বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এই সাতজনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আবেদন পৌঁছায়।
মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রত্যাহারের আবেদনের সই যাচাই করে নির্বাচন কর্মকর্তারা তা গ্রহণ করেন।
ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম জানান,
তার অংশে মেয়র পদের প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সাবেক উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ ও নির্দলীয় প্রার্থী মোস্তফা কামাল আজাদী প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
“উত্তরে মেয়র পদে এখন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকলেন ১৬ জন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তাদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে।”
দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের স্টাফ অফিসার নওয়াবুল ইসলাম জানান, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম, ইসলামী আন্দোলনের ইমতিয়াজ আলম, নির্দলীয় আবুল বাশার ও রিয়াজ উদ্দিন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন।
ফলে ঢাকার এ অংশে মেয়র পদে ভোটের লড়াইয়ে থাকছেন মোট ২০ জন।
কবরীর ‘বিধিবাম’, ববি সরলেন ‘চাপে’
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে কবরী সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন।
“আমার টাকা ও লোকবল নেই। এবার বিধিবাম। আমাকে কেউ চাপও দেয়নি।”
উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক সহযোগিতা চাইলে তার পাশে দাঁড়াবেন বলেও জানান এই সাবেক সাংসদ।
কবরী সরে দাঁড়ানোয় এই সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের আর কোনো নেতা থাকলেন না।
প্রধানমন্ত্রী সরে দাঁড়াতে অনুরোধ করেছেন কিনা জানতে চাইলে কবরী বলেন, “এভাবে কোনো অনুরোধ করেননি, ভোটে পারব কিনা তা ভেবে দেখতে বলেছিলেন। রাজনীতিতে একটা ডিসিপ্লিন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান রেখেই প্রত্যাহার করে নিলাম।”
বিতর্কিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের ছেলে ববি হাজ্জাজ তার মনোনয়ন প্রত্যাহারের আবেদন পাঠিয়েছেন ছোট ভাই জুবি মুসার মাধ্যমে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যক্তিগত কারণেই’ ববি ভোটে দাঁড়াতে অনাগ্রহী।
তবে বনানীতে সংবাদ সম্মেলন করে ববি জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে চাপ দেওয়ার অভিযোগ করেন।
“আমাকে যারা সমর্থন করছে একটি দল থেকে তাদের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছিল। গতকাল যখন আমি প্রথমবারের মত গণসংযোগ শুরু করলাম, ওই দিনই আমার দু’জন সমর্থককে ওই দলটি বহিষ্কার করল।”
বুধবার বিকালে ববির সঙ্গে প্রচারে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ সভাপতি এ টি এম গোলাম মওলা চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাকুর রহমান মোস্তাকের বহিষ্কৃত হওয়ার বিষয়টিই তিনি সংবাদ সম্মেলনে এভাবে তুলে ধরেন।
নির্বাচন কমিশন ‘আস্থার জায়গা’ তৈরি করতে পারেনি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
দলের সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হওয়ায় ববি হাজ্জাজকেও গত মাসে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
ঢাকার এ অংশে জাতীয় পার্টি সমর্থনে প্রার্থী হয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল।
বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন একজন আইনজীবীকে পাঠিয়ে। এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে সালামের হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়ই তার স্ত্রী ফাতেমা সালাম বলে রেখেছিলেন, শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরামর্শক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, ঢাকা দক্ষিণে দলের মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসকেই সমর্থন দেওয়া হবে।
অবশ্য বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপনও দক্ষিণের মেয়র পদপ্রার্থী।
ভোটের লড়াইয়ে ৩৬
উত্তরে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন- আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক, জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল, বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল, সিপিবির আব্দুল্লাহ আল ক্কাফী রতন, জাসদ সমর্থিত নাদের চৌধুরী, গণসংহতির মো. জোনায়েদ আব্দুর রহমান সাকি, বিকল্পধারার মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মো. শামছুল আলম চৌধুরী, এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম, কাজী মো. শহীদুল্লাহ, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, চৌধুরী ইরাদ আহম্মদ সিদ্দিকী, মো. আনিসুজ্জামান খোকন, মো. জামান ভূঞা, শেখ শহিদুজ্জামান ও শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ।
দক্ষিণে প্রার্থী হিসাবে রয়েছেন- আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকন, বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, আসাদুজ্জামান রিপন, জাতীয় পার্টি সমর্থিত মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মো. আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ, মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, মো. আব্দুল খালেক, জাহিদুর রহমান, আবু নাছের মোহাম্মদ মাসুদ হোসাইন, বাহরানে সুলতান বাহার, শাহীন খান, দিলীপ ভদ্র, জাসদ সমর্থিত শহীদুল ইসলাম, শফিউল্লাহ চৌধুরী, এ এস এম আকরাম, আব্দুর রহমান, বজলুর রশীদ ফিরোজ, মশিউর রহমান, সাবেক সাংসদ গোলাম মওলা রনি, আয়ুব হোসেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে যারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন তাদের সংখ্যা পরে জানানো হবে।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত প্রতীকের বাইরে অতিরিক্ত প্রতীকও রাখা হয়েছে।
আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই ভাগ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হবে।