মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত। এবার শোলাকিয়ায় ১৯৫তম ঈদুল ফিতরের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার (৬ এপ্রিল) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে আয়োজিত শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে মোবাইল ফোন নিয়ে মাঠে যেতে পারবেন না কেউ।
ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবারো নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে শোলাকিয়ার জামাত আয়োজন করা হবে। সকাল ১০টায় জামাত শুরু হবে। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। জামাতে জায়নামাজ ও মাস্ক ছাড়া আর কিছু সঙ্গে না আনতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, দীর্ঘদিন ধরে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত না হওয়ায় মানুষের মনে আক্ষেপ ছিল। এবার আর সেই আক্ষেপ থাকবে না। এবারও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসল্লিদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে। মাঠ ও শহরকে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
সভায় পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সদর) ও মাঠ কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, র্যাব-১৪ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর শাহরিয়ার মাহমুদ খান, পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আয়োজন করা হবে ঈদের জামাত। পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। পুরো মাঠ ও আশপাশ সিসি ক্যামেরার আওতার মধ্যে থাকবে। তাছাড়া প্রত্যেক মুসল্লিকে কমপক্ষে চার ধাপের নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হবে। কেউ মোবাইল ফোন নিয়ে মাঠে যেতে পারবেন না।
প্রসঙ্গত, ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ জঙ্গি হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। কিন্তু তারপরও ভাটা পড়েনি এ ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামাতে মুসল্লিদের সমাগমে। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি।
জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।