muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

নির্বাচন

নির্বাচনী প্রচার ও সভা-সমাবেশ চলবে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব ধরনের প্রচার ও সভা-সমাবেশ শুক্রবার শেষ হচ্ছে। এদিন সকাল ৮টার পর থেকে কোনো প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল প্রচার চালাতে পারবে না।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) অনুযায়ী, ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে সব ধরনের প্রচার বন্ধ থাকার বিধান রয়েছে।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর সকালর ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯টি আসনে টানা ভোট গ্রহণ হবে। এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট গ্রহণের তারিখ পেছানো হয়েছে।

৩০ ডিসেম্বর ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে সারা দেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

১০ বছর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মুখোমুখি হয়েছে। এ নির্বাচনে নিবন্ধিত সব (৩৯টি) রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৮০০ এর বেশি প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রায় ১ হাজার ৭৫০ জন। বাকিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী অংশ নেওয়ায় এবার একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল বর্জন করেছিল। এবারের নির্বাচনে সব দল অংশ নেওয়ায় সারা দেশে নির্বাচনী আবহ বিরাজ করছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবার ৩০০ আসনে মোট ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার জন। এবার ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্র ও ২ লাখ ৬ হাজার ৪৭৭টি ভোটকক্ষ রয়েছে। এবারই প্রথম ছয়টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোট গ্রহণ করা হবে। যদিও এ মেশিন ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে।

এবার ভোটগ্রহণ কাজে নিয়োজিত থাকবেন প্রায় ৭ লাখ কর্মকর্তা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬ লাখের বেশি সদস্য। ইতোমধ্যে সেনা ও নৌ বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমেছেন।

সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ে শুক্রবার ইসিতে ‘আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় ও মনিটরিং’ কমিটি কার্যক্রম শুরু করবে। এদিন মধ্যরাত থেকে সারা দেশে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ এবং ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে সড়ক ও নৌপথের যানচলাচল বন্ধ থাকবে।

নির্বাচনী প্রচার শেষ হচ্ছে শুক্রবার: 
ইসি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ হবে। আরপিও অনুযায়ী, ভোট গ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে কোনো ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দল নির্বাচনী প্রচার করতে পারবে না।  আরপিওর ৭৮(১) ধারায় বলা হয়েছে, ভোট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে এবং ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর কোনো ব্যক্তি, প্রার্থী বা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট্ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কেউই নির্বাচনী এলাকায় কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ আয়োজন বা এতে যোগ দিতে পারবেন না।

ইসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ২৮ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত যেকোনো ধরনের সভা, সমাবেশ ও মিছিল এবং শোভাযাত্রা করা যাবে না।

ওই কর্মকর্তা জানান, প্রচার শেষ হওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে প্রচার করা হবে। যাতে রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও ভোটাররা সচেতন হতে পারেন। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ সময়সীমা সংক্রান্ত বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে কেউ এ বিধান লঙ্ঘন তার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নিতে পারেন।

নির্বাচন ঘিরে অন্তহীন অভিযোগ:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের ওপর হামলা, নির্যাতন, প্রচারে বাধা দেওয়ার পাঁচ শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। এর মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। এছাড়া, আওয়ামী লীগ, ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দল একই অভিযোগ করেছে। নির্বাচন ভণ্ডুল করার মতো গুরুতর অভিযোগ একে অপরের বিরুদ্ধে তুলছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, এসব অভিযোগের বেশিরভাগেই পুলিশ ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়ে দায় সেরেছে কমিশন। এ পর্যন্ত প্রশাসন ও পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিজ কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এছাড়া, অর্ধশতাধিক অভিযোগ তদন্ত করার জন্য নির্বাচন তদন্ত কমিটির কাছে পাঠিয়েছে ইসি। এর মধ্যে বেশিরভাগ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে কমিটিগুলো।  

নির্বাচনের মাঠে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও অন্যান্য বাহিনী: ইসি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা দেশে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে দেশের ৩৮৯টি উপজেলায় সেনা ও ১৮ জেলায় নৌবাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। তারা ভোটের পর ২ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, গত ২০ ডিসেম্বর থেকে বিজিবি ও কোস্টগার্ড মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। বুধবার সারা দেশে র‌্যাব ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরাও মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নেমেছেন। তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের তত্ত্বাবধানে কাজ করছেন।

এবারের নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ১৪ থেকে ১৫ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন। মেট্রোপলিটন এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ওই সংখ্যা থেকে ১ জন করে বেশি রাখা হবে। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওড় এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরো বেশি থাকবে। ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভোট গ্রহণের দুই দিন আগে মোতায়েন করা হবে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের চাহিদা ১৯৩৭, পেয়েছে ৬৭৬ জন: 
ইসি সূত্রে জানা গেছে, এবার নির্বাচনে আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠপর্যায়ে ১ হাজার ২০০ জন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও পুলিশের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং টিমের সঙ্গে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ১ হাজার ৯৩৭ জনের চাহিদা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল ইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬৭৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, চাহিদা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের একাধিক টিম একসঙ্গে টহল দেবে। একসঙ্গে তারা অ্যাকশনে যাবে।

প্রথমবার জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার:
প্রথমবারের মতো এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ করা হবে। আসনগুলো হচ্ছে- ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ এবং সাতক্ষীরা-২ আসন। এসব আসনের ৮৪৫টি কেন্দ্রের ৫ হাজার ৩৮ ভোটকক্ষে এ মেশিন ব্যবহার করা হবে। এ ছয়টি আসনে ভোটার সংখ্যা ২১ লাখ ২২ হাজার। বৃহস্পতিবার এসব আসনে মক ভোটিং হয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, আঙুলের ছাপ, ভোটার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা স্মার্ট পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভোটার শনাক্ত করে ভোট গ্রহণ করা হবে এ মেশিনে। এতে ভোটার পছন্দের প্রার্থী ও প্রতীক দেখে বাম দিকের বোতামে চাপ দিয়ে সিলেক্ট করবেন। ওই ব্যালট ইউনিটে সবুজ রঙের কনফার্ম বোতামে চাপ দিলে তার ভোট দেওয়া হয়ে যাবে। কখনো ভুল প্রতীক সিলেক্ট করা হলে, ব্যালট ইউনিটের লাল রঙের ক্যানসেল বোতাম চেপে পরে যেকোনো প্রার্থীকে আবার সিলেক্ট করা যাবে। এভাবে দুই বার ক্যানসেল করা যাবে। তৃতীয়বার যেটি সিলেক্ট করা হবে সেটি বৈধ ভোট হিসেবে গৃহীত হবে।

Tags: