টাঙ্গাইল জেলাধীন কালিহাতী থানায় কর্মরত এ.এস.আই হামিদুল ইসলাম কর্তৃক নিহত কিশোরগঞ্জের মেয়ে আয়েশা আক্তার জেবিন (৩২) হত্যার সুষ্ঠতদন্ত ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিবার ও এলঅকাবাসী। গতকাল শুক্রবার সকালে জেলা পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে অঅয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পেশ করেন নিহত জেবিনের বাবা মুর্শেদ মিয়া। তিনি বলেন,ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সংবাদপত্রের মাধ্যমে আপনাদের সামনে আজ হাজির আমি মো: মুর্শেদ মিয়া , নৃশংসতার শিকার হতভাগা আমার মেয়ে আয়েশা আক্তার জেবিনের (৩২) হত্যাকান্ড বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলার কালীহাতী থানার কর্মরত ঘাতক এ.এস.আই হামিদুল ইসলামকে বাঁচানোর ষঢ়যন্ত্র নিয়ে দু-চার কথা বলার জন্য। আমার মেয়ে আয়েশা আক্তার জেবিনের (৩২) পূর্ব স্বামী কাজী সুমন প্রায় চার বছর আগে মারা যায় ক্যান্সারে। সুমনের সাথে ছিল ঘাতক পুলিশ এ.এস.আই হামিদুল ইসলামের বন্ধুত্ব। সেই সুবাদে সুমন মারা যাবার পর সুমনের ঔরষজাত সন্তান আরাফাত ও আরহামকে ¯েœহ দিয়ে আদর করে যায় প্রতিনিয়ত। এক পর্যায়ে প্রস্তাব দেয় জেবিনকে বিয়ের। জেবিন এতে অস্বীকৃতি জানালে তার দু’সন্তানকে নিজ সন্তান হিসেবে দায়িত্ব নেবে বলে জানায়। সামাজিকভাবে এর প্রস্তাবও দেয়। মধ্যস্থতাকারী এ বিষয়ে ঘাতক হামিদুল ইসলামের পূর্ব বিবাহকৃত স্ত্রী ও তার পরিবারের মতামত জানতে চায়। একটি তালাকনামা দিয়ে ও ঘাতক হামিদুলের স্বজনদের কর্তৃক আশ্বস্থ করা হলে আমরা জেবিনকে বিয়ে দেই হামিদুলের কাছে। গত ৭ মে ২০১৮ তারিখে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিয়ের ৩ মাস ২৩ দিনের ব্যবধানে আমার মেয়ে সেই হত্যার শিকার হয়। যার ঘাতক পুলিশ এ.এস.আই হামিদুল।
গত ১২ আগষ্ট এ.এস.আই হামিদুল জেবিনকে নিয়ে কিশোরগঞ্জ এসে বাপের বাড়ীতে রেখে যায়। পরে এসে নিয়ে যাবে বলে। জেবিন বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানতে পারে যে, ঘাতক হামিদুলের পূর্বের স্ত্রী সাবিকুন্নাহার টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার সাতোটিয়া সাকিনস্থ অরুন চন্দ্র রায়ের ভাড়াটে বাসায় অবস্থান করছে। একথা উপলব্দি করে জেবিন ১২ আগষ্ট কিশোরগঞ্জ থেকে চলে যায় ওই ঠিকানায়। সেখানে গিয়ে ঘাতক হামিদুলের পূর্বের স্ত্রী সাবিকুন্নাহারকে দেখতে পায় জেবিন। তখনই শুরু হয় ঝগড়া। ঝগড়াটির ভেতর দিয়ে চলে ৮ দিন। এভাবে জেবিনে চলে আসে জীবনের অন্তিম সময়। তারিখ ২০ আগষ্ট ২০১৮। ৮ দিনের মধ্যেই প্রতিদিন জেবিন চেষ্টা করছিল কিশোরগঞ্জ ফিরে আসার। তাই জেবিনের মোবাইল ও টাকা সবকিছুই নিয়ে নেয় ঘাতক হামিদুল। যাতে জেবিন বাড়ীতে আসতে না পারে ও যোগাযোগ করতে না পারে। হামিদুল ঘুমিয়ে পড়ার সুযোগে জেবিন ২০ আগষ্ট বিকালে ৮ বার কল দেয় বাড়ীতে মার কাছে লুকিয়ে হামিদুলের মোবাইল থেকে। কিন্তু জেবিনের মা অসুস্থ থাকায় জেবিনের কল ধরতে পারেনি। জেবিনের শেষ কলটি ধরে ৩টা ৩৫ মিনিটে জেবিনের মা নাঈমা আক্তার ওরফে নাসিমা। ফোনে জেবিন বলে আম্মু, “ইমনকে পাঠাও, এখানে থাকা যাবে না, এখানে থাকলে আমাকে মেরে ফেলবে। সবকিছু বলা যাবে না” এরকম কিছু কথা বলার মূর্হুতেই জেবিনের কন্ঠ থেমে যায়। তারপর শোনা যায় ধস্তাধস্তির