বড় জয়ে বিপিএলের শিরোপা পুনরুদ্ধারের মিশন শুরু করেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। নিজেদের প্রথম ম্যাচে রাজশাহী কিংসকে ৮৩ রানে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল।
মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শনিবার দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে ঢাকার বড় জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন হযরতউল্লাহ জাজাই, সুনীল নারিন ও শুভাগত হোম। জাজাইয়ের ৪১ বলে ৭৮, নারিন ও শুভাগতর ৩৮ রানের দুটি ইনিংসে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৮৯ রান করেছিল ঢাকা। পরে বোলারদের সামনে দাঁড়াতে পারেননি রাজশাহীর ব্যাটসম্যানরা। ১৮.২ ওভারে ১০৬ রানেই গুটিয়ে যায় রাজশাহী।
দিনের প্রথম ম্যাচের মতো টস জিতে ঢাকাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বিপিএলে নেতৃত্বের অভিষেক হওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে বোলাররা অধিনায়কের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারেননি। পারেননি মিরাজ নিজেও। বরং তৃতীয় ওভারে তার ওপর দিয়ে ঝড়ই বয়ে যায়। এই ওভারে তিন ছক্কা হাঁকান জাজাই।
আফগানিস্তানের এই ব্যাটসম্যান তাণ্ডব চালান পঞ্চম ওভারে আলাউদ্দিন বাবুর ওপরেও। তিন চার ও এক ছক্কায় এই ওভার থেকে তোলেন ২০ রান। রাজশাহীর বোলারদের চোখের জল নাকের জল এক করে জাজাই ফিফটি পূর্ণ করেন মাত্র ২২ বলে, ৫ ছক্কা ও তিন চারের সাহায্যে। ফিফটির পরই অবশ্য আউট হতে পারতেন তিনি। মোহাম্মদ হাফিজকে উড়াতে গিয়ে বল তুলেছিলেন আকাশে। সহজ ক্যাচটা নিতে পারেননি উইকেটকিপার জাকির হাসান।
জাজাইয়ের সঙ্গে সুনীল নারিনের ঝড়ে ৯ ওভারেই দলীয় একশ পূর্ণ করে ফেলে ঢাকা। একাদশ ওভারে নারিনকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন হাফিজ। ২৮ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৮ রান করেন নারিন। পরের ওভারে বিপজ্জনক জাজাইকে থামান মিরাজ। অফ স্পিনারকে উড়াতে গিয়ে লং অনে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। তার আগেই মাত্র ৪১ বলে ৭ ছক্কা ও ৪ চারে খেলেন ৭৮ রানের টর্নেডো ইনিংস।
এরপর সাকিব, কাইরন পোলার্ড, নুরুল হাসান সোহান অবশ্য ঝড় তুলতে পারেননি। তিনজন ফেরেন পরপর তিন ওভারে। দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি কেউই। একটা সময় বিনা উইকেটে ১১৬ থেকে ঢাকার স্কোর তখন ৫ উইকেটে ১৩৬, ২০ রানের মধ্যেই নেই ৫ উইকেট!
শেষ দিকে ঝড় তোলে দলের স্কোর দুইশর কাছে নিয়ে যান শুভাগত। তাকে সঙ্গ দেন আন্দ্রে রাসেল। এ জুটি ২৮ বলে যোগ করে ৫৩ রান। এর মধ্যে আলাউদ্দিন বাবুর করা শেষ ওভারে তিন চার ও এক ছক্কায় ২০ রান তোলেন শুভাগত। শুভাগত ১৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৩৮ ও রাসেল ১৯ বলে ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন।
৩ ওভারে ৫৩ রান খরচ করেন আলাউদ্দিন। বিপিএলে এক ইনিংসে যা কোনো বোলারের যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর সর্বোচ্চ ৫৪, রেকর্ডটা যৌথভাবে দিলশান মুনাবীরা ও কামরুল ইসলাম রাব্বীর। আলাউদ্দিনের মতো ৫৩ রান দিয়েছিলেন শফিউল ইসলাম।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় ঝড় তুলতে পারেননি রাজশাহীর কেউই। উল্টো নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারিয়েছে তারা। মুমিনুল হক, সৌম্য সরকার ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্ক। সাকিবকে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন মুমিনুল (৮)। রাসেলের অফ স্টাম্পের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটকিপার সোহানের দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফেরেন সৌম্য (৪)।
১০ রান করে রান আউটে কাটা পড়েন লরি এভানস। তরুণ জাকির হাসান রুবেল হোসেনকে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন ডিপ মিড উইকেটে। একপ্রান্তে তখনো টিকে ছিলেন হাফিজ। কিন্তু রুবেলের এক বল পরই হাফিজ (২৯) উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলে রাজশাহীর স্কোর হয়ে যায় ৬ উইকেটে ৫৬!
এরপর মিরাজ, জোনকাররাও টিকতে পারেননি। শেষ উইকেটে মুস্তাফিজুর রহমান (১১) ও আরাফাত সানীর (১৮) ২৬ রানের জুটিতে স্কোরটাই শুধু একশ পার করতে পারে রাজশাহী। গত আসরেও নিজেদের প্রথম ম্যাচ হেরেছিল তারা।
৩ ওভারে ৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ঢাকার সেরা বোলার রুবেল। ২৪ রানে ২ উইকেট নেন মোহর শেখ। রাসেল, সাকিব, শুভাগত ও পোলার্ড নেন একটি করে উইকেট।