দেবর-ভাবি খেলার সমাপ্তির পরে শূন্য আসনে অবশেষে প্রার্থী পেল বিএনপি। দেবরের প্রার্থীতা বাতিলের পর ভাবিই হলেন প্রার্থী। এবার ধানের শীষের প্রার্থীতা পেলেন মাসুদা মোমিন। প্রতীক বরাদ্দ পেলেই ভোটের মাঠে নামবেন তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে ভোটের মাঠে বিএনপির প্রার্থী শূন্য হয়েছিল। ফলে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা দেখা দেয়। বিএনপির প্রার্থী আদমদীঘি বিএনপির সভাপতি আবদুল মুহিত তালুকদারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ আটকে যাওয়ায় ফাঁকা মাঠে গোল দিতে যাচ্ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধিন মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ নুরুল ইসলাম তালুকদার (লাঙ্গল)। (এ তথ্য তুলে ধরে ‘সময়ের কন্ঠস্বর’ এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়)।
অবশেষে জল্পনা কল্পনার মাঝে ফের ভোটের মাঠে ফিরেছে ধানের শীষ। এবার বিএনপির প্রার্থী হলেন সাবেক সাংসদ আবদুল মোমিন ওরফে খোকা তালুকদারের স্ত্রী মাসুদা মোমিন। উচ্চ আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও মো. খায়রুল আলমের দ্বৈত বে মাসুদা মোমিনের নামে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ফেরদৌস আলম আলফা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে সন্তুষ্ট জানিয়ে মাসুদা মোমিন বলেন, ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার সুযোগে ছিলেন মহাজোটের প্রার্থী। বগুড়া-৩ আসনে ধানের শীষের কোনো প্রার্থী ছিল না। আদালতের রায়ের মাধ্যমে সেই শূন্যতা কেটে গেছে। প্রতীক বরাদ্দ পেলেই আমি গণসংযোগে নামব।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া-৩ আসনে বিএনপি থেকে মোট ১২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন আবদুল মোমিন, তার স্ত্রী মাসুদা মোমিন ও ছোট ভাই আবদুল মুহিত তালুকদার ছিলেন। পরে এ আসনে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয় সাবেক সাংসদ আবদুল মোমিন ওরফে খোকা তালুকদারের স্ত্রী মাসুদা মোমিনকে। এরপর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত দলীয় চিঠিতে প্রার্থী পরিবর্তন করে মাসুদা মোমিনের পরিবর্তে তার দেবর আদমদীঘি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মুহিত তালুকদারকে ধানের শীষের প্রার্থী করা হয়। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে না যাওয়ায় মুহিত তালুকদারের মনোনয়ন বাতিল করেন বগুড়ার রিটার্নিং অফিসার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ।
প্রার্থীতা ফিরে পেতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করলে সেখানেও মুহিতের প্রার্থিতা বাতিল হয়। পরে হাইকোর্টে আবেদন করেন বিএনপির এই প্রার্থী। রিটের শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে মুহিত তালুকদারের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা দেয় হাইকোট। বিএনপির পক্ষ থেকেও মুহিতকে ধানের শীষের চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করে। সেই অনুযায়ী আবদুল মুহিত তালুকদারকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এরপর মুহিত তালুকদারের প্রার্থিতা বহালের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে নির্বাচন কমিশন। গত ১১ ডিসেম্বর চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য পাঠান। শুনানি শেষে গত ১৭ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ চেম্বার বিচারপতির দেওয়া স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন। ফলে মুহিত তালুকদারের প্রার্থিতা আটকে যায়। বগুড়া-৩ আসনে দেবর-ভাবি ছিলেন বিএনপির ডাবল মনোনীত প্রার্থী। নির্বাচনে দেবরের অংশগ্রহণ আটকে যাওয়ার পর প্রার্থীতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন ভাবি মাসুদা মোমিন। পরে শুনানি শেষে মাসুদা মোমিনের নামে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
এই আসনে ‘নৌকা’ প্রতীক না থাকলেও লাঙ্গল’ প্রতীক নিয়ে ব্যাপক প্রচারণায় রয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধিন মহাজোট মনোনীত জাতীয় পার্টির বর্তমান সাংসদ নুরুল ইসলাম তালুকদার। ভোটের মাঠে রয়েছেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের আবদুল কাদের জিলানী (টেলিভিশন), বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির লিয়াকত আলী (কোদাল), ইসলামী আন্দোলনের শাহজাহান আলী তালুকদার (হাতপাখা), স্বতন্ত্র আফজাল হোসেন (আপেল), স্বতন্ত্র আবদুল মজিদ (ডাব) ও স্বতন্ত্র নজরুল ইসলাম (মোটর গাড়ি)।