নৃত্যের জীবন্ত কিংবদন্তি ‘নৃত্যগুরু’ বজলুর রহমান বাদল আর নেই। স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত গুণী এই নৃত্যশিল্পী রোববার বিকেল চারটায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আইসিইউ-এর ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, ‘বজলুর রহমান শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন, হৃদরোগের সমস্যা ছিল, শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। মেডিকেল বোর্ড গঠন করে রোববার বেলা ১১টার দিকে নৃত্যগুরুকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। বিকেল চারটার দিকে তিনি মারা যান।’
৯৫ বছর বয়সী ওস্তাদ বজলুর রহমান বাদল নগরের শিরোইল এলাকায় মেয়ের বাসায় থাকতেন। গত শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রামেক হাসপাতালে নেয়া হয়। শয্যা না পাওয়ায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। এ খবর ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নবনির্বাচিত সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাকে
হাসপাতালের শয্যা দেয়া হয়।
২০১৭ সালে জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা পদক পান নৃত্যশিল্পী বজলুর রহমান বাদল। পদকপ্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে পদক তুলে দেন। এ ছাড়াও তিনি শিল্পকলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার, নজরুল অ্যাকাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সংবর্ধনায় ভূষিত হয়েছেন। পেয়েছেন ‘নৃত্যগুরু’ উপাধি।
গুণী এই শিল্পী ১৯২৩ সালের ১৮ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পূর্বপুরুষেরা
কলকাতার মানুষ। দাদা আশাক হোসেন আমের ব্যবসা করতে এসে মালদহে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই তিনি
জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম আবুল কাশেম ও মা সখিনা বিবি। বজলুর রহমান ১৯৪৫ সালে মালদহ জিলা স্কুল
থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরের বছর নাটকে অভিনয় করতে রাজশাহী আসেন। এরপর পুরো জীবনকাল
রাজশাহীতেই অতিবাহিত করেন।
এদিকে, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নৃত্যগুরু বজলার রহমান বাদলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। রোববার সন্ধ্যায় এক শোক বার্তায় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
শোক বার্তায় মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নৃত্যগুরু বজলার রহমান বাদলের মৃত্যুকে
রাজশাহীসহ দেশবাসী গুণী ও প্রতিভাবান নৃত্যশিল্পীকে হারালো। তাঁর মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো, তা অপূরণীয়।
শোক বার্তায় মেয়র লিটন মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা ও শোক সন্তোপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।