এই বাংলাদেশ আরও অনেকদুর এগিয়ে যাবে। বিশ্বসেরা দলগুলোর সমপর্যায়ে পৌঁছে যাবে একদিন’- মন্তব্য বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। এবারের বিশ্বকাপে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে টাইগাররা, সাকিবের মতে,
এটা নতুন বাংলাদেশের উঠে আসার সূচনালগ্ন মাত্র। সামনে আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। ইন্ডিয়া উইজডেনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা নিয়ে এভাবেই মন্তব্য করলেন সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় তারকা। বিদেশী মিডিয়া, বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা তারকা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। দীর্ঘ সময় ধরে অলরাউন্ডারের শীর্ষস্থানটা দখলে রেখেছেন বলেই নয়, তার খেলা, তার চিন্তা-ভাবনা এমনকি ক্রিকেট নিয়ে তার দর্শন- সব কিছু মিলেই সাকিবকে সেরার আসনে বসিয়ে দিয়েছে বিদেশী মিডিয়াগুলো। সেই সাকিব যখন একটা কথা বলেন, তখন তা বিশ্ব মিডিয়ায় শিরোনাম হবেই- এটা যেন স্বাভাবিকই।
আইপিএল খেলতে যাওয়ার আগে হুঙ্কার ছেড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরাই ফেভারিট। এবারই তাদেরকে হারানোর সেরা সুযোগ আমাদের সামনে। সাকিবের হুঙ্কার কতটা কাজে লেগেছে তা তাদের কোচ ওয়াকার ইউনুসের মন্তব্য শুনলেই বোঝা যায়। দু’দিন আগে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ওয়াকার জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের এবার তাদের সফরটা বেশ কঠিনই হবে। কঠিন এক প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করতে হবে তাদের।
বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে ভয় যে কোন দেশেরই। বিশেষ করে বিশ্বকাপে অ্যাডিলেড ওভালে ইংল্যান্ডকে যেভাবে হারিয়েছে, এবং এর পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছে বাংলাদেশ, তাতে টাইগারদের প্রতি সমীহ বেড়ে গেছে প্রতিষ্ঠিত যে কোন ক্রিকেট শক্তিরই।
অন্যদের শ্রদ্ধা-সমীহ আদায় করার মত আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে টিম বাংলাদেশও। সে সম্ভাবনাই ইন্ডিয়া উইজডেনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তুলে ধরলেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের তরুণ ক্রিকেটারদের দেখে মুগ্ধ সাকিব। শুধু তাই নয়, অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নিজেকে যেভাবে মেলে ধরতে পেরেছেন সেটাও বাংলাদেশ দলের জন্য অসাধারণ একটি দিক বলে মনে করেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সম্পর্কে সাকিব আল হাসান বলেন, ‘আমাদের সবার প্রত্যাশাই ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। আমি কেন, দলের কেউই ভাবেনি যে মাহমুদ এতটা ভালো করে বসতে পারে বিশ্বকাপে। অবশ্যই যোগ্যতাবলে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন তিনি। কারণ, তিনি একজন অভিজ্ঞ এবং যোগ্যতম ক্রিকেটারই। তবে, বিশ্বসেরা দুটি দলের বিপক্ষে টানা দুটি সেঞ্চুরি করা- রীতিমত অবিশ্বাস্য। অসাধারণ। সত্যিই এটা কঠিন ব্যাপার এবং সবার জন্যই অনুপ্রেরণাদায়ী।’
ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে বাংলাদেশের দুই পেসার রুবেল হোসেন এবং তাসকিন আহমেদের অসাধারণ বোলিং পারফরম্যান্সও বিশ্বকাপে সবার নজর কেড়েছিল। দু’জনই গড়ে ১৪০ কি.মি. গতিতে বোলিং করেছিলেন। সাধারণত বাংলাদেশ স্পিন নির্ভর একটি দল। কিন্তু বিশ্বকাপে সবাই দেখেছে দলটিতে কতটা পরিবর্তণ এসে গেছে।
সাকিবের মতে, এটা তো বাইরে দৃশ্যমান পরিবর্তণ। ভেতরে ভেতরে বাংলাদেশ আরও পরিণত হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র রুবেল আর তাসকিনই নন। বাংলাদেশে আরও ভালো মানের পেসার উঠে আসছে। বড় টুর্নামেন্টছাড়া তো এভাবে নিজেদের প্রদর্শণ করার সুযোগ পাচ্ছেন না তারা। শফিউল ইসলাম ১৪৫ কি.মিটারের ওপর বোলিং করে থাকেন। একইভাবে শাহাদাত হোসেনও। তারা সবাই ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করছেন নিয়মিত।’
সাকিব আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ কিংবা আয়ারল্যান্ডের মতো দেশগুলো বিশ্বকাপে এসে ভালোকরে এবং এটাই সবার চোখে পড়ছে। অথচ এখানে যারা ভালো করছে, গত দুই তিন বছরে কিন্তু এরা নিয়মিত পারফরমার। স্থানীয় মিডিয়ায় এসব পরিবর্তনগুলো উঠে আসছে। কিন্তু বাইরের মিডিয়ায় এসব আসে না বলে, অন্যদেরও চোখে পড়ে না।’
নিজ দেশের ক্রিকেট কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে- তা নিয়ে যেন নিজের ঝাঁপি পুরো খুলে দিতে চাইলেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। অনেক দিন ধরেই আমরা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলছি। বয়সভিত্তিক দলগুলোর কাঠামোও শক্তিশালী করা হয়েছে। এখন আমরা তাই আগের চেয়ে বেশি ভালো মানের খেলোয়াড় পাচ্ছি। অনেক বেশি খেলোয়াড় থেকে দল বেছে নেওয়ার সুযোগ হচ্ছে। তরুণেরাও দলে আসার পর ভালো খেলছে। বিশ্বকাপে আপনারা সৌম্য-তাসকিনদের দেখেছেন। দলে আসার পর দ্রুত তাদের ভালো খেলাটা আমাদের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত।’
বাংলাদেশের ক্রিকেটে কিভাবে ধীরে ধীরে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে- সেটা তুলে ধরলেন সাকিব। এ দেশের ক্রিকেট নিয়ে আশাবাদী সাকিব বলেন, ‘বিশ্বকাপে যেমন খেলেছি, তরুণেরাও যদি ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে যায়, এ ধরনের খেলা আমরা নিয়মিতই খেলতে পারব। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়েরাও আগের চেয়ে ভালো মানের। রনি তালুকদারকে যেমন পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে রাখা হলো। লিটন দাসও ভালো ব্যাটসম্যান। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, এখন দলে জায়গা পাওয়ার জন্য ইতিবাচক প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এটা আমাদের আরও উন্নতি করতে সাহায্য করবে।’
নিজেদের সাধ্যের ভেতর থেকে খেলার উন্নতি ঘটাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু যেটা সাধ্যের মধ্যে নেই- সেটা নিয়ে কিছুটা হতাশা ঝরলো সাকিবের কণ্ঠে। বড় দলগুলোর বিপক্ষে খুব কালেভদ্রেই বাংলাদেশ খেলার সুযোগ পেয়ে থাকে। বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে না পারলে বাংলাদেশ বিশ্বমানে উন্নীত হওয়ার জন্য তৈরী হতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন সাকিব।
তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে সফর না করলে সেরা পর্যায়ে খেলার জন্য আমরা কখনোই তৈরি হব না। অবশ্য পরিস্থিতি এখন কিছুটা বদলাচ্ছে। কদিন পর পাকিস্তান আসছে বাংলাদেশে, এরপর ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়াও আসবে। এই মুহূর্তে বড়দলগুলোর বিপক্ষে আমাদের ঠাসা সূচি। আশা করি বড় দলগুলো অন্তত নিয়মিতই সফরে আসবে। কিন্তু এই দেশগুলোতে সফর না করলে বুঝতে পারব না আসলেই আমরা কতটা ভালো বা খারাপ।’
সাথে সাকিব আরও যোগ করেন, ‘এবার যেমন বিশ্বকাপের আগে আমাদের দলের বেশির ভাগই আগে কখনো অস্ট্রেলিয়ায় খেলেনি। আমরা তাই রোমাঞ্চিত ছিলাম। সেখানে ভালো খেলায় দেশেও একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। সবার মধ্যে এখন অনেক আত্মবিশ্বাস। এখন আরও বেশি সফর করলে সেটা আমাদের উন্নতিতে আরও সাহায্য করবে।’