অবশেষে এরশাদ দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে তিনি দেশে ফিরবেন বলে জানা গেছে।
আজ রোববার সিঙ্গাপুরে ভারতীয় দু’জন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে দীর্ঘ দুই ঘন্টার বৈঠকের পর এরশাদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে। দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত এরশাদ তার একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ডা. মোস্তাফিজুর রহমানকে জানিয়েছেন।
সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন ‘আগামীকাল সোমবার সিঙ্গাপুর সময় সকাল ৮টায় ন্যাশনাল হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে দেখবেন। তারা দেশে যাওয়ার ছাড়পত্র দিলেই তিনি দেশে ফিরেবেন।’
দূতাবাসের ঐ কর্মকর্তা বলেন, ‘এরশাদ সাহেব যেহেতু মন্ত্রীর মর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি, তাই দূতাবাস সার্বক্ষনিক ভাবে তার দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে।’
কিন্তু একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে, ১১ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর আসার পর তার একটি রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। এসময় এরশাদ সিঙ্গাপুরে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করতে দিল্লী থেকে দুজন কর্মকর্তা সিঙ্গাপুরে উড়ে আসেন। তারা এরশাদকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি যেন মহাজোটেই থাকেন। এক্ষেত্রে, তার কোন সমস্যা হবে না।
সূত্র মতে, মহাজোটে থাকার শর্ত হিসেবে এরশাদ তার বিরুদ্ধে ঝুলে থাকা মঞ্জুর হত্যা মামলার চুড়ান্ত নিষ্পত্তি চান। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ ব্যাপারে তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের পরপরই তার বিরুদ্ধে থাকা যাবতীয় মামলা গুলোর সুরাহা করা হবে। এর বিনিময়ে এরশাদ ২৩ ডিসেম্বরের আগেই ঢাকা ফিরবেন এবং মহাজোটের পক্ষে নির্বাচনী প্রচরণায় অংশ নেবেন।
এছাড়াও, এরশাদ উন্মুক্ত আসনে দাঁড়ানো তার ১৩২ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০০ জনকেই প্রত্যাহার করে নেবেন বলে জানা গেছে। অবশ্য এর বিনিময় তিনি নতুন সরকারের মন্ত্রীসভায় তার পছন্দের ৪ জন মন্ত্রী নিয়োগের দাবী করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এরশাদের সব দাবীই নির্বাচনের পর বিবেচনার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, আজ সকালে মেরিনা বে হোটেলে এরশাদের সঙ্গে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। বৈঠকের পর এরশাদ হাস্যোজ্জল ছিলেন। সেখান থেকেই তিনি জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাকে ফোন করেন। এরশাদ জাতীয় পার্টির নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার করার নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে মহাজোটের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পর্যায়ে হঠাৎ বেঁকে বসেছিলেন এরশাদ। মহাজোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হন। এখান থেকে বেরিয়ে ১০ ডিসেম্বর তিনি সিঙ্গাপুরে উড়াল দেন। মহাজোটে ২৯টি আসন পেয়ে অসন্তুষ্ট এরশাদ ১৩২টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে তার দলের প্রার্থী দিয়েছিলেন। এরশাদ সিঙ্গাপুরে গেলে তার পিছনে যায় বাংলাদেশের কয়েকজন সরকারী প্রতিনিধি। দীর্ঘ দরকষাকষির পর শেষ পর্যন্ত এরশাদ বশীভূত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সূত্র: বাংলা ইনসাইডার