উদ্দিন তার বেঁচে থাকার খবর জানিয়ে দ্রুত তা গণমাধ্যমে জানাতে বলেন।

শিলং পুলিশের সুপার বিবেক শ্যাম বলেন, সোমবার সকালে শহরের গলফ লিংক এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরার সময় ৫৪ বছর বয়সী এক বাংলাদেশিকে তারা গ্রেপ্তার করেন। তার কাছে ভারতে ঢোকার কোনো কাগজপত্র ছিল না।

তখন পুলিশ জানত না যে তারা বাংলাদেশের সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রী ও আইনপ্রণেতাকে আটক করেছে। সালাহ উদ্দিন নিজেকে বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দাবি করলে তা নিয়ে পুলিশের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

তখন পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে মেঘালয় ইনস্টিটিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সে (এমআইএমএইচএএসএস) পাঠায়।

পুলিশ কর্মকর্তা মারিয়াহোম খাড়করাঙ বলেন, “আটকের পর যথকন আমরা তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করি, তখন তার কথা-বার্তা ছিল অসংলগ্ন। তাই তাকে এমআইএমএইচএএসএসে পাঠানো হয়। তবে চিকিৎসকরা জানায় যে তার মানসিক কোনো সমস্যা নেই।”

এমআইএমএইচএএসএস কর্মকর্তারা বলেন, সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তাকে পুলিশ নিয়ে এসেছিল।

“আমরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম। তার শারীরিক কিছু সমস্যা থাকলেও মানসিক অসুস্থতার কোনো লক্ষণ পাইনি,” বলেন ওই হাসপাতালের এক কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ওই ব্যক্তির (সালাহ উদ্দিন) সঙ্গে কোনো মোবাইল ফোন ছিল না। তিনি বাংলাদেশে তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাকে টেলিফোন করার সুযোগ দেওয়া হয়।

সালাহ উদ্দিনের ফোন মঙ্গলবার দুপুরে পান হাসিনা, তখন তিনি মেয়েকে নিয়ে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে গাড়িতে ছিলেন।

“এএমআইএমএইচএএসএসের এক নারী কর্মী জানান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ কথা বলতে চান। আমি বলি, আমি তার মিসেস বলছি। এরপরই টেলিফোনে উনার কণ্ঠ ভেসে আসে।… ‘কেমন আছ হাসিনা। আমি সালাহ উদ্দিন বলছি। আমি বেঁচে আছি। আমাকে এখানে ফেলে গেছে। দ্রুত বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানাও’।”

স্বামীর খোঁজ চেয়ে উচ্চ আদালতেও গিয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা। সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে পাওয়া গেল কি-না সে বিষয়ে নিয়মিত অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়ে হাই কোর্ট গত ১২ এপ্রিল আবেদনটি নিষ্পত্তি করে দেয়।

এর মধ্যে ১৯ মার্চ ও ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে দুই দফা স্মারকলিপি দিয়ে আসেন হাসিনা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

মঙ্গলবার স্বামীর ফোন পাওয়ার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে তার গুলশানের বাসায় যান সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী। প্রায় ৪৫ মিনিট পর তিনি নিজের বাসায় ফিরে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি জানাচ্ছি, ইনশাল্লাহ আমার স্বামী বেঁচে আছেন। তিনি মেঘালয়ের একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

“আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। সবার সহযোগিতা চাই।”

সেটি যে সালাহ উদ্দিনেরই কণ্ঠ ছিল- সে বিষয়ে নিশ্চিত কি-না জানতে চাইলে হাসিনা আহমেদ বলেন, “আমি আমার স্বামীর কণ্ঠ চিনি। ১০০ বছর পর হলেও তার কণ্ঠ আমি চিনবই।”

এদিকে সালাহ উদ্দিনের মানসিক সুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর এমআইএমএইচএএসএস মঙ্গলবার বিকালে তাকে শিলং সিভিল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে এখন পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তা মারিয়াহোম খাড়করাঙ বলেন, “আমরা তার (সালাহ উদ্দিন) সঙ্গে খুব বেশি কথার বলার সুযোগ পাইনি। তিনি যেহেতু নিজেকে বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দাবি করেছেন, তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা যাচাই করতে বাংলাদেশ হাই কমিশনে যোগাযোগ করছেন।”

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন। ২০০১ সালে জোট সরকারে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। তার স্ত্রী হাসিনা ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য ছিলেন।

Tags: