কিশোরগঞ্জের ভৈরবে যৌন হয়রানীর কারণে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে পারেনি কালিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী। এ ঘটনাটি ঘটেছে ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ আতকাপাড়া গ্রামে।
জানা গেছে প্রতিদিনের ন্যায় রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা করে কালিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণি শিক্ষার্থীরা। এ সুযোগে এলাকার কিছু বখাটে ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েদের অশ্লীল ও আপত্তিকর কথাবার্তা সহ বিভিন্নভাবে উক্ত্যক্ত করে। ওই বখাটেরা এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছেলে হওয়ায় তাদের কিছু বলা যায় না।
রবিবার নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী আশামনি ও পাপিয়া বার্ষিক পরীক্ষা শেষে বিকাল ৪টার দিকে বাড়ি যাওয়ার পথে রাস্তার মধ্যে একই এলাকার বখাটে ৩ ছেলে মোটর সাইকেল যোগে এসে আশামনি ও পাপিয়াকে উত্যক্ত করছিল।
এসময় পাপিয়ার চাচা আফতাব উদ্দিন প্রতিবাদ করায় তার বাকবিতন্ডা হয়। এ সময় এলাকাবাসী উত্তেজিত হলে তারা ফিরে আসে। ঘণ্টা খানেক পর বখাটেরা দলবেধে হামলা করতে আসলে এলাকা বাসীর ধাওয়া আবার পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে আশামনির পিতা,চাচারা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করলে ফোনযোগে তাদের বিদ্যালয়ে যেতে বলা হয়। বিদ্যালয় থেকে ফেরার পথে সে বখাটেরা দল বেধে তাদের উপর হামলা করে। ওই হামলায় আহত হয় আশামনির পিতা আল আমিন মিয়া, দাদা গোলাপ মিয়া, আসকর, ফজলুল, বাবুল ও আলমগীর।
এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে আল আমিন ও গোলাপ মিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় ও বাকীদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
আশামনির পিতা আহত আল আমিন মিয়া জানান, গতকাল পরীক্ষা দিয়ে আমার মেয়ে ও তার বান্ধবী বাড়িতে ফেরার পথে আব্দুল লতিফের বখাটে ছেলে এনামুল ও এমলা ছয়েদ এর বখাটে ছেলে ইয়াছিনসহ আরো কয়েকজন বন্ধু ইভটিজিং করে। পরবর্তীতে এলাকার বাকবিতন্ডের ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা আমাকে বিদ্যালয়ে যেতে বলে তখন বিদ্যালয়ের কমিটিসহ প্রধান শিক্ষককে এ বিষয়ে অবগত করলে তারা মেয়ে যেন পরীক্ষাগুলো দিতে পারে এ বিষয়ে আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে আমরা বাড়িতে ফেরার পথে রাস্তায় আমাদের উপর ওই বখাটেরা অতর্কিত হামলা চালায়। আমার মেয়ে ও বান্ধবী পাপিয়া বখাটেদের ভয়ে আজকে তাদের পরীক্ষা দিতে পারেনি। বর্তমানে আমার মেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিয়াকত আলী জানান, ইভটিজিংয়ের ঘটনাটি ফোনে জানতে পেরে বিদ্যালয় কমিটিকে জানিয়ে তাদের রাত ৮টায় আসতে বলি। এ সময় তাদের কাছ থেকে সব কিছু জেনে তারা ফেরার পথে তাদেরকে কে বা কারা হামলা করে আহত করে। আশামনি ও পাপিয়া পরীক্ষা দিতে আসেনি। তবে বাকী পরীক্ষাগুলো যেন দিতে পারে সে বিষয়ে বিদ্যালয় কমিটি ও বখাটেদের আত্মীয়দের জানানো হয়েছে যেন তাদেরকে সতর্ক করা হয়। তারপরও যদি তারা সতর্ক না হয় তাহলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবে।
কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়ের চেয়ারম্যান মো. ফারুক মিয়া জানান, গতকাল আমার চাচা মারা যাওয়ায় আমি দিনভর ব্যস্ত ছিলাম। ফোনের মাধ্যমে খবর পেলেও কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এ প্রতিনিধির কাছে এখন জানতে পেরেছে। এলাকাবাসীর সহায়তা নিয়ে শালিস দরবারের মাধ্যমে মীমাংসার প্রস্তুতি নিব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত সাদমীন জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। অতি শীঘ্রই বখাটেদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ২ শিক্ষার্থী যেন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে।
ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোখলেছুর রহমান জানান, এ বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি, অভিযোগ আসলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Tags: