মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছে নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
একই সঙ্গে তারা নূর হোসেনের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরেই যখন রটে যায় রাতেই ফিরিয়ে আনা হচ্ছে নূর হোসেনকে তখনই নিহত পরিবারের সদস্যরা কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেন।
রাতে প্রতিক্রিয়ায় নিহত কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, ‘নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনায় দেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সাত খুনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহানুভুতি পেয়েছি। আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। নূর হোসেনকে আনার পর আমরা তার মুখ থেকে শুনতে চাই নূর হোসেনের সাথে আরো কে কে জড়িত। যে ৬ কোটি টাকা লেনদেনের কথা ওঠেছে সেই টাকা লেনদেনে নূর হোসেন একাই ছিল নাকি আরো কেউ ছিল সেটাও জানতে চাই। কেন সাতটা মানুষকে এত নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হল। মামলার পুনরায় তদন্ত করা হোক। পুনরায় তদন্ত করে নূর হোসেনকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হোক।
নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান রিপন জানান, নূর হোসেনের টাকায় র্যাব ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। নূর হোসেনই জানে তার পেছনে কে কে আছে। আমরা চাই বিচারের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা নারায়ণগঞ্জবাসী তথা সারাদেশের জনগণকে জানতে দেয়া হোক।
এদিকে সাত খুনের ঘটনায় অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় পাল ও নিহত কাউনন্সিলর নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি পৃথকভাবে দুটি মামলা করেন। সোমবার শুনানীর পর বিজয় পালের মামলাটি জজ কোর্টে প্রেরণের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, সাত খুনের ঘটনায় সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় পাল পৃথক ভাবে দুটি মামলা দায়ের করেন। গত ৮এপ্রিল মামলার তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দুটি মামলার অভিন্ন চার্জশিটে ভারতের কলকাতায় গ্রেপ্তার নূর হোসেন ও র্যাবের চাকরিচ্যুত তিনজন আলোচিত কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও এমএম রানাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে বিউটির মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় এজাহারভুক্ত ৫ আসামী সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি হাজী ইয়াছিন মিয়া, ইকবাল, হাসমত আলী হাসু, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রাজু ও শ্রমিক দল নেতা আনোয়ারকে। এ ঘটনায় ১১ মে আদালতে সেলিনা ইসলাম বিউটি চার্জশিটের বিরুদ্ধে না রাজি প্রদান করেন। পরে ৮ জুলাই শুনানিতে চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন খারিজ করে দেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এরপর ২১ জুলাই না রাজি রিভিশন পিটিশন দায়ের করেন মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি। পরে গত ৯ নভেম্বর আদালত বিউটির রিভিশন আপিল খারিজ করে দেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা লিংক রোড থেকে নাসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করে র্যাব-১১এর একটি দল। পরে তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল ৬ জন ও ১ মে একজনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার তদন্ত শেষে র্যাব-১১এর সাবেক তিন কর্মকর্তা ও নুর হোসেনসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা জেলা ডিবি পুলিশ। এর মধ্যে ২২ জন গ্রপ্তোর হয়ে কারাবন্দি রয়েছেন। আর নুর হোসেনসহ ১৩ জন ছিল পলাতক। তবে নুর হোসেন ভারতে গ্রপ্তোর হয়ে ওই দেশের কারাগারে বন্দি রয়েছে।