বগুড়া অফিস : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে ঘর গুছাতে মরিয়া বড় দুই দল। একসময় আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়লাভ করেন। এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আসনটি ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।
অন্যদিকে হারানো আসনটি ফিরে পেতে চায় বিএনপি। প্রাপ্ততথ্যে ও সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বগুড়া জেলার সাতটি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে এ আসনেই ভোটার সংখ্যা সর্বাধিক। শেরপুর ও ধুনট উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন এবং ২টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৬৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৩২ আর মহিলা ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৩৫ জন। এই আসনে আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সাংসদ ও সাবেক পুলিশ সুপার আলহাজ হাবিবর রহমান, বগুড়া জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শেরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আলহাজ মজিবর রহমান মজনু, শেরপুর পৌর মেয়র ও উপজেলা আ.লীগ সভাপতি আলহাজ আব্দুস সাত্তার, ধুনট উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান টিআই এম নুরুন্নবী তারিক, আওয়ামী মহিলা আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জান্নাতুল ফেরদৌসী রূপা ও শেরপুর শহর মহিলা আ.লীগের সভানেত্রী শিল্পপতি তাহমিনা জামান হিমিকা।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- বগুড়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও শেরপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ জানে আলম খোকা, সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত বিএনপি থেকে নির্বাচিত চারবারের সাংসদ শিল্পপতি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি এস এম শফিউজ্জামান খোকন, ব্যারিস্টার আনোয়ারুল ইসলাম শাহীন ও বগুড়া পৌরসভার মেয়র বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এডভোকেট মাহবুবার রহমান। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে সাবেক এমপি এডভোকেট শাহজাহান আলী তালুকদার এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ তাজ মোহাম্মাদ মনোনয়ন প্রত্যাশী।
এছাড়া জামায়াত নেতা ও শেরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা দবিবুর রহমান শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন প্রাপ্ততথ্যে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে আসনটিতে আওয়ামী লীগ নেতা আমানউল্লাহ খান, ১৯৭৯ সালে বিএনপির হাবিবুর রহমান, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগ নেতা ফেরদৌস জামান মুকুল, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির শাহজাহান আলী তালুকদার, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক পুলিশ সুপার হাবিবর রহমান নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালেও তিনিই নির্বাচিত হন।
হাবিবর রহমান নির্বাচিত হওয়ার পর স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি এবং দলের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগসহ অসুস্থতার কারণে তার জনপ্রিয়তা আগের মতো নেই। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন একাধিক অভিযোগে অনুসন্ধানে নেমেছে। শেরপুর ও ধুনট উপজেলার আ.লীগ এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে বর্তমান সাংসদ হাবিবর রহমানের অনুসারী নেতাকর্মী, অন্যদিকে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনয়ন প্রত্যাশী আলহাজ মজিবর রহমান মজনুর অনুসারীরা। ইতোমধ্যে নৌকায় ভোট চেয়ে এই দুই মনোনয়ন প্রত্যাশীর পক্ষে পৃথক পৃথক শোডাউন হয়েছে।
ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অনেকটাই দুর্বল। নির্বাচনী উৎসবের আমেজে এসেছে। এই অবস্থায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মুখ ছিল বেজার। এরই মধ্যে কিছুদিন আগে নির্বাচনী মাঠে নামেন বিএনপির কয়েক নেতা। তাদের মধ্যে অন্যতম সরব জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জানে আলম খোকা। নবম (২০০৮) সাধারণ নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। হেরে যান আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমানের কাছে। একাদশ নির্বাচনে তিনি কেবল সম্ভাব্য প্রার্থী হয়ে ঘর গোছাচ্ছিলেন। হঠাতই সাবেক সংসদ সদস্য সংস্কারপন্থী হিসাবে পরিচিত গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বিএনপিতে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি সহজ ভাবে মেনে নিতে পারছেন না’ জানে আলম খোকা।