সিএমএম কোর্টের জামিননামা পুলিশের মাধ্যমে দাখিল এবং রেজিস্ট্রি করা সংক্রান্ত বিষয়টি কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আইন সচিব, সিএমএম কোর্টকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সিএমএম কোর্টের জামিননামা পুলিশের মাধ্যমে দাখিল এবং রেজিস্ট্রি করা সংক্রান্ত বিধানটি স্থগিত রাখারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট রাশেদুল হক। এর আগে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মুকসেদ আলী। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন হাইকোর্ট।
এই আদেশের ফলে মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে কোনো আসামির জামিন হওয়ার পর জামিননামা দাখিল এবং বিচারকের স্বাক্ষর (সই) মধ্যে আর কোনো ভূমিকা থাকছে না। এর ফলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমবে বলে আশা করছেন আইনজীবীরা। আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মুকসেদ আলী।
আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মুকসেদ আলী সাংবাদিকদের জানান, কোনো ফৌজদারি মামলায় আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ার আগে বিচারক আসামির জামিন মঞ্জুর করলে আইনজীবীর জামিননামা দাখিল করতে হয় পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা শাখায়। সেখানে পাঁচটি ধাপে জামিন আদেশ তৈরি করে পাঠানো হয় বিচারকের কাছে। বিচারকের সই হওয়ার পর সেই আদেশ কারাগারে পাঠালে জামিনে মুক্তি মিলত বিচারপ্রার্থীর।
আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা বলছেন, এই কাজে সাধারণ নিবন্ধন শাখায় প্রতিটি ধাপ পার হতে পুলিশকে ‘খরচাপাতি’ দিতে হত। তাতে বিচারপ্রার্থীকে পোহাতে হত ভোগান্তি।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরো গত ১২ সেপ্টেম্বর পুরনো ওই প্রক্রিয়া বাতিল করে দিয়েছিলেন। তিনি নতুন যে নিয়ম চালু করেছেন, তাতে যে বিচারক জামিন দেবেন, সেই আদালতের সাঁটলিপিকারের মাধ্যমে জামিননামা দাখিল করতে হবে।
এরপর ঢাকার বর্তমান মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জাহিদুল কবির ১৬ অক্টোবর অপর মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরোর ১২ সেপ্টেম্বরের আদেশ বাতিল করে দেন। ১৬ অক্টোবরের আদেশ ১৭ অক্টোবর থেকে চালু হবে বলে আদেশে বলা হয়, ফলে আবার পুরনো নিয়ম পুলিশের মাধ্যমে জামিননামা দাখিল ও রেজিস্ট্রির বিধান চালু হয়।
এরপর বর্তমান মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জাহিদুল কবিরের ১৬ অক্টোবরের ওই অফিস আদেশ চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মুকসেদ আলী। রোববার ওই রিটের ওপর শুনানি নিয়ে আদালত রুলসহ আদেশ দেন।
পরে আইনজীবী জানান, সিএমএম কোর্টের জামিননামা পুলিশের মাধ্যমে দাখিল এবং রেজিস্ট্রি করা সংক্রান্ত বিষয়টি অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। সঙ্গে রুলও জারি করেছেন। রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই বিধান স্থগিত করেছেন আদালত।
এর ফলে এখন থেকে সাঁটলিপিকার নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শেষে বিচারকের কাছে জামিন আদেশ পাঠাবেন স্বাক্ষরের জন্য। এই প্রক্রিয়ায় আর পুলিশের সংশ্লিষ্টতা থাকবে না।