“মেননের বুলেটবিদ্ধ বুক…
গুমরে উঠেছে হাহাকারে আর্ত বাংলাদেশ,
মেননের বুলেট বিদ্ধ বুক…
নূয়ে পড়ছে লজ্জায় আমার পতাকা,
মেননের বুলেট বিদ্ধ বুক…
রক্তে আবার ভিজে গেল আমার স্বাধীনতা,
আমি মেননের গুলিবিদ্ধ ঝাঝরা বুকের মতো সাধারণ একজন।
আমি মেননের সুতির দীনের মতো সাদা পাঞ্জাবীর
নিঃশঙ্ক মুক্তির শেষ হাতছানি।
আমি মেননের গুলিবিদ্ধ বুকের জখম থেকে
জন্ম নেই বারবার নতুন মেনন।”
১৭ আগস্ট ১৯৯২। রাত ৮:২৫। তোপখানা রোডের ওয়ার্কার্স পার্টি অফিস। পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাশেদ খান মেননের উপর গুলিবর্ষণ করলো হায়েনা সন্ত্রাসীরা। বিদীর্ণ হলো মেননের বুক। মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়লেন মেনন। সন্ত্রাসীরা পালালো। কমরেড মেনন হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যমে-মানুষে টানাটানি চলছে। বাইরে অসংখ্য মানুষ প্রতীক্ষায়, মেনন ফিরবেন। রক্ত লাগবে, কয়েক হাজার মানুষ প্রস্তুত তাঁকে রক্ত দিতে। এক পর্যায়ে নেওয়া হলো লন্ডনে। কিংস কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসায় মেনন ফিরলেন। মৃত্যু পরাজিত হলো মানুষের ভালোবাসায়। ৯ জানুয়ারি ১৯৯৩। জনতার নেতা রাশেদ খান মেনন নতুন জীবন নিয়ে ফিরলেন বাংলাদেশে। ঢাকা বিমানবন্দরে লাখো জনতার ভিড়। মেনন-বরণ।
জনতার নেতা রাশেদ খান মেনন। সেই ষাটের দশকের শুরুতে ঢাকা কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় বিচরণ করা লিকলিকে পাতলা গড়নের ছেলেটি একসময় হয়ে উঠলেন জনপ্রিয় ছাত্রনেতা রাশেদ খান মেনন। ক্ষমতাশালী বিলাসী বিত্তবৈভবের পারিবারিক জীবনকে তুচ্ছজ্ঞানে সেদিন মেনন নেমে এসেছিলেন রাজপথে। পাকিস্তানী সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব শাহীর শোষণের রাজদ-কে বলেছিলেন, ‘না’। বাষট্টির ঐতিহাসিক শিক্ষা আন্দোলনের প্রধান নেতা তিনিই। সেই শুরু। রাজপথই তখন তাঁর জীবনসাথী। বাষট্টি পেরিয়ে চৌষট্টি, আটষট্টি, ঊনসত্তর, সত্তরের দুর্নিবার গণআন্দোলনের জোয়ারে মেনন এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। মধ্যষাটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ সভাপতি (ভিপি)। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি। ছাত্র আন্দোলনের পাঠ চুকিয়ে মেনন ছুটলেন পার্টির দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে শ্রমিক আন্দোলনে। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে কৃষক সংগ্রামেও মেননের বিচরণ। আইয়ুব শাহীর পতনের পর হায়েনা ইয়াহিয়া খানের জান্তা শাসনের বিরুদ্ধেও রাজপথের সংগ্রামে সোচ্চার ছিলেন কমরেড মেনন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বামপন্থীদের একাংশ, বিশেষ করে সে সময়কার চীনপন্থী কমিউনিস্ট পার্টির একটা বড় অংশ যখন বিভ্রান্ত, তখনও বিভ্রান্তির মায়াজাল আচ্ছন্ন করতে পারেনি রাশেদ খান মেননকে। আরো প্রমুখ বাম কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দের সাথে কমরেড মেনন সংগঠিত হলেন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের জাতীয় সমন্বয় কমিটিতে। সংগঠিত করলেন মুক্তিযুদ্ধ। সম্মুখ সমরে পাক শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। দেশমাতৃকার স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামেও কমরেড মেননের ভূমিকা অনন্য।
যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন দেশে তখন দেশ পুনর্গঠনের পালা। সে যাত্রায়ও সঙ্গী ছিলেন মেনন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মুখে পাকিস্তানমুখী অপযাত্রার বিরুদ্ধেও সংগ্রামমুখর মেননের জীবন। খুনী জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় যোগদানের লোভনীয় আমন্ত্রণ বারবার পায়ে দলেছেন। আরেক সামরিক জান্তা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মন্ত্রিত্বের আমন্ত্রণ থু থু ছিটিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন বারবার। আশির দশক জুড়ে এরশাদ শাহীর বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনের অন্যতম নেতা রাশেদ খান মেনন। সে সংগ্রামে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করা আট দল, সাত দল ও পাঁচ দলীয় জোটের মধ্যে পাঁচ দলের প্রধান নেতা কমরেড রাশেদ খান মেনন। জনতার মাঝে থেকেই জনতাকে সঙ্গী করে গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম রচয়িতা তিনি।
এরশাদ পতনের পর এলো খালেদা জিয়ার দুঃশাসনের কাল। স্বামী জিয়াউর রহমানের মতোই বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া স্বাধীনতাবিরোধী জামাত-শিবিরকে সঙ্গী করেই পথ চলা শুরু করলেন। এরশাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের তিন জোটের অঙ্গিকার ভুলে তিনিও উল্টো পথেই চললেন। রাজাকার-আল বদররা সব খালেদার মন্ত্রিসভায় সমাসীন। এবারও প্রতিবাদী কমরেড রাশেদ খান মেনন। ফলাফল মেনন হত্যাচেষ্টা। স্বাধীনতাবিরোধী জামাত-শিবির ও ফ্রিডম পার্টির যুব কমান্ডের হায়েনারা হিটলিস্টে অন্যান্যাদের সাথে মেননের নামও ঘোষণা করলো। ‘নাস্তিক’, ‘মুরতাদ’, ‘কাফের’ ইত্যাদি বিশেষণে অভিহিত করে তারা মেননের লাশ চাইলো। মেনন তখন জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সদস্য। শহিদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে তখন একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের আন্দোলন তুঙ্গে। শহিদজননীর অন্যতম সঙ্গী কমরেড মেনন। সংসদেও উচ্চকিত তাঁর কণ্ঠস্বর। এতদসত্ত্বেও তাঁর নিরাপত্তা বিধানে কোনো ব্যবস্থা নিলো না তৎকালীন সরকার । ১৯৯২ সালের ১৭ আগস্ট রাত ৮:২৫ এ পার্টি অফিসের সামনেই তাঁর বুক বুলেটে বিদীর্ণ করে পালালো সন্ত্রাসীরা।
কমরেড রাশেদ খান মেনন ফিরে এলেন জনতার ভালোবাসায়। প্রকৃতিও সেদিন বুঝেছিলো, মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বুলেটের শক্তি কোনোভাবেই বেশি হতে পারে না। জীবন-মৃত্যুর টানাটানিতে সেদিন জয়ী হয়েছিলো জীবন। জয়ী হয়েছিলো একজন প্রকৃত জননেতার প্রতি জনতার ভালোবাসা। পরাজিত হয়েছিলো ঘাতক সন্ত্রাস। এই সন্ত্রাস তো কেবল জীবন থেকে জীবন কেড়েই নিতে পারে, জীবনদানের ক্ষমতা তো ভালোবাসায় নিহিত। কমরেড মেনন সেদিন সেই ভালোবাসার জয় দেখেছিলেন। তাই পরের বছরের ৯ জানুয়ারি যখন দেশে ফিরে লাখো মানুষের প্রাণের অভিবাদন পেলেন বিমানবন্দর থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের পথে পথে, তখন মৃত্যুঞ্জয়ী জননেতা ঘোষণা করেছিলেন, ‘সরকারের কাছে আমি নিরাপত্তা চাই না, জনগণের মাঝেই আমার নিরাপত্তা।’
কমরেড রাশেদ খান মেনন সেদিনের সেই কথা রেখেছেন, রেখে চলেছেন আজো। জনতার সংগ্রামে জনতার সাথেই আছেন তিনি। পরবর্তীতে খালেদা-নিজামীর জোট সরকারের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন বুক চিতিয়ে। স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজপথের সংগ্রামেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য গড়ে উঠেছে। সেই ঐক্যের তিনিও অন্যতম নেতা। বিপরীতে জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস তখন ক্রমেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করে চলেছে।
২০০৪। ১৯-২১ আগস্ট ছিলো বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। বৈঠক শেষে ২১ আগস্ট সকালে পার্টির দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন আশঙ্কা প্রকাশ করলেন ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্ট জঙ্গিবাদী সন্ত্রাস আরো ভয়াবহ হতে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের উপর ভয়াবহতম আক্রমণ আসতে চলেছে শিগগিরই।’
