স্পোর্টস ডেস্কঃ জিম্বাবুয়ে, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার পর আবারও জিম্বাবুয়ে- ঘরের মাঠে টানা পাঁচটি ওয়ানডে সিরিজ জয়ের কীর্তি গড়ল বাংলাদেশ।
সোমবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ৫৮ রানে হারায় বাংলাদেশ। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে নিজেদের করে নেওয়ার পাশাপাশি প্রথমবারের মতো টানা পাঁচটি সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের নবম দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ জয়। আর সব মিলিয়ে ২০তম।
মিরপুরে আগে ব্যাট করে ইমরুল কায়েসের ফিফটিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪১ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৩.২ ওভারে ১৮৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
২৪২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা জিম্বাবুয়ে শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন স্পিনার আরাফাত সানী। রেগিস চাকাভাকে (১) এলবিডব্লিউ করে ২২ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আরাফাত। পরের ওভারে এসেই আরেক ওপেনার চামু চিবাবাকে বিদায় করেন মাশরাফি। ১৪ রান করা চাকাভাকে বোল্ড করেন বাংলাদেশের সেরা এই পেসার।
আরাফাত ও মাশরাফির পর জিম্বাবুয়ে শিবিরে আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ৪৫ রানে দারুণ এক অফ কাটারে শন উইলিয়ামসকে ফিরিয়ে সিরিজে নিজের প্রথম উইকেট শিকার করেন এই তরুণ তুর্কি। শর্ট মিড উইকেটে নাসিরকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন উইলিয়ামস (১৪)।
দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর পর ক্রেইগ আরভিন ও এল্টন চিগুম্বুরা মিলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে আরভিনকে (২৬) সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করে ৩৩ রানের জুটি ভাঙেন ব্যাট হাতে ব্যর্থ হওয়া লিটন দাস। আরাফাতের বল মিড অফে পাঠিয়ে সিঙ্গেলের জন্য দৌড় দেন আরভিন। তবে তিনি ক্রিজে পৌঁছার আগেই দুর্দান্ত এক থ্রোয়ে নন-স্ট্রাইকার প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে দেন লিটন।
৭৮ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেটে সিকান্দার রাজাকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন চিগুম্বুরা। রানের চাকা সচল রেখে ব্যবধান কমিয়ে আনেন দুজন। বার বার বোলার পরিবর্তন করেও যখন সফলতা মিলছিল না, তখন ইনিংসের ৩৪তম ওভারে আল-আমিনকে আক্রমণে নিয়ে আসেন অধিনায়ক মাশরাফি। আর এই ওভারেই রাজাকে ফিরিয়ে ৭৩ রানের বড় জুটি ভাঙেন আল-আমিন। মিড অনে ইমরুল কায়েসের হাতে ধরা পড়েন রাজা (৩৩)।
নিজের পরের ওভারে এসে চিগুম্বুরাকেও (৪৭) বিদায় করেন আল-আমিন। চিগুম্বুরার ক্যাচটিও নেন ব্যাট হাতে বাংলাদেশকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেওয়া ইমরুল। আল-আমিনের বাউন্সার বল আপার কাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ইমরুলের হাতে ক্যাচ দেন জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক।
দলীয় ১৭৫ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ম্যালকম ওয়ালারকে ফিরিয়ে দেন নাসির। এরপর ইনিংসের ৪৩তম ওভারে মুস্তাফিজ লুক জংইউ ও তিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে বিদায় করলে ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে পড়ে জিম্বাবুয়ে। আর পরের ওভারে নাসিরের বলে ক্রেমারকে স্টাম্পিং করে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মুশফিক।
৩৩ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার মুস্তাফিজ। আল-আমিন ও নাসির নেন ২টি করে উইকেট। এ ছাড়া মাশরাফি ও আরাফাতের ঝুলিতে জমা পড়ে একটি করে উইকেট।
এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে বড় কোনো জুটি গড়তে না পারলেও ইমরুলের ফিফটিতে লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭৬ রান আসে সাকিবের বদলে একাদশে সুযোগ পাওয়া ইমরুলের ব্যাট থেকেই। এ ছাড়া নাসির হোসেন ৪১, সাব্বির রহমান ৩৩ ও মুশফিকুর রহিম ২১ রান করেন।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে তিনাশে পানিয়াঙ্গারা সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন ৪১ রানের বিনিময়ে। এ ছাড়া তাউরাই মুজারাবানি ও গ্রায়েম ক্রেমারের ঝুলিতে জমা পড়ে দুটি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২৪১/৯ (ইমরুল ৭৬, নাসির ৪১, সাব্বির ৩৩, মুশফিক ২১, তামিম ১৯, মাশরাফি ১৩; পানিয়াঙ্গারা ৩/৪১, মুজারাবানি ২/৪৭, ক্রেমার ২/৪১)।
জিম্বাবুয়ে: ৪৩.২ ওভারে ১৮৩ (চিগুম্বুরা ৪৭, রাজা ৩৩, আরভিন ২৬; মুস্তাফিজ ৩/৩৩, আল-আমিন ২/২২, নাসির ২/৩৬, আরাফাত ১/৩৪, মাশরাফি ১/৪৭)।
ফল: বাংলাদেশ ৫৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: ইমরুল কায়েস।