শব্দ। নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে তারপর রাত ৭ ঘটিকায় ঘাতক হামিদুল জেবিনের মাকে আবার ফোন দিয়ে বলে জেবিন অসুস্থ, তাকে নিয়ে যান। তখনি আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে নির্যাতন করে আয়েশা আক্তার জেবিনকে মারাত্মক একটা কিছু করা হয়েছে। এই উপলব্ধি থেকেই জেবিনের মা নাঈমা আক্তার নাসিমা অজ্ঞান হয়ে যায়। এ অবস্থায় ঐদিন ২০ আগষ্ট রাতেই আমরা ঈদের যানজট পেরিয়ে পর দিন ২১/০৮/২০১৮ তারিখে পৌনে ৭টায় আমাদের ১২/১৪ জন লোক কালিহাতীতে পৌছি। কিন্তু সেখানে পৌছেই আমরা জানতে পারি যে জেবিন পৃথিবীতে নেই। আরো জানতে পারি যে নিহতের লাশ এলাকাবাসী দেখতে চাইলে ঘাতক হামিদুল কাউকে বাসায় ঢুকতে দেয়নি। এ অবস্থা জেনে আমি পিতা হিসেবে কান্নাকাটি শুরু করলে এলাকার লোকজন এসে জড়ো হয় এবং সমবেদনা প্রকাশ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাশ্ববর্তী জনৈক ব্যক্তি বলেন, “আমরা কয়েকদিন যাবত ওই বাসায় ঝগড়া-ঝাটি শুনেছি”। আমরা ওই বাসাতেই ঘাতক হামিদুলকে স্বাভাবিক অবস্থায় দেখতে পাই । ঘাতক হামিদুল সুস্থ-স্বাভাবিক কন্ঠে বলে যে লাশ থানায় আছে। কিন্তু আমরা থানায় পৌছার আগেই দেখি কালিহাতী থানা কর্তৃপক্ষ সুরত হাল তৈরি করেে ফেলেছে। তখন এই সুরত হাল থানা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে দেখায়নি। আমাদেরকে তাদের মনগড়া সুরত হাল তৈরী করার পরে লাশ দেখতে দেয়া হয়। আমরা যা দেখলাম তাতে গলার দাগটি ওড়নার বলে প্রচার করে, যা দিয়ে আত্মহত্যার অপপ্রচার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখলাম। ওই ওড়নাতে কোন কুচুরী ( গ্রাম্য শব্দ) ভাঁজও ছিল না। তারপর লাশটি পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য। ময়না তদন্তের পর সন্ধ্যায় আমাদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। আমাদের পীড়াপীড়িতে সুরত হাল রিপোর্টটি আমাদেরকে দেয় থানা কর্র্তৃপক্ষ। পরের দিন ঈদুল আযহা। তাই তড়িঘড়ি করে লাশ নিয়ে রওনা দেই কিশোরগঞ্জে। কিশোরগঞ্জে পৌছে লাশ ধোয়ানোর সময় নিহত জেবিনের বিভিন্ন জখমের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয় যা সুরতহালে আসেনি। তা হলো (০১) পিঠে ডান হাতের পাখনা ও কুনুতে জখমের চিহ্ন (০২) বাম পায়ের হাটুর ওপরে জখমের চিহ্ন (০৩) বাম পায়ের হাটুর উপর নিচে নীলা ফুলা জখমের চিহ্ন যা আমরা মোবাইলে সংরক্ষণ করি। কালীহাতী থানা কর্তৃপক্ষ সুরতহালে তা উল্লেখ না করায় প্রতিয়মান হচ্ছে যে কালীহাতী থানার কর্তৃপক্ষ ঘাতক পুলিশ এ.এস.আই হামিদুল ইসলামকে হত্যার অভিযোগ থেকে বাঁচানোর পায়তারা করেছে।
তিনি আরও বলেন,আমাদের অনুপস্থিতিতে তৈরি সুরতহালের উল্লেখ না করা মারধরের প্রেক্ষিতে জখম হওয়ার চিহ্নগুলো যা টাঙ্গাইল এসপি মহোদয়ের কাছে আমরা অভিযোগ আকারে উপস্থাপন করে এসেছি। ঘাতক একজন পুলিশ হওয়ায় আমরা আর পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে পারছি না। আমরা তাই আয়েশা আক্তার জেবিনের হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রেক্ষিতে পিবিআই এর উপর তদন্তভার প্রদান করার জন্য জোরদাবী জানাই। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত জেবিনের মা নাইমা আক্তার নাসিমা, মামা রেজাউল হাবীব রেজা,ভাই ইমন, পুত্র আরাফাত ও আরহামসহ এলাকাবাসী।