ওয়ার্কার্স পার্টির সে আশঙ্কা বাস্তবে দেখা গেলো তার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই। বিকালেই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা। অন্তত ২৪ জনের মৃত্যু।
এবারও সন্ত্রাসীরাই শেষ পর্যন্ত পরাজিত, জয়ী মানুষের সংগ্রাম। জঙ্গিবাদী ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই আর তার অন্তে সেনাসমর্থিত অসাংবিধানিক অগণতান্ত্রিক তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে দুই বছরের লড়াই করে নির্বাচন। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮। সাধারণ নির্বাচন। সে নির্বাচনে জঙ্গিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে নৌকায় রায় উজাড় করে দিলেন মানুষ। চৌদ্দ দল ক্ষমতায় এলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরু হলো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হলো, দেশের কারাগারে বন্দী সে ঘাতকদের মৃত্যুদ- হলো। শুরু হলো বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তির পথে যাত্রা। শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধের পথে রাজনৈতিক পুনর্যাত্রা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলো। নানা বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত একাত্তরের ঘাতক আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদ- কার্যকরের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের কলঙ্ক থেকে বাংলাদেশের মুক্তির আরেক ঐতিহাসিক যাত্রা। এ যাত্রায় বাধা দিতে চেয়েছে খোদ জাতিসংঘ। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তো আছেই। কিন্তু এ বাংলাদেশ মাথা নত না করার। এ বাংলাদেশ বিচারের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনে অটুট মনোবল ধরে রেখে এগিয়ে গেলো। এ যাত্রায়ও সাথী কমরেড রাশেদ খান মেনন ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।
সন্ত্রাসীরা আজো থেমে নেই। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করে দিতে বারবার তারা ফনা তোলে। ফনা তোলে সুযোগ পেলেই। যুদ্ধাপরাধের বিচার অনেকখানি এগিয়েছে, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের অধ্যায় এদেশে শেষ হয়েছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধীদের প্রধান রাজনৈতিক প্লাটফরম জামাতে ইসলামীকে এদেশে এখনও নিষিদ্ধ করা যায়নি। আর তাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী দক্ষিণপন্থী রাজনীতির দোসর বিএনপি’র রাজনীতিও এখনো পুরোপুরি পরাস্ত নয়। নির্মোঘ রাজনৈতিক বাস্তবতার দোহাই দিয়ে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির আপোস ঘটে প্রায়শই। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের প্রবর্তক পতিত স্বৈরশাসক এরশাদ আজ ঐক্যের সাথী। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির এই সময়ের কান্ডারী হেফাজতে ইসলামের কথায় বদলে যায় পাঠ্যপুস্তক, ভেঙ্গে পড়ে ভাস্কর্য। এই আপোসের রাজনীতি বাধা হয়ে দাঁড়ায় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযাত্রায়।
ফলে বারবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস। একের পর এক খুন হয়ে যান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক কর্মি, লেখক, প্রকাশক, সাংবাদিক, ব্লগার। ব্যক্তিহত্যার টার্গেট মোড় নেয় রাষ্ট্রকেই হত্যার চেষ্টায়। গুলশানের রেস্তোরাঁয় কিংবা শোলাকিয়ার ঈদগাহে ভয়াবহ সংগঠিত জঙ্গি আক্রমণ। বাসে বাসে পেট্রোল বোমা, জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যার মতো ভয়াবহ সন্ত্রাস এ কালেও দেখতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও সোচ্চার কমরেড রাশেদ খান মেনন। মেনন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমনই এক কালপুরুষ যে সরকারের মন্ত্রী থেকেও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সাথে সরকারের প্রধান শরীক আওয়ামী লীগের আপোসকামিতার বিরুদ্ধে সোচ্চারকণ্ঠ তিনি।
