রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গণসংবর্ধনায় উপস্থিত সর্বসাধারণের উদ্দেশ্যে বলেছেন, এই গুরুদয়াল কলেজ থেকেই আমি ছাত্র রাজনীতি শুরু করেছি। এখানকার মানুষের কাছে আমি রাজনীতি শিখেছি। আমি রাজনীতি করার সময়ে কিশোরগঞ্জে আমি রিকসা সংগঠন করেছি, রিকসাওয়ালা ভাইদের নিয়েও আমি রাজনীতি করেছি। হোটেল রেস্টুরেন্ট শ্রমিক তাদেরকে নিয়েও আমি রাজনীতি করেছি। আমি আপনাদের জন্যই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে বসতে পেরেছি। আপনাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, এই কিশোরগঞ্জবাসীর দোয়ায় আমার মতো একজন সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের দুই দুইবার রাষ্ট্রপতি হয়েছি। এটা আমার বড়ো পাওয়া। আমি মনে করি, এ পাওয়া আমার না সমস্ত কিশোরগঞ্জবাসীর এই পাওয়া। আমি জানি, কিশোরগঞ্জবাসী আমার জন্য দোয়া করেছে। তারা আমার সাফল্য কামনা করেছে। তাদের আন্তরিক কামনাতেই হয়তো আমি দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি হয়েছি। আসলে এটা চরম পাওয়া এই জন্য যে, এ উপমহাদেশে এরকম দ্বিতীয় নজির আর নেই।
সোমবার (০৮ অক্টোবর) বিকেলে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় কিশোরগঞ্জ নাগরিক কমিটি রাষ্ট্রপতিকে এ গণসংবর্ধনা দেয়।
রাষ্ট্রপতি জনগণের উদ্দেশে বলেন, যে দলকে ভোট দিলে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়, দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায় সেই দলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা উচিত। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোকে সৎ, যোগ্য ও ভালো মানুষকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে হবে। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ লুটেপুটে খায় এমন প্রার্থীদের বর্জন করে ভালো মানুষকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রথমবার রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর কিশোরগঞ্জে আমাকে যে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে আমার ভাই আশরাফও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ আশরাফ অসুস্থতার কারণে দেশের বাইরে। আমি দোয়া করি এবং আপনারও আশরাফের জন্য দোয়া করবেন। আমি চাই তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে আবার সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে ফিরে আসুন।
কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশেদা খানম, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতিপুত্র রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, সংরক্ষিত আসনের এমপি দিলারা আসমা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. কামরুল আহসান শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজাল, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও বিসিবির পরিচালক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও রাষ্ট্রপতির ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে কিশোরগঞ্জে একটি পুর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, রেল ব্যবস্থার উন্নতিসহ বেশ কয়েকটি দাবি তুলে ধরলে রাষ্ট্রপতি জবাবে কিশোরগঞ্জের একটি পুণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে দ্রুত আরেকটি আন্তঃনগর রেলগাড়ি কিশোরগঞ্জে যুক্ত করার ঘোষণাসহ রেলব্যবস্থার উন্নয়নে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
এর আগে দুপুর ২টার দিকে রাষ্ট্রপতিকে বহনকারী বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। সেখান থেকে কিশোরগঞ্জ সার্কিট হাউজে পৌঁছালে রাষ্ট্রপতিতে গার্ড অব অনার দেয়া হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতি সার্কিট হাউজে কিশোরগঞ্জ জেলা বার, প্রেসক্লাব, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাজনৈতিক নেতারা, চেম্বার, সরকারি কর্মকর্তাসহ পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করেন। আগামীকাল মঙ্গলবারও তিনি এক সংবর্ধনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।