হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামে এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। সোনালী ধানে আর কুয়াশা পূর্ণ সকালের রৌদ আর কৃষকদের ধান কাটার ধুম যেন নতুন এক আনন্দের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এক ফসলী বোরো উৎপাদন এই অঞ্চলের এ উপজেলায় এভাবে আমনের ফসল এভাবে আমনের ফলন আর কখনো হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে বোরো উৎপাদন করতে গিয়ে এই অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ট কৃষকের বিপন্ন ও বিব্রত হয়ে পড়েছে। ফলে আমন উৎপাদনে কৃষকরা ঝুঁকে পড়ছে। বাম্পার ফলনের দাম ও ভাল থাকায় কৃষকদের মনে আনন্দের সৃষ্টি বয়ছে।
সূত্র জানা যায়, ৭৬ হাজার একর ভূমির মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার একর জমি একমাত্র বোরো ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। উৎপাদিত ফসলের ২০ শতাংশ স্থানীয় খাদ্য চাহিদা পূরণ করে বাকি ৮০ ভাগই ধান দেশের নামকরা বাজার বন্দর সরকারি গুদামে বিক্রির দ্বারা জাতীয় খাদ্য চাহিদায় যোগান হয়ে থাকে। গত কবছর ধরে ধান কাটার মৌসুমে অকাল বন্যা সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বোরো ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় কৃষকদের মানসিক ও আর্থিক ভাবে বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এমনকি সরকারি ভাবে চাল, নগদ টাকা এবং কৃষি পূর্ণবাসন প্রকল্পের সার, বীজ নগদ টাকা অনুদান প্রদান করা হয় এবং অনুদানে কৃষকদের জীবন অনেকটাই রক্ষা পায়। এছাড়াও এই উপজেলায় অধিকাংশ ছোট মাঝারি প্রান্তিক বর্গাচাষীর সংখ্যাই বেশি। তবে প্রান্তিক চাষীরাও ধান কাটার মৌসুমে এই সব গরীব চাষীরাও জোতদারদের জমিতে ধান কেটে বছরের খাবার সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছরের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এই উপজেলার ০৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নেই আমনের আবাদ করেছে।
হাওরাঅঞ্চলের বিভিন্ন আবাদী ঘুরে দেখা যায় সদর ইউনিয়নে উত্তর বন্দ, দক্ষিণ বন্দ, কাস্তুলের জিংগা মোড়ার মাঠ, ছাইও বড় হাওর, মসজিদেজামের হাওর, ভাতলার হাওর, পূর্ব অষ্টগ্রামের ইকরদিয়া, খাওরাইল, শেখেরহাটি, কালীপুর, বাংগালপাড়া ইউ.পি, কুড়েরপাড়ের হাওর, ভাটিনগরের হাওর, লাউড়া নাজিরপুরের হাওর আদমপুরের, চৌদন্তের, নুরপুর ভাটুরা, খয়েরপুর আব্দুল্লাপুরের উত্তর ও দক্ষিণের হাওর, সমারচরের হাওর কদমচালের হাওর সহ ইত্যাদি ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি হাওরেই এখন আমন ধান পেকে সোনালী হয়ে গেছে। কৃষক কৃষাণীরা মহা ব্যস্ত সময় পার করছে। ধান কাটা, মাড়াই, বাছাই, রোদে শুকানে এযেন এখন মহাযজ্ঞে পরিণত হয়ে পড়েছে।
পূর্ব অষ্টগ্রাম শেখের হাটি জোতদার আঃ আওয়াল জানান তিনি ৩৫ একর জমিতে আমনের আবাদ করেছেন এবং ধান কেটে বাড়িতে আনতে শুরু করেছে। প্রতি একর জমিতে ৬০ থেকে ৭০ মন ধান হয়েছে। কদমচালের সুবাহান, কাস্তুলের ছবুর, বাংগালপাড়ার মোতালিব, সুনন্দ দাস সহ অসংখ্যা কৃষক জানান এবারের মত আমনের ফলন আর কখনো হয়নি। প্রতি একরে ৫০ থেকে ৬৫ মন ধান ফলেছে। এই ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আনিসুল হক জানান এই উপজেলার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪শ হেক্টর। কিন্তু তা ছাড়িয়ে প্রায় ৯শ হেক্টরের উপরে ফলন হয়েছে এবং দাম ও বেশি পাচ্ছে কৃষকেরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সালাহউদ্দিন জানান, বর্ষার পানি এ বছর দ্রুত কমে যাওয়ায় জমিতে আমন করা হয় এবং বাম্পার ফলন হয়েছে। এই আমন ধানের উৎপাদনের ফলে কৃষকদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা সহ হাওরের আর্থ-সামাজিকতার উন্নতি ঘটাবে বলে জানান তিনি।