আজো বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, পার্টির সভাপতি, একজন জননেতা কমরেড রাশেদ খান মেনন লড়ে চলেছেন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে, জনতাকে সঙ্গী করে।
কমরেড রাশেদ খান মেননের হত্যাচেষ্টার ২৬ বছরেও সে ঘটনার প্রকৃত তদন্ত ও বিচার হয় নি। পার্টির তরফ থেকে এই হত্যাচেষ্টার পিছনে সেই সময়ের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ একটি দায়সারা তদন্ত করে কতিপয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। পরে পার্টির তরফ থেকে পুনঃতদন্তের দাবির প্রেক্ষিতে অধিকতর তদন্তের পদক্ষেপ নেয়া হলেও কোনো কাজ হয় নি। পুলিশের দায়েরকৃত ওই মামলা পরবর্তীতে বিচারের জন্য উঠলেও তার পরিণতি নেয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
শুধু কমরেড মেননই নন, সমসাময়িককালে সন্ত্রাসের নির্মম বলি হয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির বহু নেতা-কর্মী। সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের আঘাতে শহীদ হয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ও আখচাষী নেতা কমরেড আব্দুস সালাম, কুলবিলা গুচ্ছগ্রাম হত্যাকা-ে পার্টির নেতা কমরেড উজির আলী, আশানুর পুটুসহ আটজন ভূমিহীন কৃষক, নারায়ণগঞ্জের পার্টি নেতা কমরেড রফিক খান, চুয়াডাঙ্গার পার্টি নেতা কমরেড সোহরাব জহির, প্রাক্তন জেলা সম্পাদক কমরেড রমজান আলী হায়দার, জেলা সম্পাদক কমরেড মোখলেসুর রহমান, ঝিনাইদহের কমরেড মন্টু মাস্টার, বরিশালের উজিরপুরের পার্টির প্রাক্তন সম্পাদক কমরেড বাবুলাল শীল, রাজশাহীর শ্রমিকনেতা মোহাম্মদ আলী, পাবনার আব্দুর রশীদসহ বহু নেতা-কর্মী। সন্ত্রাসের বলি হয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর নেতা শহিদ জামিল আকতার রতন, জুবায়ের চৌধুরী রিমু, ফারুকুজ্জামান ফারুক, দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য রূপম, আইয়ুব হোসেন, বনি আমিন পান্না, আশরাফুল ইসলাম, আসলাম, আতিকুল বারী, সেলিম, রাজু আহম্মেদ বাবলু, শামীম আহমেদ, রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী সানিসহ সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবা দবিরোধী আন্দোলনের বহু বীর সাথী। ২০০৮ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনের রাজপথে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে জামাত-শিবিরের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বাংলাদেশ যুব মৈত্রীর সাথী শহিদ রাসেল আহমেদ খান।
এসব হত্যাকান্ডের কোনোটিরই কোনো বিচার হয় নি। সন্ত্রাস বারবার আক্রান্ত করে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে। কিন্তু জনগণের অধিকারের লড়াই করে করে সমৃদ্ধ যে পার্টি, যে গণসংগঠনগুলো, ভীরু সন্ত্রাসের কাছে নতি শিকার করে না তারা। বরং লড়াইয়ের ময়দানে হাসতে হাসতে জীবনদানের পথে বারবার এগিয়ে যায়। আত্মত্যাগের বিনিময়েও সংগ্রামের লাল ঝাণ্ডা সদা উর্ধে তুলে রাখে।
বিচার হয় নি, বিচার হয় না। কিন্তু বাংলাদেশ লড়াই করতে জানে। তাই বারবার ঘুরে দাঁড়ায় সন্ত্রাসের প্রবল আক্রমণের মুখেও। সন্ত্রাসীরা গণপ্রতিরোধে পরাজিত হবেই।
ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ, ঘুরে দাঁড়ান কমরেড রাশেদ খান মেনন। ‘জীবন দখল কর এবং বিলিয়ে দাও’ এই মন্ত্রে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে পারিপার্শ্বিকতা আর নিজের সাথে লড়াই করে নিজের জীবন দখল করে তা মানুষের মাঝে বিলিয়ে চলেছেন কমরেড মেনন।
নিঃশঙ্ক মুক্তির শেষ হাতছানি, তোমাকে লাল সালাম প্রিয় কমরেড।
লেখক : বাপ্পাদিত্য বসু,প্রাক্তন ছাত্রনেতা।
Tags: