একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে বিগত দুই বছর ধরে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা রাস্তার দুই পাশের গাছ ও খুঁটিতে এবং হাট বাজারসহ জনবহুল স্থানে ব্যানার ফেস্টুন লাগিয়ে পুরো এলাকা ছেয়ে ফেলেছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে দলের অভ্যন্তরে প্রতিযোগিতা রয়েছে। যা মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিভক্ত করে রেখেছে।
জাতীয় সংসদের ৮৫, যশোর-১ (শার্শা) আসনে বর্তমানে মাঠ দখলে রেখেছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে জনসমর্থন থাকলেও মাঠে দাঁড়াতেই পারছে না বিএনপি। ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটি বিএনপি’র দখলে ছিল। ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে পরজিত আওয়ামীলীগ জয়ী হয়। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করায় এটি আবারো চলে যায় আওয়ামী লীগের হাতে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আওয়ামীলীগ টানা মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় এ এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, এতে জনসমর্থনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব শেখ আফিল উদ্দিন। তিনি এবারেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি ছাড়াও এ আসনে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, মুক্তিযুদ্ধকালীন শার্শা থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, সাবেক এডিশনাল আই.জি.পি, সাবেক মহা পরিচালক পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল মাবুদ (পিপিএম)। তারা সকলেই ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাংসদ শেখ আফিল উদ্দিন জানান, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালে অবহেলিত এলাকায় রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ ও বেকারদের কর্মসংস্থানসহ ব্যাপক কাজ হয়েছে। পুনরায় দল থেকে তিনি মনোনয়ন পেলে এলাকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন। শার্শার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করবেন।
অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী যশোর জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন গত কয়েক বছর থেকে এলাকায় কাজ করে চলেছেন। তিনি প্রতিনিয়ত এলাকার জন সাধারণের সাথে যোগাযোগ করে চলেছেন। তিনিও এলাকার রাস্তা-ঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। ইতিমধ্যে তিনি নৌকার পক্ষে শার্শা প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন কর্মী সমাবেশ ও আওয়ামীলীগ সরকারের উন্নয়নের ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। যা অন্য দুই প্রার্থীর মধ্যে তেমনটি লক্ষ্য করা যায়নি। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী ও দলনেত্রী শেখ হাসিনা যদি তাকে মনোনয়ন দেন তবে তিনি এ আসনটি তাকে উপহার দেবেন।
মুক্তিযুদ্ধকালীন শার্শা থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, সাবেক এডিশনাল আই.জি.পি, সাবেক মহা পরিচালক পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল মাবুদ (পিপিএম) ও মাঝে মধ্যে এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।
এদিকে মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরেও কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে। যা বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিভক্ত করে রেখেছে। বিএনপি ও জামায়াতী ইসলামের প্রচার প্রচারণা বেশী একটা না থাকলেও মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, কেন্দ্রীয় সেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব মহসিন কবির, যশোর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আজিজুর রহমান। এছাড়াও এ আসনে রয়েছে জাতীয় পার্টির যশোর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও শার্শা উপজেলা সভাপতি আক্তারুজ্জামান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (চরমোনাই পীরের দল) থেকে নির্বাচন করবেন আলহাজ্ব বখতিয়ার রহমান।
বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি মাঝে মধ্যে এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। তিনি জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি অবাধ ও সুষ্ঠু হয় এবং বিএনপি যদি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তবে তিনি এ আসনে জয়লাভ করবেন। অপর প্রার্থী সেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মহাসিন কবির। তবে তাকে দীর্ঘ দিন এলাকায় দেখা যায় নি। নেতা কর্মীদের সাথেও তেমন যোগাযোগ হয় না তার। তবে এ বিষয়ে জানার জন্য শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান জহিরের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। হামলা-মামলা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বেপরোয়া কর্মকান্ডের পাশাপাশি পুলিশী হয়রানির কারণে এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতারা মাঠ ছাড়া। আবার অনেক নেতা কর্মী দলীয় মামলায় জেল হেফাজতে রয়েছে এবং অনেক পূর্বেই মাঠে নেই জামায়াত ইসলামী নেতারা। এতে করে যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপি অনেকটাই নরবর অবস্থানে রয়েছে। যা বিএনপি সমার্থকদের জন্য দুঃখজনক।
এখন শুধু এই আসনে মাঠের তৎপরতা সরকারী দল তথা আওয়ামীলীগের। সুযোগ পেলে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের নেতারা সরব হয়ে উঠবে।