ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে স্থায়ীকরনসহ উদ্যোক্তাদের রাজস্ব খাত থেকে বেতন ভাতার আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ইউডিসি উদ্যোক্তারা। ইতোমধ্যে তারা সাধারণ সভা করে এ দাবি করেছেন। তাদের নায্য দাবি পূরণ করা না হলে ফের আন্দোলনে নামার জন্যও নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এমনই তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ শিশুকল্যান পরিষদে মিলনায়তনে গত শুক্রবার বাংলাদেশ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালকদের সাধারন সভায় বক্তারা। সারা বাংলাদেশের প্রায় ৫ শতাধিক উদ্যোক্তার উপস্থিতিতে সভার শুরুতে ফ্রেব্রুয়ারি মাসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
বাংলাদেশ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালক কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভপতি সেকেন্দার আলীর
সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মইনুল ইসলাম অপু, সাধারন সম্পাদক আবুল হাসনাত, নেত্রকোনা জেলার আলামিন, জামালপুর জেলার এমদাদদুল হক ও গোপালগঞ্জ জেলার রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারে কর্মরত উদ্যোক্তারা ২০১০ সাল থেকে নামমূল্য ফি
নিয়ে ইউনিয়নের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সরকারী-বেসরকারী সেবা দিয়ে আসছেন। বর্তমান সরকারের
বিগত মেয়াদে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেয়া
হলে আন্দোলনে নামেন উদ্যোক্তারা। পরবর্তীতে হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য পৃথকভাবে উচ্চ আদালতে কয়েকটি রিট করেন উদ্যোক্তারা। রিটের শুনানীতে উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে একটি রিট নিস্পত্তি করা হলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। এনিয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলাও করা হয়েছে।
উদ্যোক্তারা জানান, যেসব জেলায় হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেসব ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের কাজের পরিধি কমে গেছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের কাজগুলো বিনামূল্যে না করলে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবদের রোষানলে পরতে হচ্ছে তাদের। ফলে এসব উদ্যোক্তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানববেতর জীবনযাপন করছেন। এনিয়ে অনেক উদ্যোক্তারা ডিজিটাল সেন্টারে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
কিশোরগঞ্জ উদ্যেক্তা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার আলম নাহিদ জানান, আমরা দীর্ঘ বছর যাবত সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমাদেরকে রাজস্ব খাতে অন্তভূক্ত করার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি।
বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের উদ্যেক্তা আবুল কাশেম বলেন, নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতে কার না ভালো লাগে! বর্তমান সময়ের সবচেয়ে চাহিদার কিংবা আকর্ষণের একটি কাজ হচ্ছে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্ত আমরা অবহেলিত হয়ে আছি। আমাদেরকে রাজস্ব
খাতে অন্তভূক্ত করার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি। তার এ কথার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন
উদ্যোক্তা ইদ্রিস আলী, সারোয়ার আলম, আজহারুল ইসলাম বাপ্পী, জামান মিয়াও।
ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালক ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মাইনুল ইসলাম অপু
জানান, উদ্যোক্তারা নিজেদের স্বপ্ন বির্সজন দিয়ে মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে
সারাদিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য
নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অথচ কর্মক্ষেত্রেই এসব উদ্যোক্তারা নানান বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন। যা
উদ্যোক্তাদের ব্যথিত করেছে। এক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনায় উদ্যোক্তাদের স্থায়ীকরনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তারা আহবান জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন,আমরা দ্রুত রিভিউ শুনানি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এছারাও দ্রুত সময়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সজিব ওয়াজেদ জয়ের সাথে সাক্ষাত করবো। সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। হাইকোর্ট
প্রথম যে রায় দিয়েছে সেটাকে কার্যকর করতে হবে। তা না হলে দ্রুত আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।
ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এম আবুল হাসনাত বলেন, অনেক উদ্যোক্তা ডিজিটাল সেন্টারে কর্মরত
থাকার ফলে ইতোমধ্যে চাকরির বয়স পার করে দিয়েছেন। ফলশ্রুতিতে এসব উদ্যোক্তারা অন্যত্র চাকরি করার সুযোগ হারিয়ে ফেলেছেন। এমনকি উদ্যোক্তাদের চাকরি স্থায়ীকরনের জন্য রিট পিটিশন করে অনেক উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাই তারা ডিজিটাল সেন্টারকে স্থায়ীকরনসহ
উদ্যোক্তাদের রাজস্বখাত থেকে বেতনভাতা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আকুল আবেদন
জানিয়েছেন।