উপকূলীয় বরগুনা জেলার তালতলীর নিশানবাড়িয়াতে চীন-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। তেতুঁলবাড়িয়া এলাকায় খুলনা শিপ ইয়ার্ডের সম্প্রসারন ডক ইয়ার্ড তৈরী হচ্ছে। দেশের অন্যতম শিল্প গ্রুপ যমুনা ৫ শ একর জমি ক্রয় করছে স্টিল মিল, জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প, ও আইসোটেক গ্রুপ বিদ্যুত কেন্দ্র তৈরী প্রভৃতি স্থাপনার জন্য করে যাচ্ছেন কাজ । অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের প্রত্যন্ত বরগুনা জেলা শিল্প এলাকার তকমা পেতে যাচ্ছে।
এ জেলায় প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। রয়েছে প্রচুর পরিমানে আবাদি এবং অনাবাদি জমি, বনরাজি এবং পর্যটন কেন্দ্র সোনাকাটা, হরিণঘাটা। এখানে বসবাস করে ঐতিহ্যবাহী রাখাইন সম্প্রদায়। জেলার ৬ টি উপজেলায় আরও বিভিন্ন ধরনের ছোট এবং মাঝারি শিল্প, কল-কারখানা গড়ে ওঠার উপযোগিতা রয়েছে। জেলায় শিল্প কল কারখানার তৈরী হলে একদিকে যেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে তেমনি স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থান, আর্থিক উন্নয়ন ও শিক্ষা-দীক্ষাসহ জীবন-যাত্রায় আমুল পরিবর্তন আসবে। শুধু শিল্প কারখানাই নয় তার পাশাপাশি আইসোটক গ্রুপ মানুষের জন্য হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, পাঠাগার ইত্যাদিও তৈরী করে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, -তাপবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠান আইসোটেকের চেয়ারম্যান মইনুল আলমের বরাত দিয়ে মিডিয়া অ্যাডভাইজার ফিরোজ চৌধুরি নিশ্চিত করেছেন।
বরগুনা জেলাটি কৃষি নির্ভর হলেও এখানে মৎস্যজীবিদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। রয়েছে প াশ হাজারের বেশি জেলে পরিবার। এখানকার জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরের ও খর¯্রােতা নদীগুলো থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ শিকার করে। বেশীরভাগ সময়েই আহরিত মাছ পঁচে যাওয়ার ভয়ে স্বল্প মূল্যে জেলেরা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়। মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য অন্য এলাকায় পাঠাতে হয়। ঢাকা, যশোর, খুলনা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আড়ৎ মালিকরা প্রক্রিয়াজাত করনের জন্য এখানকার মাছ কিনে নিয়ে যায়। এ জেলার পাথরঘাটায় একটি প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র থাকলেও আমতলী ও তালতলীতে প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপন ও বরফকলের প্রয়োজনীয়তা বহু দিনের, জানিয়েছেন জেলে ও আড়তদাররা।
বরগুনার জেলা চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, তালতলী উপজেলার সাগর পাড়ের আশার চরে রয়েছে শুঁটকি পল্লী। কয়েক হাজার মানুষ শুটকি পল্লীতে কর্মরত। দেশের বিভিন্ন পোলট্রি ও ফিস ফিডের কারখানাগুলো তালতলী থেকে কাঁচামাল হিসেবে শুুঁটকি সংগ্রহ করে ট্রলার ও ট্্রাক ভর্তি করে নিয়ে যায়। শুঁটকিকে কেন্দ্র করে এখানে পোল্ট্রি ও ফিস ফিড শিল্প গড়ে উঠতে পারে।
বরগুনার পায়রা, বিশখালী নদী থেকে আহরন করা হয় গলদা ও বাগদা রেনু পোনা। বাগের হাট, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমা লের চিংড়ি ঘেরগুলোতে রেনু পোনা রপ্তানী করা হয়। চিংড়ির রেনু পোনা উৎপাদনের জন্য মৎস্য হ্যাচারী এবং বানিজ্যিক চাষের জন্য ঘের শিল্প গড়ে তোলা খুবই সহজ, আলাপ কালে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহেদ আলী।
কৃষি বিভাগের সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ জেলার জলাভূমিগুলোতে প্রচুর পরিমানে শামুক পাওয়া যায়। চুন তৈরীর উপকরণ ও মাছের খাদ্য হিসেবে সেগুলি চালান হয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। শামুককে কেন্দ্র করে কুটির বা ছোট শিল্প গড়ে তোলা স্বল্প বিনিয়োগের ব্যাপার।
স্থানীয় চাষীরা ধান, বাদাম, ডাল, মিষ্টি কুমড়ো, আলু, তরমুজ, বাঙ্গিসহ নানা জাতের ফসল উৎপাদন করে থাকে। কিন্তু সংরক্ষনের জন্য এখানে অদ্যাবদি কোন হিমাগার গড়ে ওঠেনি।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহি নূর আজম জানিয়েছেন, এখানকার জমিতে আউস, আমন,ইরি, বোরোসহ নানা জাতের ধান চাষ হয়ে থাকে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরে উৎপাদিত ধান দিনাজপুর, মুন্সিগঞ্জ, মদনগঞ্জ, নারায়নগঞ্জে চালান করা হয়। সেখানে যন্ত্রের মাধ্যমে সাধারন ধান থেকে বাহারী নামের ও আকৃতির চালে রুপান্তর ঘটিয়ে কয়েকগুন বেশী দামে আবার এই অ লেই বিক্রি করা হচ্ছে। ধানের প্রাচুর্যতার উপর ভিত্তি করে জেলার সকল উজেলাতেই একাধিক করে আধনিক রাইস মিল গড়ে উঠতে পারে।
বরগুনার সদরের বালিয়াতলী এবং তালতলী উপজেলায় রয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাস। এ দুটি স্থানে রাখাইনদের নিজস্ব তাঁত শিল্প রয়েছে। প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা, -জানিয়েছেন কমিউনিটি নেতা উসিট মং।
বরগুনার মাটি দিয়ে ভালো মানের ইট তৈরী হওয়াতে ছোটবড় মিলিয়ে এ জেলায় হাজার খানেক বৈধ ও অবৈধ ইটের ভাটা, ব্রিকস ফিল্ড রয়েছে। এগুলোকে আইনের আওতায় এনে সঠিক নির্দেশনায় ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত করা গেলে এটিও হতে পারে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র।
তালতলী, সোনাকাটা, আশারচর, ফকিরহাট, বরগুনার বালিয়াতলী, বেতাগীর বিবিচিনি, পাথরঘাটার হরিণঘাটসহ বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পটকে কেন্দ্র করেও পর্যটন শিল্পের অমিয় সম্ভাবনা রয়েছে।