অনুষ্ঠান শুরু হলো প্রায় ঠিক সময়েই, আড়াইটার দিকে। কিন্তু যাদের জন্য এ আয়োজন, বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা উপস্থিত হলেন আরও পরে। কাঠফাটা রোদেই মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ভরে উঠল চোখের পলকে। দর্শকদের অপেক্ষার সময়টা কাটল নেমেসিস, ক্রিপটিক ফেইট ও মাইলস ব্যান্ডের সুরের তালে তালে। অতঃপর ছয়টার দিকে মঞ্চে হাজির হলো মাশরাফি বিন মুর্তজার দল, বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের নায়কেরা।
ফুলে ফুলে ভরে উঠল গোটা মঞ্চ। মুহুর্মুহু করতালি, হর্ষধ্বনি, রঙিন আলো, রঙিন প্রজাপতির মতো কনফেত্তির ওড়াউড়ি-অন্যরকম এক মুহূর্ত জন্ম নিল মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। এক এক করে খেলোয়াড়দের নাম ডাকতে শুরু করলেন জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার ও সাবেক তারকা আতহার আলী খান। শফিউল ইসলাম থেকে শুরু করে একে একে মঞ্চ আলোকিত করলেন
আল আমিন হোসেন, তাইজুল ইসলাম, ইমরুল কায়েস, আরাফাত সানি, মুমিনুল হক, এনামুল হক, সৌম্য সরকার, নাসির হোসেন, তামিম ইকবাল, তাসকিন আহমেদ। এ পর্যায়ে রুবেল হোসেনের নাম উচ্চারণ করতেই উল্লাসে ফেটে পড়ল জনতা! করতালির মাধ্যমে দর্শকেরা বরণ করে নিলেন বাংলাদেশ দলের এ পেসারকে। দর্শকদের বিপুল আগ্রহে কিছু বলতে হলো রুবেলকে, ‘খুব ভালো লাগছে এত বড় সংবর্ধনায় আসতে পেরে। আমি ভীষণ আনন্দিত।’ এরপর এলেন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সবশেষে অধিনায়ক মাশরাফি। বাবার অসুস্থতার কারণে মঞ্চে ছিলেন না সাব্বির রহমান। আইপিএল খেলতে ভারতে থাকায় সাকিব আল হাসানও যোগ দিতে পারেননি অনুষ্ঠানে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) আয়োজনে বিশ্বকাপে দারুণ পারফরম্যান্সে জাতীয় দলকে দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজমেন্ট, কোচিং স্টাফ, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান ও বোর্ড পরিচালকেরা। একপর্যায়ে জাতীয় দলকে শুভেচ্ছা জানাতে মঞ্চে আসেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, অর্থমন্ত্রী আবদুল মাল আবদুল মুহিত, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বিরেন শিকদার, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ মস আরেফিন সিদ্দিক প্রমুখ।
অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ক্রিকেট এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। আমরা ফুটবলেরও উন্নতি চাই। তবে ক্রিকেট একটি জায়গা করে নিয়েছে। একে আরও ওপরে নিতে হবে।’
মাশরাফি বোর্ডকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে দুই সপ্তাহ অনুশীলন আমাদের ভীষণ কাজে লেগেছে। এ সুযোগ বোর্ড আমাদের করে দিয়েছে। এ জন্য আমরা ভালো করতে পেরেছি। অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের যেতে হয়েছে। চারটা প্রস্তুতি ম্যাচেই হেরেছি। তবে বিসিবি সব সময়ই আমাদের সাহস দিয়েছে। আমরা দল হিসেবে খেলেছি।’
দর্শকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘দর্শকেরা খারাপ সময়ে ছিল আমাদের পাশে। আশা করি, সামনেও এভাবে তারা আমাদের পাশে থাকবে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তো বটেই, সব দলের বিপক্ষেই আমাদের এভাবে সাহস দেবেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন, সবাইকে ধন্যবাদ।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বিশেষ ধন্যবাদ জানান নিয়মিত ফোন করে উৎসাহ দেওয়ার জন্য।
বিসিবি সভাপতি বিশ্বকাপে পারফরম্যান্সে সব খেলোয়াড়কে ধন্যবাদ জানালেন। সৌম্য, সাব্বির, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তাসকিন ও মাশরাফিকে আলাদা কৃতিত্ব দিলেন। রুবেলের ক্ষেত্রে বললেন, ‘সে সংখ্যায় ৮ উইকেটে পেয়েছে বিশ্বকাপে। কিন্তু আমি বলব রুবেল ৮০ উইকেট পেয়েছে!’ অমনি করতালির বৃষ্টি। এরপরই নাজমুল সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বললেন, ‘আমরা ক্রিকেটীয় ভাষায় কথা বলতে চাই। সামনে ভারত আসছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়াও আসবে। সব দলকে বুঝিয়ে দেব আমাদের হারানো সহজ নয়। ইনশা আল্লাহ সামনেও আমরা ভালো খেলব।’
সংবর্ধনা-পর্ব শেষ হওয়া মাত্রই বাজির আওয়াজ আর আলোর রোশনাই মুগ্ধতা জাগানিয়া আবহের সৃষ্টি হলো মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বিশ্বকাপের পর এমন সংবর্ধনা দেওয়ার ঘটনা আরেকবার ঘটেছিল, ১৯৯৯ সালের ৪ জুন। ১৬ বছর পর একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। সংবর্ধনার শেষ পর্যায়ে পেছনের বড় পর্দায় ভেসে উঠল একটি লেখা, ‘আর এ কেবল নতুন অধ্যায়ের শুরু।’
এ অধ্যায়ের ব্যাপ্তি বড় করার দায়িত্ব মাশরাফিদেরই।