মেঘের চাদরে ঢাকা থাকল দিন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা খুঁজে পেলেন না আলোর পথ। দ্বিতীয় ইনিংসেও উইকেট বিলিয়ে মাহমুদউল্লাহ-মুমিনুলরা অন্ধকার আরও ঘোর করে তুললেন সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। ভেন্যুটির টেস্ট অভিষেকের সব আয়োজন ভাঙল আগাগোড়া ব্যাটিং ব্যর্থতার এক হারে।
বাংলাদেশকে ১৫১ রানে হারিয়ে দুই ম্যাচ সিরিজে লিড (১-০) নিল জিম্বাবুয়ে। ৩২১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা স্বাগতিকদের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় চতুর্থ দিনের চা-বিরতির আগেই, ১৬৯-এ। ১১ নভেম্বর মিরপুর সিরিজ বাঁচানোর টেস্টে নামতে হবে বাংলাদেশকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: জিম্বাবুয়ে-২৮১ ও ১৮১, বাংলাদেশ-১৪৩ ও ১৬৯
বাংলাদেশের যেখানে বিষাদ, জিম্বাবুয়ের সেখানেই উচ্ছ্বাস। ৫ বছর পর টেস্ট জিতল জিম্বাবুইয়ানরা। বিদেশ সফরে তাদের টেস্ট জিততে ফুরাল ১৭ বছরের অপেক্ষা। সবশেষ ২০০১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রামে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিল অতিথি দলটি। আর দেশের মাটিতে তাদের সবশেষ জয় ২০১৩ সালে সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
দেশের আটটি টেস্ট ভেন্যুর সাতটিতেই অভিষেক ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। অথচ জয়ের মুখ দেখেনি একবারও। সিলেট স্টেডিয়ামের অভিষেকে প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হওয়ায় আশাটা বেড়েছিল। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় টানা চার টেস্ট জয়ের পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিশাল ব্যবধানে হার দেখল বাংলাদেশ।
জিততে হলে গড়তে হতো রেকর্ড। ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস তৃতীয় দিন শেষ করেন ২৬ রানে অপরাজিত জুটি রেখে। হাতে ১০ উইকেট, পুরো দুই দিন। লক্ষ্যটা নেমে আসে ২৯৫-এ। প্রথম দিনের মতো দর্শকে ভরে গেল স্টেডিয়াম। আশা নিয়েই এসেছিলেন তারা।
কিন্তু দেখলেন ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমর্পণ, আসা-যাওয়ার প্রথম ইনিংসের মতো একাই কিছুটা লড়াই করলেন আরিফুল হক। প্রথম ইনিংসে ৪১ রানে অপরাজিত থাকা এ ডানহাতি ৩৮ করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যাচ তুলে দেয়ার পরই স্টাম্প তুলে উদযাপনে মাতে জিম্বাবুয়ের ফিল্ডাররা।
মেঘাচ্ছন্ন সকালে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দেখেশুনেই। ইমরুলের চেয়ে সাবলীল ছিলেন লিটন। কিন্তু বল নির্বাচনে ভুল করে ফেলেন হঠাৎ করেই। অফস্পিনার সিকান্দার রাজার গুডলেংথ ডেলিভারি স্কয়ার লেগের দিকে ঘোরাতে চেয়েছিলেন। বল ঘোরেনি মোটেও, তবে শরীরটা ঠিকই ঘুরল লিটনের। বল গিয়ে সোজা আঘাত হানল থাইপ্যাডে। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে প্রথম উইকেটের উদযাপনে মাতে জিম্বাবুয়ে।
লিটনের ৭৩ বলে ২৩ রানের ইনিংসে ছিল ৩টি চারের মার। ডানহাতি এ ওপেনার ফেরার পর ফিরে যান মুমিনুল হক (৯)। জার্ভিসের বলে বোল্ড হন এ বাঁহাতি। পরে আর কোনো জুটিই গড়ে ওঠেনি। ওপেনিং জুটির ৫৬ রানই ইনিংসের সেরা।
ইমরুল ৪৩, মাহমুদউল্লাহ ১৬, শান্ত ও মুশফিক করেন ১৩ রান করে। আর কেউ ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক।
এ ম্যাচেই অভিষিক্ত লেগস্পিনার ব্রেন্ডন মাভুতা ২১ রানে নেন চার উইকেট। অফস্পিনার সিকান্দার রাজা তিনটি, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা দুটি, পেসারদের মধ্যে কাইল জার্ভিস নেন একটি উইকেট।
আর দুই ইনিংস মিলিয়ে ১১টি উইকেট নেয়া তাইজুল ইসলাম চেয়ে চেয়ে দেখলেন তাদের উল্লাস! দেখলেন কি অসহায় আত্মসমর্পণে করে সতীর্থরা উইকেট বিলিয়ে এলেন তার প্রথম দশ উইকেট পাওয়া টেস্টের মঞ্চে।