কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার কলাতলী গ্রামের ১২০ বছর বয়সী আলী হোসেন ১১০ বছর যাবৎ উপার্জন করে চলাচল করতে পারলেও বিগত ১০ বছর যাবৎ সে আর চলতে পারছে না। করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অনেকদিন বসে থেকেও পাননি বয়স্ক ভাতার কার্ড। দৌড়ঝাপ করেছেন পৌর মেয়রের কার্যালয়েও। নিরুপায় হয়ে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা আলী হোসেন আজ পথের ভিখারী হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর শহীদী মসজিদের সামনে এসে পৌঁছান এক অটোওয়ালার পায়ে ধরে। সেই অটোওয়ালা প্রথমে তাকে তুললেও মাঝপথে এনে নামিয়ে দেয়, যখন জানতে পারে তার কিছুই নেই। সে সামান্যতম মানবতাবোধ দেখায়নি আলী হোসেনের সাথে। অর্ধবেলা রাস্তায় বসে থেকে ক্ষুধার যন্ত্রণায় যখন কাতরাচ্ছিলেন, তখন আরেক অটোওয়ালার সামনে বসেন।
অটো রিক্সা চালক গতিরোধ করলে আলী হোসেন বলেন, হয় আমারে শহরে নিয়া ফালা, না হয় মাইরে যা। অটোর এক যাত্রী সহানুভূতি দেখিয়ে তাকে কিশোরগঞ্জ শহীদী মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। পরে অটোর ভাড়া পরিশোধ করেন এবং তাকে ২০ টাকা দিয়ে সেই যাত্রী চলে যান। তারপর থেকেই বেলা ২টা পর্যন্ত তার কান্নাকাটি শুনে পথচারীরা ১০ টাকা, ৫ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। হঠাৎ করে সে টাকা নিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে বলে আমারে একবেলা খাওয়াও। খাওয়ার পরে একটু বিষ খাওয়াইয়া দিও, যে দেশে সারাজীবন কাজ করে ১২০ বছরেও বয়স্কভাতা কার্ড মিলে না, সে দেশে বাঁচতে চাই না। ইউএনও সাহেব আমার বাড়ীতে কয়েকবারই গিয়েছেন। তাঁর গাড়ির ড্রাইভার আমাকে হাত ধরে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়। আমি সরকারকে ভোট দেয়, কিন্তু সরকারের অফিসে গেলে আমাকে খুব খারাপ ভাষায় গালি দেয়। আমি আত্মহত্যা করতে পারি না, কারণ সব গাড়ি ওয়ালাই আমাকে দেখে গাড়ি ব্রেক করে। আমার ছেলে-মেয়েরা কিছুদিন খাওয়ালেও হঠাৎ করে আবার খাবার বন্ধ করে দেয়। দুই মেয়ে ১) নূরে, ২) কুলসুম। দুই ছেলে ১) জসিম, ২) সুজন। ছেলে দুইটি রিকসা চালায়। তারাও অভাবে থাকায় আমাকে ঠিকমতো ভরণ-পোষণ করতে পারে না। আমার বাড়ি ভিটে না থাকায় আমার ছেলে-মেয়েরা খোঁজ-খবর নেয় না। আজ শহীদী মসজিদের সামনে এসেছি। সন্ধ্যার সময় মাগরিবের নামায পড়ে রাত্রে আবার আজকের এই ভিক্ষের টাকা দিয়ে কলাতলী যাবো। তারপর আর আসবো না ভিক্ষা করতো। কলাতলী গ্রামে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত পড়ে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে সাংবাদিকের কাছে।
করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে নাম্বারটি ব্যস্ত পাওয়া যায়। সংবাদ লেখা পর্যন্ত তার সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ হয়নি এবং পৌর মেয়রের নম্বরটিও ব্যস্ত পাওয়া যায়।