শ্বাসকষ্টের অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অ্যাজমা, সিওপিডি বা ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী বাধাগ্রস্ত রোগ, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া ও শিশুদের ক্ষেত্রে ব্রংকিওলাইটিস, হার্টের কিছু কারণেও শ্বাসকষ্ট হয়। অ্যাজমায় শ্বাসনালির প্রদাহ হয়ে সরু বা সঙ্কুচিত হয় যায়। ফলে বাতাস ঢুকতে ও বের হতে বাধা পায়। সিওপিডিতে একই ধরনের সমস্যা হয়। নিউমোনিয়ায় ফুসফুসের যে অংশে অর্থাৎ অ্যালভিওলাইতে গ্যাসের আদান-প্রদান বাধাগ্রস্ত হয়ে শ্বাসকষ্ট হয়। হার্টের সময় ফুসফুসের পর্দায় পানি জমে শ্বাসকষ্ট হয়, যাকে পালামানারি ইডেমা বলে। হার্ট ফেইলুরে এমনটি হয়। বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলেও শ্বাসকষ্ট হয়। ফুসফুসে বাতাস ঢুকে গেলে যাকে নিউমোথোরাক্স বলে তাতে শ্বাসকষ্ট হয়। মানসিক কিছু কারণে ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে চলে আসে। যেমন স্ট্রেস ডিসঅর্ডার ও প্যানিক অ্যাটাক। অ্যাজমার শ্বাসকষ্টে কাশি থাকে, বুকে বাঁশির মতো আওয়াজ, কখনও ভালো থাকে, কখনওবা রোগী শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়। সর্বোপরি মা-বাবার অ্যাজমা থাকলে আমরা ব্রংকিল অ্যাজমা বলে ডায়াগনোসিস করি। এ ক্ষেত্রে রোগীদের কিছু ট্রিগার ফ্যাক্টর থাকে। যেমনÑ ঠান্ডা পরিবেশে গেলে বা ঠান্ডা খেলে ধুলা-বালিতে রোগীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। অ্যাজমা বংশগত কারণেও হয়। এ ছাড়া পরিবেশগত কারণেও হতে পারে। অ্যাজমা কিন্তু সুনিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। কখনোই একে পুরোপুরি ভালো করা যায় না। ছোটবেলা থেকে অ্যাজমা ডায়াগনোসিস করা গেলে ও তার চিকিৎসা প্রথম থেকেই চালিয়ে গেলে এক সময় এটি ভালোও হয়ে যেতে পারে। বয়স হওয়ার পর অ্যাজমা হলে আধুনিক চিকিৎসায় একে পূর্ণ সুনিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। এমন উদাহরণও আছে যে, অ্যাজমা নিয়ে অলিম্পিক মেডেল জিতেছে।
ইনহেলার চিকিৎসা : এটি প্রধানত দু’ধরনের আছে। একটি হচ্ছে রিলিভার যাতে সাময়িকভাবে শ্বাসকষ্ট, কাশি কমে যায়। অন্যটি হচ্ছে প্রিভেন্টিভ, যা নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে অ্যাজমা হওয়া প্রতিরোধ করে। এই ইনহেলার শ্বাসনালির ফুলে যাওয়া প্রতিরোধ করে। ইনহেলার সঠিকভাবে নিতে হবে। যে কারণে শ্বাসকষ্ট বাড়ে অর্থাৎ ট্রিগার ফ্যাক্টর, সেটি রোগীকে চিহ্নিত করে তাকে পরিহার করে চলতে হবে। অ্যাজমার চিকিৎসা দীর্ঘ সময় ধরে নিতে হয়। রোগের মাত্রা অনুযায়ী চিকিৎসক ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করে থাকেন। কোনো রোগী যদি ওষুধ ছাড়াই ভালো থাকে তাহলে ধরে নেওয়া যায় রোগী ভালো হয়ে গেছে। অনেকে মনে করেন ইনহেলার শেষ চিকিৎসা। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ সত্ত্বেও রোগীরা তা গ্রহণ করতে চান না। এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। ইনহেলার একবার ব্যবহার শুরু করলে পরবর্তী সময়ে আবার বন্ধ করে দেওয়া যায়। এটি সরাসরি শ্বাসনালিতে গিয়ে কার্যকরভাবে কাজ করে। স্পেসার বা বোতলের সাহায্যে ইনহেলার নেওয়া যায়। যেকোনো ক্রনিক বা দীর্ঘদিনের রোগীদের ইনহেলার নেওয়ার টেকনিক চিকিৎসকরা তাদের চেম্বারে শিখিয়ে দেন। সিওপিডি কিন্তু ভালো হয় না। এটি প্রতিরোধ করা যায়। এই রোগীদের প্রথমে কাশি, পরে শ্বাসকষ্ট ও অন্য সব পর্যায়ে রোগী হাঁটতে পারে না। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার জন্য এই রোগীদের নিজমোনিয়ার ভ্যাকসিন নিতে হবে এবং সঠিক নিয়মে ব্যায়াম করতে হবে।
লেখক : বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইঞ্জিনিয়ার্স পালমোফিট