মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ২০৩০ সালের আগেই এ দেশ থেকে ক্ষুধা ও দরিদ্রতা দূর হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের জিডিপি’র হার ৬৫২ বিলিয়ন ডলার। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার জিডিপির সক্ষমতা অর্জন করবে।
আজ দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশের জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র’ নামক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাঙালীর রয়েছে উদ্যম শক্তি ও মনোবল। এরা ফিনিক্স পাখির মতো মৃত্যুহীন। এ জাতি সব অর্জন করতে পারে।
বাঙালী জাতির জন্য প্রয়োজন শুধু সঠিক দিক নির্দেশনার। বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নে এই দিক নির্দেশনার কাজটি করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জীবন চক্রের বিভিন্ন ঝুঁকিকে হিসেবে নিয়ে তা মোকাবেলা করতেই বর্তমান সরকার জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র হাতে নিয়েছে ।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সভায় বিআইডিএস এর গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ডিএফআইডি’র (বাংলাদেশ) প্রধান সারা কুক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এম এম আকাশ।
সভায় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বক্তব্য শেষে ‘বাংলাদেশের জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশলপত্র (এনএসএসএস)’ নামক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার দারিদ্র্যতা দূরীকরণে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে পরিচিতি দিতে কাজ করে যাচ্ছি আমরা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সামাজিক নিরাপত্তার অংশ হিসেবে নারী ও শিশুর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালে সরকার দারিদ্র্যতা নিরসনে বিধবা ভাতা বাবদ মাসে ১০০ টাকা করে ভাতার প্রচলন করেছিল, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫শ’ টাকায়। একইভাবে প্রত্যেক হত দরিদ্র এখন মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছে।
স্পিকার বলেন, ‘দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে হবে’। ‘আমরা মাথাপিছু কম বরাদ্দ দিয়ে বেশি সুবিধাভোগী নেব না মাথাপিছু বেশি বরাদ্দ দিয়ে কম সুবিধাভোগী নেব এটা অবশ্যই নীতি নির্ধারণের বিষয় তবে প্রথমে সামাজিক সুরক্ষার জন্য একটি স্থায়ী টেকসই ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে’।
এম এম আকাশ বলেন, ‘২০১৪-১৫ অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষা খাতে সরকার ৩৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। সরকার ৮ কোটি লোককে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে করে প্রত্যেকের ভাগে বছরে ৩ হাজার ৮শ’ ৩০ টাকা করে পড়ে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা ৮ কোটি মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা দেব নাকি চরম হত দরিদ্র ২ কোটি মানুষকে বছরে ১৫ হাজার ৩২০ টাকা করে দেব’।
প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন বলেন, ‘হতদরিদ্র, পশ্চাতপদ এসব প্রত্যয়গুলো উঠিয়ে দিতেই বর্তমান সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম জীবনচক্র ভিত্তিক হওয়ায় শহর ও গ্রামের বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীকে বেশি করে এর আওতায় আনতে হবে’।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম দক্ষতার সাথে পরিবীক্ষণ করতে হবে, যাতে করে সব বয়সের এবং সব সম্প্রদায়ের হত দরিদ্র জনগোষ্ঠী সর্বাধিক সুবিধা পায়’।
সারা কুক বলেন, ‘উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে সামাজিক সুরক্ষাখাতে সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে আমরা আগ্রহী। সামাজিক সুরক্ষা খাতকে সফল করতে গবেষণা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাঁড়ানোর কোন বিকল্প নেই’।
বাংলাদেশে ইউএনডিপি’র কান্ট্রি ডাইরেক্টর পলেন টামেসিস বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমে সবসময় এ বিষয়টিকে প্রধান্য দিতে হবে যেন কোন হত দরিদ্র এ থেকে বাদ না পড়েন এবং তাকে যেন নানা উপায়ে এ কার্যক্রমের সাথে সস্পৃক্ত রাখা হয়’।
এই কৌশলপত্রে সমাজের হতদরিদ্র ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে অর্ন্তভূক্ত করে তাদের জীবনচক্রের ঝুঁকিকে কমিয়ে আনা এবং তাদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা উল্লেখযোগ্য।