প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা থেমেছে শনিবার মধ্যরাতে। প্রচার-প্রচারণা শেষে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। অপেক্ষা শুধু ভোটগ্রহণের। আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে প্রতিটি কেন্দ্রে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সামগ্রী পৌঁছানোর কাজ শুরু হবে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনে এবার প্রথমবারের মতো মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেয়র
পদের পাঁচজন প্রার্থী হলেন:
১. আওয়ামী লীগ মনোনীত এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা)
২. বিএনপির মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল (ধানের শীষ)
৩. বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির হাবিবুর রহমান (কাঁঠাল)
৪. গণমঞ্চ ও গণসংহতি আন্দোলনের অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ (হাতি)
৫. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শফিকুল ইসলাম (হাত পাখা)।
তবে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মতে মূলত নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীর মধ্যেই হবে ভোটের লড়াই।
গত ১০ জুলাই রাসিক নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পরপর মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে যায় নগরী। ১১ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত জোরতালে চলে প্রচার-প্রচারণা। পিছিয়ে ছিলেন না কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরগণও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালান। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইকিং করে প্রার্থীরা নিজ প্রতীকের পক্ষে প্রচারণা চালান। শিল্পীদের গানে গানেও প্রচারণা চালানো হয়। বিশেষ করে বড় দুই দলের হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপি মনোনীত মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও আ’লীগ মনোনীত এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের প্রচার-প্রচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা প্রচার-প্রচারণা চালান। পিছিয়ে ছিলেন না তাদের সহধর্মিণীরাও। বুলবুলের সহধর্মিণী রেবেকা সুলতানা সিমি ও লিটনের সহধর্মিণী নগর আ’লীগের সহসভাপতি শাহিন আক্তার রেণীও । দিনরাত নিজ স্বামীর পক্ষে ভোটের প্রচারণা চালান তারা। এ ছাড়া দুই দলের কেন্দ্রীয় ও আশেপাশের জেলা উপজেলার নেতার প্রচার-প্রচারণা চালান।
রাসিক নির্বাচনে এবার মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ২১৭ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে প্রার্থী রয়েছেন পাঁচজন। আর ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আছেন ১৬০ জন। এছাড়া ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থী ৫২ জন। এবার সিটি করপোরেশনের ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন।
রাজশাহীতে এবার মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৮টি । প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া প্রতিটি বুথে একজন করে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং দুইজন করে পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। এবার নগরীর দুইটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে। কেন্দ্র দুইটি রয়েছে রাজশাহীর বিবি হিন্দু একাডেমিতে। সেখানে আলাদাভাবে নারী ও পুরুষ ভোট কেন্দ্র রয়েছে।
এছাড়া রাসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে ১৩৮টি কেন্দ্রে। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশন ১১৪টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধার উপর ভিত্তি করে এসব কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্য কেন্দ্রের তুলনায় এসব কেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা
হবে। একটি কেন্দ্রে ২৪জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকবে। তবে এই কেন্দ্রগুলো বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সিটি নির্বাচন উপলক্ষে যে কোন অপ্রিতীকর ঘটনা এড়াতে ও আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিকা রাখতে রাজশাহী মহানগরীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ান র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। এরইমধ্যে ১৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ২৮ থেকে ৩১ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত এই দুই বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকবে। শনিবার সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় টহলসহ নিরাপত্তার সার্বিক দায়িত্ব পালন শুরু করে।
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন-২০১৮ উপলক্ষে র্যাপিড এ্যাকশান ব্যাটালিয়ান র্যাব-৫ এর ৪০০ সদস্য নগরীর বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৯টা থেকে র্যাব সদস্যরা নগরজুড়ে টহল দিতে শুরু করে। আগামী ৪ দিন পর্যন্ত র্যাব সদস্যরা নগরে টহল দিবে। ২৮ তারিখ থেকে ৩১ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত র্যাব মাঠে থাকবে। র্যাব-৫ এর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এ ছাড়া নির্বাচনের দিন রাসিক নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সামনেও র্যাব অবস্থান নিবে বলে জানানো হয়।
ভোটের দিন রাজশাহী মহানগরীতে ৩ হাজার পুলিশ সদস্য মাঠে থাকবে। পুলিশ সদস্যরা ভোট কেন্দ্র, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে, চেকপোস্ট ও টহল দিবে।
১৩৮টি ভোট কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩০ জুলাই ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।
রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ আমিরুল ইসলাম জানান, সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এরইমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।