প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার একদিন পরই, আবারও ডাকসুর নির্বাচন চেয়েছেন নতুন ভিপি নুরুল হক নুর। ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি দাবি করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান। রবিবার বিকেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে কোটা সংস্কার আন্দলনকারীদের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে নুর বলেন, ‘২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। এই নির্বাচনে অনেক অনিয়ম ও কারচুপি হয়েছে, সেই জায়গা থেকে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নেয়া বিভিন্ন প্যানেলের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কালীমা লেপে দেয়া হয়েছে। আমরা সেজন্য বলেছি এই নির্বাচন পুনরায় দিতে হবে, যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘রাজু ভাস্কর্য এবং রোকেয়া হলের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থী ভাই-বোনেরা অনশন করেছেন, তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আমি আমার জায়গা থেকে পুনর্নির্বাচনের দাবি ব্যক্ত করছি।’
এর আগে, গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গণভবনে যান ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ীরা। সেখানে ভিপি নুরুল হক নুর ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে সহযোগিতার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কোন কাজেই শতভাগ সাফল্য থাকে না, কিছু ত্রুটি-বিচ্যূতি থাকেই। সেগুলোকে অতিক্রম করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।’
নুরুল হক আরও বলেন, ‘আমরা ডাকসু’র যে নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দ রয়েছি, আমরা আমাদের কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করবো’। এ সময়, আগামী নির্বাচনগুলোতে যেন কোন অনিয়ম না থাকে, এবং প্রতিবছর যেন নির্বাচন হয়-সেদিকে লক্ষ্য রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চান ভিপি নুরুল হক নুর।
এদিকে, ডাকসু নির্বাচন বাতিল, পুনঃতফসিল ও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে, আগামীকাল সোমবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেবে নির্বাচন বর্জনকারী বাম ও স্বতন্ত্র পাঁচটি জোট।
তবে, আগামীকাল প্রভোস্ট কমিটির বৈঠকে, ডাকসু’র নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।
অন্যদিকে, গণভবনে নুরুল হকের বক্তব্য আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা লিটন নন্দী। তিনি নির্বাচন বাতিল করে পুনঃতফসিল ঘোষণার দাবি জানান। একইসঙ্গে ভিসির পদত্যাগও দাবি করেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের এই নেতা।
এর আগে, গত ১৩ই মার্চ তিনদিনের মধ্যে ডাকসু ও হল সংসদ পুনঃনির্বাচনের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে বসে বাম ও স্বতন্ত্র পাঁচটি জোট। সে সময়, তাদের দাবি মেনে নেয়ার জন্য তিনদিনের আল্টিমেটামও দেয়া হয়।
তবে ওই দিন উপাচার্য জানান, ডাকসু ও হল সংসদ পুনঃনির্বাচনের দাবি মানার কোনো সুযোগ নেই। আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন সফল করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৪শ’ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর শ্রম ও মেধা খরচ হয়েছে। তাদের শ্রমকে অসম্মান করার এখতিয়ার আমার নেই।’
এই বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ কেউ নষ্ট করতে চাইলে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা মেনে নেবে না বলেও জানান ভিসি।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ২৮ বছর ১০ মাস পর ১১ই মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ- ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ৯ টিতেই পুর্ণ প্যানেলে জয় পায় ছাত্রলীগ, আর ৩টি হলে জয় পায় স্বতন্ত্র জোট। মেয়েদের তিনটি হলে ভিপি, জিএসসহ বেশীরভাগ পদে জয় পায় স্বতন্ত্র জোট। অন্য ছয়টি হলে ছাত্রলীগ ও স্বতন্ত্র জোট পদ ভাগাভাগি করে। স্বতন্ত্র জোট ভিপি পদে ছয়টি হলে এবং জিএস পদে তিনটি হলে জয়ী হয়।
তবে, এই ফলাফল না মেনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলতেই থাকে। নির্বাচন বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে অনশন পর্যন্ত যায় বিরোধী প্রার্থীরা।