muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

কিশোরগঞ্জের খবর

কিশোরগঞ্জে মন্ত্রিত্বের হাতছানি!

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করে টানা তৃতীয়বারের মতো গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের দুই থেকে আড়াই মাস পূর্ণ হওয়ার আগে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ যোগ হওয়ার আলোচনা চলছে।

আগামী মার্চ মাসের প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় অন্তত চার থেকে পাঁচজন যোগ হতে পারেন। নতুন সরকারের চমকের মন্ত্রিসভায় তাদেরকে দ্বিতীয় দফায় যোগ করে চমক দিতে চায় সরকার। সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রিসভায় যাদের নাম নতুন করে যোগ হতে পারে, তাদের মধ্যে আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, প্রয়াত জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। তিনি কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

২৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন থাকলেও আর কোনো প্রার্থী না থাকায় গত রোববার ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপিকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী।

গত ৩ জানুয়ারি সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। সৈয়দা লিপিকে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে আপাতত থাকছে ছয়টি মন্ত্রণালয়। এগুলোর মধ্যে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও আছে।

এতে করে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ইতিহাসে প্রথমবার মন্ত্রীশূন্য হওয়া জেলা কিশোরগঞ্জে ফের মন্ত্রিত্বের হাতছানি দেখা দিয়েছে।

সূত্র মতে, মন্ত্রিসভায় নতুন করে কারা যোগ হতে পারেন, এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, দলটির নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। নতুনরা কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন- এমন বিশ্লেষণ ও হিসাব-নিকাশও চলছে। আগের সরকারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করা ও নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া কারো নতুন করে মন্ত্রিসভায় যোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, এমন আলোচনাও চলছে।

আগের সরকারে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন আর একাদশ সংসদে যারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে ইতোমধ্যে দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদের মধ্যে কারো মন্ত্রিসভায় নতুন করে যোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। জোটের শরিক দলের কেউ দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নও অনেকের। প্রধানমন্ত্রীসহ ৪৭ সদস্যের বর্তমান মন্ত্রিসভার সবাই আওয়ামী লীগের। শরিক দলের কাউকে এবার মন্ত্রিসভায় রাখা হয়নি।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে মন্ত্রিসভায় নতুন করে কারা স্থান পাচ্ছেন। তবে মন্ত্রিসভায় নতুন কারা স্থান পাচ্ছেন, তা একান্তই দলের সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনার এখতিয়ার। তিনি যাদের চাইবেন, তাদেরই জায়গা হবে নতুন করে। প্রধানমন্ত্রী ও তার দফতরই নির্ধারণ করবে কখন মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ নেওয়া হবে। সংবিধানই প্রধানমন্ত্রীর এ ক্ষমতা নিশ্চিত করে। মার্চ মাসে না হলে আগামী অর্থবছরের বাজেট পেশের আগে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ যোগ হবে, এমন কথাও বলছেন আওয়ামী লীগের কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা।

প্রসঙ্গত, কিশোরগঞ্জে মন্ত্রিত্বের স্বর্ণযুগ শুরু শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের হাত ধরে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি যেই সরকারই হোক, মন্ত্রিসভায় কখনো উপেক্ষিত হয়নি কিশোরগঞ্জ।

বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৭২ সালের ১২ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হলে শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই শুরুর পর মন্ত্রীত্বের দরজা আর কখনো বন্ধ হয়নি কিশোরগঞ্জের জন্য।

১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভায় কিশোরগঞ্জ জেলা দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পায়। হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-২৬ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খান পাট মন্ত্রী এবং কটিয়াদী থানা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-২৭ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মনোরঞ্জন ধর আইন, সংসদ ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন।

১৯৭৫ সালে খন্দকার মোস্তাক আহমদ এর মন্ত্রিসভায় আসাদুজ্জামান খান বন্দর, নৌবাহিনী এবং অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন মন্ত্রী ছিলেন।

১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায়ও কিশোরগঞ্জ মন্ত্রিত্বের স্বাদ পায়। কিশোরগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য ডা. আবু আহম্মদ ফজলুল করিম পান স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, সংস্কৃতি এবং গৃণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।

১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এরশাদের মন্ত্রিসভায়ও কিশোরগঞ্জের প্রতিনিধিত্ব অটুট থাকে। এরশাদ সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এম সাইদুজ্জামান পান অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব। এছাড়া করিমগঞ্জ-তাড়াইল নিয়ে গঠিত তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক চুন্নু ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান।

১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এরশাদের মন্ত্রিসভায় কিশোরগঞ্জ থেকে ঠাঁই পান বিচারপতি হাবিবুল ইসলাম ভূঞা। তিনি আইন, সংসদ ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায়ও প্রতিনিধিত্ব করে কিশোরগঞ্জ। হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া নিয়ে গঠিত তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এ,বি,এম জাহিদুল হক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান।

১৯৯৬ সালের ১২ই জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় কিশোরগঞ্জ থেকে দুইজন প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁদের মধ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় কিশোরগঞ্জ থেকে ঠাঁই পান ড. এম ওসমান ফারুক। করিমগঞ্জ-তাড়াইল নিয়ে গঠিত তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ড. এম ওসমান ফারুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৬টি আসনের সবকটিতেই বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এর মধ্যে ৫টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা এবং ১টি আসনে মহাজোটের অংশীদার জাতীয় পার্টির প্রার্থী নির্বাচিত হন। নির্বাচিত আওয়ামী লীগের পাঁচ সংসদ সদস্যের মধ্যে মো. জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি, মো. আবদুল হামিদ স্পিকার এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এলজিআরডি মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর স্পিকার মো. আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের বাইরে এ জেলার একমাত্র জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক চুন্নু নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মন্ত্রিসভায় কিশোরগঞ্জ থেকে দুইজন প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁদের মধ্যে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২০১৫ সালের ৯ই জুলাই পর্যন্ত এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও এক সপ্তাহ দপ্তরবিহীন মন্ত্রী থাকার পর ১৬ই জুলাই থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে গত ৩রা জানুয়ারি চিরবিদায় নেন। এছাড়া মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক চুন্নু শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এবার কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী না থাকা মেনে নিতে পারছেন না কিশোরগঞ্জবাসী। মন্ত্রিসভায় এই জেলার কাউকে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি চেয়েছেন সকলে।

Tags: